ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডাকযোগে হত্যার হুমকি ॥ তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৮ জুন ২০১৫

ডাকযোগে হত্যার হুমকি ॥ তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গীগোষ্ঠীর নামে একের পর এক ডাকযোগে হাতের লেখা চিঠিতে হুমকিদাতারা কারা তা খুঁজে বের করতে তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা। জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততার ঘটনাটিও খতিয়ে দেখছে তারা। হত্যার হুমকিতে ডিজিটাল পদ্ধতির পরিবর্তে এনালগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে কেন? তদন্তে এসব নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, জঙ্গীগোষ্ঠীর নামে ডাকযোগে যারা চিঠি দিচ্ছে তারা কারা? আসলেই কী তারা জঙ্গীগোষ্ঠী; নাকি ভয়ভীতি প্রদর্শন, আতঙ্ক, উদ্বেগ ও অস্থিরতা সৃষ্টির কৌশল হিসেবেই এ ধরনের চিঠি দিচ্ছে জামায়াত-শিবির? জামায়াত-শিবির নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালিয়ে দেশে নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কি ভয়ভীতি প্রদর্শনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে? ডাকযোগে চিঠির মাধ্যমে জঙ্গীগোষ্ঠীর নামে জামায়াত-শিবির হত্যার হুমকিসহ নানা ধরনের উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধতা প্রচার ও ভয় দেখানোর অপকৌশল বেছে নিয়েছে কিনা- তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, ব্লগার ও প্রগতিশীল লেখক অভিজিত, ওয়াশিকুর, অনন্তসহ অন্যদের হত্যার আগে ফেসবুকে ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে হুমকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ ২৫ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনাটি ভিন্ন প্রক্রিয়ার। ডাকযোগে হাতের লেখা চিঠির মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেয়ার মধ্যে দুই ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করার বিষয়টি গোয়েন্দাদের তদন্তের নজরে এসেছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জঙ্গীগোষ্ঠীটি তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী ও দক্ষ। তাদের সঙ্গে আছে অনেক আইটি বিশেষজ্ঞ। তাহলে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে কেন ডাকযোগে হত্যার হুমকি সম্পর্কিত হাতের লেখা চিঠি পাঠানো হবে? তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ এ জঙ্গীগোষ্ঠীটি ইতোপূর্বে মোবাইল ফোন, ফেসবুক, ই-মেল, টুইটার, ইন্টারনেট মাধ্যম ব্যবহার করে হত্যার হুমকিসহ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এখন তারা ডাকযোগে হাতের লেখার চিঠির মাধ্যম ব্যবহার করবে কেন? এসব প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দারা। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার না করে ডাকযোগে হাতের লেখা চিঠিতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। কারণ যারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে তারা ভাল করেই জানে, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু ডাকযোগে চিঠি পাঠানো হলে ধরা পড়ার আশঙ্কা নেই। কারণ ঢাকার বাইরে থেকে কেউ ঢাকায় এসে কোন পোস্ট অফিসে চিঠি পোস্ট করলে কোন স্থান থেকে এসে কোন ব্যক্তি চিঠি পোস্ট করেছে তা খুঁজে বের করা কঠিন হবে। এ কারণেই হত্যার হুমকিদাতারা ডিজিটাল পদ্ধতির পরিবর্তে এনালগ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। ডিইউজের উদ্বেগ ॥ দেশের ২৫ বিশিষ্ট জনকে হত্যার হুমকির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আলতাফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ। বুধবার ডিইউজের পক্ষ থেকে এ উদ্বেগ জানান তারা। এ ছাড়া এ ঘটনায় অবিলম্বে হুমকি প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তারা। বিবৃতিতে ডিইউজে নেতৃদ্বয় বলেন, গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবেদ খান, বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, শ্যামল দত্ত, মুন্নী সাহা, নবনীতা চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবিরসহ ২৫ দেশবরেণ্য নাগরিককে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের নামে এ ধরনের হুমকি মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।
×