ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুকে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে একজন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ জুন ২০১৫

ফেসবুকে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে একজন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেসবুকে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে সাখাওয়াত হোসেন নামে একজন। যিনি দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে আপত্তিকর পুরনো ছবি পোস্ট করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ানোর চেষ্টা করছিল। বিশেষ করে মুসলিমদের সঙ্গে বৌদ্ধদের বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তি ফেসবুকে ও অনলাইনে আপত্তিকর ছবিসহ বিভিন্ন লেখা লিখে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বসতি ও মন্দিরে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের মতো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছিল। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর ডিবির পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোঃ শাহজাহান ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুল আলম রাসেলের নেতৃত্বে একদল ডিবি ঢাকার পুরানা পল্টনে অভিযান চালায়। অভিযানে পুরানা পল্টনের ৮৫/১ নম্বর বহুতল ভবনের একটি অফিস থেকে গ্রেফতার হয় সাখাওয়াত হুসাইন (৩৮)। তার কাছ থেকে জব্দ করা হয় সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মুসলমান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন আলামত। আলামতের মধ্যে বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। এসব ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত এসব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ইসলামিক নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট নেট এবং ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা হতো। মিথ্যা প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত সাখাওয়াতের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানাধীন পোস্ট অফিস পাড়ায়। তিনি খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রীর এল ব্লকের ১৯ নম্বর বহুতল বাড়ির পঞ্চম তলায় বসবাস করতেন। এ বাড়িতে বসেই তিনি অনলাইন পোর্টালটিও পরিচালনা করতেন। বুধবার দুপুর বারোটায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত সাখাওয়াত তার বিভিন্ন লেখায় ও পোস্টের মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। তার প্রচারণার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, মিয়ানমারে বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর নির্মম অত্যাচার করছে। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের রুখে দাঁড়ানো উচিত। এমন বক্তব্যের ফলে যাতে করে মুসলমানদের সঙ্গে বৌদ্ধদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। মূলত এমন একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গ্রেফতারকৃত সাখাওয়াত এসব অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। তিনি মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যার নির্মম ইতিহাস ভিডিওসহ অনলাইনে প্রচার করেন। যাতে করে মুসলমানদের মধ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনদের উপর আক্রোশ বা ঘৃণা বা বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। এসব অপচেষ্টা মুসলমান ও বৌদ্ধদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উস্কানিমূলক। এছাড়া তিনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতেই উদ্দেশ্যমূলক অনেক মিথ্যা ছবি পোস্ট করেছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে মিথ্যা ছবি ও তথ্য দিয়ে দেশের শান্তি প্রিয় মুসলমানদের উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। মূলত দেশে মুসলমানদের সঙ্গে বৌদ্ধদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর লক্ষ্যে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইন পোর্টালটির মাধ্যমে নানা মিথ্যা প্রচার প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম, মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা উত্তম কুমার বড়ুয়ার নামের এক ব্যক্তির ফেইস বুক থেকে ‘ইনসাল্ট আল্লাহ’ নামে পবিত্র কোরানের উপর পা রাখা একটা বিদেশী মহিলার ছবি প্রচার হয়। সেই ছবির সূত্র ধরে মৌলবাদীরা কক্সবাজারের রামু উপজেলার সংখ্যালঘু রাখাইন ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও শতাধিক বৌদ্ধ বসতিতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। পরবর্তীতে ধরা পড়ে উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে উগ্র মৌলবাদীরা দেশে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়াতে ছবিটি ছড়িয়ে দিয়েছিল। উত্তম কুমার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের একজন নিম্নপদের কর্মচারী। রহস্য উদঘাটনে উত্তম কুমার, তার মা ও বোনকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়। ঘটনার সঙ্গে একজন স্থানীয় বিএনপির দলীয় সাংসদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়।
×