ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর যানজট

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১৮ জুন ২০১৫

রাজধানীর যানজট

যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন রাজধানীর মানুষ। বলা চলে প্রতিদিনের এক যন্ত্রণার নাম যানজট। এটা এখন নিত্যদিনের বিড়ম্বনা। এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ব্যস্ত রাস্তায় ভিআইপিদের চলাচল, সময় সময় বৃষ্টি, রাস্তা সংস্কার ও ঈদকে সামনে রেখেই মূলত এখন নগরীতে যানজটের তীব্রতা বেড়েছে। রয়েছে ফ্লাইওভার, অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কারবিহীন রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িসহ নানা কারণও। কোনভাবেই যেন যানজটকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নগরবাসী বাধ্য হয়েই সয়ে যাচ্ছেন যানজটের এই অত্যাচার। অবস্থা এমন যে, ১০ মিনিটের রাস্তা এক ঘণ্টায়ও শেষ হচ্ছে না। এখন যানজটের মারাত্মক জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে রাজধানীর মালিবাগ-মগবাজার, পল্টন থেকে শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজার হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত, অন্যদিকে নীলক্ষেত, মিরপুর-১, ১০ নম্বর গোলচক্কর, মহাখালী, বাড্ডা ও রামপুরা। যানজটের আরেক কারণ জলাবদ্ধতা। বর্ষার প্রথম মাস আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ চলছে। প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা। সামনের দু-তিন মাস ধারাবাহিক বৃষ্টি হতে পারে। জলাবদ্ধতা দূর করা না গেলে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। বর্ষাকাল মানেই যেন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির মৌসুম। এ সময় এমনিতেই অনেক রাস্তা বৃষ্টি-কাদায় হয়ে যায় চলাচলের অনুপযোগী। উন্নয়নের প্রয়োজনে বেশিরভাগ সড়কই কাটা বা গর্ত করা হয়। আবার এক সময় নামকাওয়াস্তে ভরাটও করা হয়। এটা দীর্ঘদিনের চর্চা। এই ধারা বন্ধ হওয়া উচিত। সেটা যেন বর্ষাকালের এই সময়টায় না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। রাস্তায় যান চলাচলে এখনও শৃঙ্খলা আসেনি। বেশিরভাগ গাড়িই আইন মেনে চলাচল করছে না। যে যেভাবে পারছে গাড়ি চালাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় যান্ত্রিক গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে রিক্সাও। অথচ ট্রাফিক আইন মানলেই যানজটের সমস্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। রাজধানীর যানজট নিরসনে অগ্রাধিকারভিত্তিক কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, কিছু কাজ চলছে। এরমধ্যে ঢাকায় মহাখালী, বাসাবো-খিলগাঁও, বনানী-কুড়িল, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার চালু হয়েছে। নির্মাণাধীন মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার। অন্য ফ্লাইওভারগুলো চালু হওয়ার কারণে ঐসব অঞ্চলে যানজট অনেকাংশে কমে এসেছে, যা খানিকটা স্বস্তিদায়ক। ঢাকা বড় নগরী। প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস এখানে। অনেক অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশাল বিশাল শপিংমল, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল রয়েছে এখানে। অনেক বিদেশী নানা কর্মসূত্রে আসছেন, অনেকে বাসও করছেন। বলা চলে কর্মব্যস্ত নগরী এটা। যানজটের কারণে আমাদের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, কমছে কর্মঘণ্টা। অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু যানজট যদি এভাবে জেঁকে বসে তাহলে উদ্যোক্তারা উৎসাহ হারাবে, এ দেশে বিনিয়োগে এরা আর আগ্রহ দেখাবে না। তাই যানজট নিরসনে এখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আশির দশকের শেষ দিকে রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে জেলা শহরগুলোর সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নির্ধারণ করা হয়। তখন গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদে বাস টার্মিনাল স্থানান্তর করা হয়। পরে নতুন নতুন সড়ক ও ফ্লাইওভার তৈরি হলেও তা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখছে সামান্যই। সড়কের তুলনায় বাড়ছে জনসংখ্যা ও যানবাহন। কয়েকটি ফ্লাইওভার হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল চালুর কথা শোনা যায়। তবে যা হয়েছে সেক্ষেত্রেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় করা সম্ভব। বিষয়টির দিকে কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত।
×