ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৯ জুন ২০১৫

খোশ আমদেদ  মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার অপার রহমতে পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারকের সিয়াম সাধনা শুরু করেছি। গতকাল দিনের অবসানলগ্নে আকাশে মাহে রমজানের হেলাল বা নয়াচাঁদ উদিত হয়ে জানান দিল সিয়াম সাধনার। ইশার ওয়াক্তে তারাবীহর সালাতে সুমধুর তিলাওয়াতের সুরে বরণ করে নেয়া হলো রহমত বরকত মাগফিরাতের মাহিনাকে। মুমিন মুসলমানদের কাছে আজ এক পরম আনন্দ ও তৃপ্তির মুহূর্ত, তারা আজ এক মহা অনুভব ও ইবাদত উপভোগের পুতঃসায়রে সন্তরণ শুরু করেছে। তারা এ মাসকে নিজের জীবন নিষ্পাপ পুণ্যময় করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। তাই দেখা যায়, মুসলিম সমাজের ঘরে ঘরে রমজানের সমাদর, রমজানের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার বিভিন্ন আয়োজন, এ মাসের মাহাত্ম্য, ফজিলত ও বরকত অর্জনের জন্য নানা আমল ও কর্মসূচী। ইতিহাসে আমরা দেখি সোনালি যুগের মুসলমানরা এ মাসকে যথাযথ ভাবগম্ভীর পরিবেশে অতিবাহিত করার জন্য রজব মাস থেকে প্রস্তুতি নিতেন এবং তারা রজব থেকে মাহে রমজান পর্যন্ত পুণ্য অর্জনের যে অবারিত ধারা প্রবাহিত হয় তা পাওয়ার জন্য খোদা তায়ালার কাছে ফরিয়াদ করতেন এই বলে : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবান .... অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র রজব ও শাবান মাসে বরকত দান কর আর পবিত্র মাহে রমজান পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দাও।’ তারা শাবান মাস থেকে অধিক পরিমাণে কুরআন চর্চায় আত্মনিয়োগ করতেন, ধনীরা যাকাতের হিচ্ছা বের করে গরিবদের মধ্যে বিতরণ শুরু করতেন। যাতে মাহে রমজানে সমাজে প্রত্যেকের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল থাকে এবং সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে পারে। বস্তুত শুধু ব্যক্তি মুসলমানের জীবনে নয়, গোটা সমাজ সংশোধনে, কৃচ্ছ্রের মাস, সংযমের মাস রমযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কিন্তু আজ আমরা অতীত যুগের সোনার মানুষদের অনুসরণ করছি না বলেই সিয়ামের বরকত, রমজানের ফজিলত থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ইসলামের বাস্তবিক কল্যাণ ও আমলের সৌন্দর্য থেকে দূরে সরে পড়ছি। ফলে দেখা যাচ্ছে আমাদের মধ্যে অনৈক্য অশান্তি অতৃপ্তি পরশ্রীকাতরতা, অসহিষ্ণুতা প্রভৃতি। রমজানুল মোবারক উপলক্ষে কুরআন ও হাদীসে যে সব বাণী এসেছে তা সত্যিই একজন মুমিনকে সৎপথে জীবন রচনার এক দুর্দমনীয় প্রতিযোগিতায় উদ্বেলিত করে তোলে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার পবিত্র আখেরী কালাম কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন : শাহরু রামাদানাল লাযী উনযিলা ফীহিল কুরআন হুদাললিন্নাসি ওয়া বায়্যিনাত...। ’ অর্থাৎ ‘রমজান মাস হলো সেই মাসÑ যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে গণনা পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন নাÑ যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হিদায়াত দান করার দরুন আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা কর (আর) যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ হাদীস শরীফে বার বার এ মাসকে প্রথম থেকেই অনুধাবন ও সদ্ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হযরত সালমান ফারেসী (রাদিঃ) একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন : একদিনকার ঘটনা। আঁ- হযরত (স.) শাবান মাসের শেষ তারিখ আমাদের উদ্দেশ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এতে তিনি ইরশাদ করেছেন : হে লোক সকল! একটি মহান ও বরকতময় মাস তোমাদের সামনে উপস্থিত। এ মাসের রাতগুলোর মধ্যে এমন এক রাত বিদ্যমান যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাত্রিজাগরণকে করেছেন অতিরিক্ত ইবাদতে শামিল। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি এ মাসে একটি সাধারণ ভাল কাজ করবে অন্য মাসের তুলনায় তাকে একটি ফরজ ইবাদতের সাওয়াব প্রদান করা হবে। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত পালন করবে তাকে সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ সাওয়াব প্রদান করা হবে। এ মোবারক মাস ধৈর্য ও সংযমের মাস। ধৈর্যের বিনিময় অবশ্যই জান্নাত। এ মাস পরোপকারের। এ মাসে বিশেষভাবে মু’মিন বান্দাদের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। কেউ যদি একজন রোজাদারের ইফতারের ব্যবস্থা করে আল্লাহ তায়ালা তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেন, তাকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন এবং (রোজাদারের) রোজার সমান তাকে পুণ্য দান করেন। আসুন না, এ মাসের সূচনালগ্ন থেকে এর সদ্ব্যবহার করে ইহপরকালীন ও অশেষ কল্যাণে ব্রতী হই।
×