ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় মঞ্চসারথি আতাউর রহমানের জন্মদিন উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ জুন ২০১৫

শিল্পকলায় মঞ্চসারথি আতাউর রহমানের জন্মদিন উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাটকের সঙ্গে তিনি গড়েছেন আত্মার বন্ধন। বিশেষ করে যাদের প্রচেষ্টায় অগ্রসর হয়েছে দেশের মঞ্চনাটক তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সেই ষাটের দশক থেকেই সখ্য গড়েছেন মঞ্চনাটকের সঙ্গে। এই শিল্পমাধ্যমটিকে ঘিরে ধারণ করেছেন অনেকগুলো পরিচয়। একাধারে নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে রেখেছেন আপন মেধা ও মননের স্বাক্ষর। সেই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন মঞ্চসারথি উপাধি। বৃহস্পতিবার উদ্্যাপিত হলো এই বরেণ্য নাট্যজন আতাউর রহমানের ৭৪তম জন্মদিন। আয়োজনের অংশ হিসেবে আষাঢ়ের সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো তাঁরই নির্দেশিত পালাকারের নাটক নারীগণ। শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাট্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি কেক কেটে ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উদ্্যাপন করা হয় জন্মদিন। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে জানানো হয় জন্মদিনের শুভেচ্ছা। নাট্যকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ছিল তাকে নিবেদিত নাট্যব্যক্তিত্বদের প্রশংসা বচন। জন্মদিন উদ্্যাপনের সূচনা হয় কবিতার দোলায়িত ছন্দে। কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ভরাট কণ্ঠে আবৃত্তি করেন যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে। এরপর শুরু হয় শুভেচ্ছা পর্ব। ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, নাট্যব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান, অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা গাজী রাকায়েত, আবৃত্তিশিল্পী নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী প্রমুখ। সাংগঠনিকভাবে শুভেচ্ছা জানায় দেশ অপেরা, চারুনীড়ম থিয়েটার, নাগরিক নাট্যাঙ্গন (অনসাম্বল), নাট্যম রেপার্টরি ও শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নাট্যকর্মীরা। এরপর ‘নারীগণ’ নাটকের শিল্পী ও কলাকুশলীরা অতিথিদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটেন। আতাউর রহমানকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, বন্ধু হিসেবে আতাউর আমাদের জীবনকে করেছেন বর্ণাঢ্য ও আনন্দমুখর। নাট্যনির্দেশক হিসেবে আমাদের জীবনবোধকে গভীর করেছেন। আমার রচনায় ‘নারীগণ’ নাটকটিকে প্রথমে অনেকেই ঠিক নাটক হিসেবে উপস্থাপন করতে চাননি। কিন্তু আতাউর রহমান সেটিকে নাটকে রূপ দিয়েছেন। ‘নারীগণ’ নাটকটি পলাশী যুদ্ধের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। আপন অনুভূতি প্রকাশ করে আতাউর রহমান বলেন, আমি সবার ভালবাসায় সিক্ত। মঞ্চে কখনও কখনও এমন মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন মনে হয় আমি স্বর্গকে স্পর্শ করছি। এ সময়ে এসে আমার সত্যিই মনে হচ্ছে আমি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নই, নাট্যজগতের হয়ে গেছি। জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হয় পালাকারের প্রযোজনা নারীগণ। সৈয়দ শামসুল হকের রচনা থেকে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আতাউর রহমান। আড়াইশ’ বছর আগের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কাহিনীকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয় হয়েছিল ষড়যন্ত্র আর অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার মাধ্যমে কায়েম হয় কোম্পানির রাজত্ব। ১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই উপমহাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক নবাব সিরাজকে হত্যা করা হয়। মীরণের আদেশে মোহাম্মদী বেগ জাফরগঞ্জ প্রাসাদের নির্জন কক্ষে নবাবকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। নবাবের লাশ হাতির পিঠে নিয়ে মীরণ, মোহাম্মদী বেগ ও খান-ই-মুর্শিদ বিজয় মিছিল বের করে। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষ সেদিন চোখের পানি মুছতে মুছতে এই দৃশ্য দেখেছিল। এ সময় রাজপ্রসাদের অন্তঃপুরে মহিলা মহলে কি ঘটনা ঘটেছিল সে কথা লেখা নেই ইতিহাসের পাতায়। সে গল্পই বলা হয়েছে নারীগণ নাটকে। গল্পের সূত্র ধরে উঠে এসেছে প্রাসাদে বন্দী নারীদের উপলব্ধি। নবাব সিরাজের বন্দী নানী, মা ও পতœীর জবানে প্রকাশিত হয় তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা। সিরাজের মাতামহ শরিফুন্নেসা, মা আমিনা আর স্ত্রী লুৎফার বয়ানে উঠে আসে সেই সব হৃদয়বিদারক ঘটনা। এর ভেতর দিয়ে বর্ণিত হয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ, নারীর মর্যাদা ও ইচ্ছার স্বাধীনতাসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়। ইচ্ছা থাকলেও অবমাননার হাত থেকে বাঁচতে এই নারীরা আত্মহত্যা করতে পারে না। বন্ধ করে দেয়া হয় তাদের আত্মহননের পথ। কেড়ে নেয়া হয় অঙ্গুরির বিষ ও খঞ্জর। প্রহরীর রূঢ় হাত স্পর্শ করে তাদের। আর এই নারীদের বন্দী করার মধ্য দিয়েই ঘটনার শেষ হয় না। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এবং বিদ্রোহের পথ রুদ্ধ করতে ষড়যন্ত্রের কূটচালে হত্যা করা হয় তাদের। একইসঙ্গে হত্যা করা হয় নারীর আত্মপ্রকাশের সুযোগ, মর্যাদা এবং স্বাধীনতাকে। একটি যুদ্ধ কিংবা সংঘর্ষে নারীর সর্বাধিক মূল্য দিয়ে থাকে; এই মূল সুরই অনুরণিত হয়েছে নাটকে। নারীরা স্বামী-ছেলে বা প্রিয়জনকে যুদ্ধে পাঠিয়ে পরিণত হন সর্বহারায়। বিজিত হলে শত্রুদের হাতে লুট হয়ে যায় তাদের সম্ভ্রম। সুফিয়া কামালের জন্মদিনে ছায়ানটের আয়োজন ॥ স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত জননী সাহসিকা কবি বেগম সুফিয়া কামাল। কাল শনিবার তার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯১১ সালের ২০ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভাদীপ্ত উজ্জ্বল মহিয়সী এই নারী আজীবন মুক্তবুদ্ধির চর্চার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে সংগ্রাম করেছেন। সাহিত্যচর্চার সঙ্গে সঙ্গে বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল তার আপোসহীন দৃপ্ত পদচারণা। শুধু তাই নয়, সাংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে সমাজ বদলের অঙ্গীকারে নিয়োজিত করেছিলেন নিজেকে। সেই সূত্রে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠায় রেখেছিলেন অনন্য ভূমিকা। আর সেই কৃতজ্ঞতার বন্ধনে তার জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে ছায়ানট। শনিবার সকাল ১১টায় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সুফিয়া কামাল স্মরণানুষ্ঠান।
×