ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষুদ্রাস্ত্র বিস্তার প্রতিরোধ শীর্ষক কর্মশালায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী

’৭১ সালের পরাজিত শক্তি এখনও সুযোগের অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ জুন ২০১৫

’৭১ সালের পরাজিত শক্তি এখনও সুযোগের অপেক্ষায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বাংলাদেশ এখন সেই অন্ধকার জগত থেকে বেরিয়ে এসেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনা ও হামলাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। তবে ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি এখনও সুযোগের অপেক্ষায় আছে। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘ক্ষুদ্রাস্ত্র বিস্তার প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও নিরস্ত্রীকরণ সংস্থা যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ডি ওয়াটকিন্স, ইউএনআরসিপিডির পরিচালক ইউরি ক্রাইভোনোস ও ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মিজানুর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল চট্টগ্রামের ইউরিয়া সার কারখানার জেটি থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তার কয়েক মাস পরই একুশে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেন। মরহুম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানও তখন নিহত হন। পরবর্তীতে দুটি ঘটনাই বর্তমান সরকার তদন্ত শুরু করে। বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনকালকে অন্ধকার জগত উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন সেই অন্ধকার জগত থেকে বেরিয়ে এসেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের কোন ঘটনা আর যেন না ঘটে বর্তমান সরকার সে বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ। গত দুই বছরে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটি গোষ্ঠী গত দুই বছর ধরে নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা করেছে। পেট্রোলবোমা ছুড়েছে, ককটেল ছুড়েছে। এটা খুবই স্পষ্ট যে ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তিই এসব কাজ করেছে। এই পরাজিত শক্তিই এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, ক্ষুদ্রাস্ত্র বিস্তার রোধে প্রণীত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ বাংলাদেশ। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে সরকার। তবে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের ১১ থেকে ১৫ ভাগ অপরাধ ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্রাস্ত্র দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি বলেও জানান আলোচকরা। পাটের বস্তা ও মশারি নেবে ঘানা-উগান্ডা ॥ বাংলাদেশের কাছে পাটের বস্তা চেয়েছে ঘানা। অপরদিকে মশারি চেয়েছে উগান্ডা। বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ঘানার অনাবাসী হাইকমিশনার স্যামুয়েল ফেনি ইন ইয়ালি ও উগান্ডার নবনিযুক্ত অনাবাসী হাইকমিশনার এলিজাবেথ ফলা নেফেইয়দ। নবনিযুক্ত দুই হাইকমিশনার আলাদাভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে ঘানার হাইকমিশনার বলেন, তাদের দেশে ‘কোকো’ নামে এক ধরনের চকোলেট উৎপাদন করা হয়। সেগুলো বাজারজাত করতে প্রচুর পাটের বস্তার প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশে থেকে পাটের বস্তা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়া তারা বাংলাদেশে অনারারি কনস্যুলেট খুলতে চান। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মতি দেন। এছাড়া পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে ঘানা থেকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে আসার আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশ থেকে ঘানা শুধু পাটই নয়, টেক্সটাইল মালামাল ও ওষুধও নিতে চায়। এদিকে উগান্ডার হাইকমিশনার এলিজাবেথ ফলা নেফেইয়দ বৈঠকে বলেন, মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ থেকে মশারি সংগ্রহ করতে চায় তার দেশ। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনে তাদের দেশের দুইজন ছাত্রীকে বৃত্তি দেয়ার আহ্বান জানান। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজনকে বৃত্তি দেয়ার সম্মতি দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে এই বৃত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে উগান্ডার হাইকমিশনার বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। হাইকমিশনার আরও জানান, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য উগান্ডার অতি উর্বর মাটিতে কৃষিপণ্য উৎপাদন, সেদেশে কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন ও তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, ঘানা ও উগান্ডার দুইজন হাইকমিশনার দিল্লী থেকে বাংলাদেশে অনাবাসী হাইকমিশনার হিসেবে কাজ করছেন।
×