ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যানের ঘোষণা

রাজধানীবাসীর জন্য দুটি স্থানে প্লট বরাদ্দ দিচ্ছে রাজউক

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ জুন ২০১৫

রাজধানীবাসীর জন্য দুটি স্থানে প্লট বরাদ্দ  দিচ্ছে রাজউক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের আবাসন সমস্যা দূর করতে নতুন দুটি স্থানে প্লট বরাদ্দ প্রকল্প চালুর ঘোষণা দিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান জিএম জয়নাল আবেদিন ভুইয়া। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নতুন করে এ প্রকল্প দুটি হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে প্রকল্প দুটি রাজউকের কোন কোন স্থানে চালু করা হবে এ বিষয়ে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা দেননি তিনি। এছাড়া নক্সা পেতে হয়রানি রোধে আগামী ১ জুলাই থেকে রাজউকের নক্সা প্রদান কার্যক্রম হাতে নয় কম্পিউটারের মাধ্যমে অটোমেশন পদ্ধতিতে পরিচালিত করারও ঘোষণা দেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাজউক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে রাজউকের এক বছরব্যাপী নানা কর্মকা- নিয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বক্তব্য রাখেন। এর আগে রাজউক দীর্ঘদিন যাবত রাজউক নতুন কোন প্লট বরাদ্দের প্রকল্প হাতে নেবে না বলে ঘোষণা দেয়। সংবাদ সম্মেলনে রাজউকের চেয়ারম্যান সংস্থার বিভিন্ন সমস্যা, সীমাবদ্ধতা, নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও রাজধানীর উন্নয়নে সরকারে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পাহাড়সম সমস্যা মাথায় নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান রাজউক কাজ করছে। নিজস্ব আয়ের উপরেই রাজউককে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা হয় ও কৃচ্ছতা সাধন করে চলতে হয়। এত সমস্যার মাঝেও আমরা থেমে নেই। রাজধানীর উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সংস্থাটির আইন শাখার মামলা সম্পর্কে বলেন, মোট মামলার প্রায় ৮০ ভাগই হচ্ছে ভূমি সংক্রান্ত। এসব মামলার সমাধানকল্পে আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছি। এছাড়া যে কোন একটি মামলায় হেরে গেলেই সরকারকে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই এসব মামলা পরিচালনায় অনেক সময় ব্যয় হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, গত এক বছরে সংস্থাটির বিরুদ্ধে দেয়া অডিট আপত্তিগুলো অকল্পনীয়ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, পুরনো ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)-এর বাস্তবায়নকাল চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৫ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদী নতুন করে ড্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ ড্যাপ প্রণয়নে তিনটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ড্যাপের প্রাথমিক কাজ হিসেবে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এই প্ল্যানটির জনমত যাচাই কাজ শুরু করেছি। বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে যাচাই করা হবে। নতুন এ ড্যাপটি সঠিকভাবে প্রণয়নের লক্ষ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে সভাপতি করা হয়েছে। কোন ইমারত নির্মাণের জন্য রাজউকের পরিকল্পনা শাখা থেকে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রদানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জয়নাল আবেদিন বলেন, ইমারত নির্মাণে জমির নক্সা প্রদানে রাজউক কর্তৃক বিভিন্ন প্রকার হয়রানি, ঘুষ গ্রহণসহ সময় ক্ষেপণের দীর্ঘ বছরের অভিযোগ দূর করতে আমরা এখন থেকে নক্সা প্রদান ও গ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হাতে কোন কাজ করা হবে না। আগামী ১ জুলাই থেকে নক্সা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। নক্সার জন্য দরখাস্ত গ্রহণ, জমাদান ও নক্সার সর্বশেষ অবস্থা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত করা হবে। যে কেউ তার নক্সার সর্বশেষ খবর জানতে ইন্টারনেটে রাজউকের ওয়েবসাইটে দেখতে পারবেন। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোড দিয়ে ম্যাসেজ প্রদান করেও যে কোন গ্রাহক তার জমির নক্সার সর্বশেষ অবস্থা ও কোথায় বা কোন শাখায় রয়েছে তার খবর জানতে পারবেন। এর ফলে নক্সা পেতে গ্রাহককে দালালের কাছে যাওয়া বা ঘুষ প্রদান করতে হবেন না। ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তি বর্তমানের চেয়ে অনেক কমে আসবে। অটোমেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে রাজধানীর লালবাগ ও ধানম-ি এলাকাকে বেছে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে নক্সার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোন ইমারত নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এর আগে রাজধানীতে নক্সা বহির্ভূতভাবে অসংখ্য ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এর ব্যর্থতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা এসব অবৈধ নক্সা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছি। তবে নক্সা সংশ্লিষ্ট নতুন এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। রাজধানীর বর্তমান যানজট নিরসনে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বর্ধিত ঢাকার নতুন রাস্তা তৈরি করার ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ হাতে নেব। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাস্তার নক্সা তৈরির পরই জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হলে বর্তমানের যানজট আর থাকবে না। আর ড্যাপের নক্সায় থাকা সকল রাস্তায় নতুন করে কোনপ্রকার ইমারত তৈরি করতে দেয়া হবে না। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের এ বিধিমালায় নানা অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। ফলে এ বিধিমালার সংস্কার করা প্রয়োজন। নতুন করে এ বিধিমালার সংস্কার করতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ও এ বিধিমালার সঙ্গে বর্তমানের অসামঞ্জস্যগুলো রাজউকের পক্ষ থেকে তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে ইমারত নির্মাণে চলমান সমস্যা বর্তমানের চেয়ে অনেক কমে আসবে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র হাতিরঝিলের বর্তমান সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধিকল্পে রাজউক নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হাতিরঝিলকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে এমভি থিয়েটার স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া ঝিলের পানিতে ওয়াটার ট্যাক্সি ক্যাব চালু, হাতিরঝিলকে রাজধানীবাসীর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করার কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, উত্তরা এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প ৩য় পর্যায়ের কাজ নতুন করে শুরু করা হচ্ছে। এর আগে এ প্রকল্পের মধ্যে মেট্রোরেল তৈরির জন্য ৬০ একর জমি প্রদান করাসহ নানা সমস্যা থাকায় আমরা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নতুন করে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। আশা করি এর মাধ্যমে এ প্রকল্পে বিনিয়োগকারী পূর্বের গ্রাহকরা আবার ফিরে আসবেন। সংবাদ সম্মেলনে রাজউকের অন্যতম বৃহত প্রকল্প পূর্বাচল, ঝিলমিলসহ নানা প্রকল্পের আগ্রগতি তুলে ধরেন। এছাড়া রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম ফ্লাইওভার তৈরির পরিকল্পনা, কুড়িল ফ্লাইওভার চালুসহ রাজউকের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি রাজধানীর উন্নয়নে ঢাকার ২ সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, বিদ্যুত বিভাগসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ঘোষণা দেন। রাজউকের এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে তিনি সরকারের পাশাপাশি সকল শ্রেণীর নাগরিকদের সহায়তা কামনা করেন।
×