ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘রক্তচোষা’ ব্যাংক লুটেরাদের থামান ॥ সংসদে অর্থমন্ত্রীকে মঈনুদ্দিন খান বাদল

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৮ জুন ২০১৫

‘রক্তচোষা’ ব্যাংক লুটেরাদের থামান ॥ সংসদে অর্থমন্ত্রীকে মঈনুদ্দিন খান বাদল

সংসদ রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজার ও ব্যাংকের লুটকারী ‘রক্তচোষাদের’ যে কোন উপায়ে থামানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানোর পাশাপাশি এ ব্যাপারে স্পীকারের রুলিংয়ের দাবি জানিয়েছেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী দৈনিক প্রথম আলোর উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, কাগজ আছে বলে সত্যের ওপর দিয়ে সত্য প্রমাণের প্রবণতা ঠিক নয়। আমি সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাই না। অপরদিকে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ দেশের ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিককে হুমকির বিষয়টি উত্থাপন করে সর্বাগ্রে সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে এবং কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ বিধিতে দেয়া সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তাঁরা এসব কথা বলেন। ‘শেয়ারবাজার-ব্যাংক লুটেরারা এই আমলের ‘মুজাহিদ’- বাদল ॥ পয়েন্ট অব অর্ডারে জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির দ- বহাল রেখে আপীল বিভাগের রায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ঘাতক মুজাহিদরা এই জাতির জন্মের আঁতুরঘরে আঘাত করেছিল। কিন্তু এই আমলের যারা নব্য মুজাহিদ, যারা এই জাতির ভেতরে থেকে জনগণের রক্ত চুষছে, তাদের বিষয়ে কোন খবর নেই। আজকেও একটি পত্রিকায় খবর আছেÑ ৩০০ কোটি টাকার খবর নেই! তিনি বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মাঝে-মধ্যেই এ ধরনের সংবাদ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বিষয়টি এমন হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশে পয়সা কামানোর সবচেয়ে সহজ উপায়ই হচ্ছে কোন একটি জায়গাকে অতিমূল্যায়িত করা এবং ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেব-দিচ্ছি করে বছরের পর বছর তাইরে-নাইরে করে কাটিয়ে দেয়া। একটা সময়ে ব্যাংক এগুলোকে অবলোকন করে দেয়। ব্যাংকের টাকা আত্মসাতকারীর আর দেখা থাকে না। এসময় সংসদে উপস্থিত থাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে উদ্দেশ করে বাদল বলেন, ‘অত্যন্ত প্রাজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, এর কি কোন সমাধান নেই? বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিষয়ে এতকিছু লেখা হলো। সে কী আকাশে থাকেন? নাকি হিমালয়ে থাকেন? আইন কি তাদের স্পর্শ করতে পারে না? যখনই এ ধরনের কিছু ঘটে আমরা কিছুদিন চুপচাপ থাকি, তারপর সব ভুলে যাই।’ তিনি বলেন, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা এভাবে আত্মসাত করল, তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো তো দূরের কথা, বরং আমরা দেখছি তারা ক্ষমতার আশপাশে দাঁড়িয়ে আছে। এটা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আপনারা তাদের ক্ষমতার আশপাশে রাখবেন, ক্ষমতার আশপাশে আমরা তাদের ছায়া দেখবÑ এটা আশা করি না। মঈনুদ্দীন বাদল আরও বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী যখন গভীর দুঃখের সঙ্গে বলেন যে, ওরা এতই প্রভাবশালী যে সেখানে হাত দিতে পারব না। অর্থমন্ত্রী যদি এমনই অসহায় হন, তাহলে আর এত কোটি কোটি টাকার বাজেট দিয়ে লাভ কী? এসময় অধিবেশনে সভাপতিত্বকারী স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, একটা রুলিং দিয়ে এদের যে কোন উপায়ে থামাতে হবে, যারা এই জাতির রক্ত খাচ্ছে, তাদের থামান। প্রথম আলোকে মতিয়া চৌধুরীর চ্যালেঞ্জ ॥ গম নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে আগের দিনের মতো বুধবারও সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। মন্ত্রী বলেন, সংসদে দেয়া আমার বিবৃতির বিষয়ে প্রথম আলো লিখেছেÑ আমার মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি নাকি তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি, তাকে তদন্ত কমিটিতে ডাকাও হয়নি। আমার কাছে কললিস্ট আছে। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে কখন, কয়টার সময় কোন নম্বর থেকে ওই প্রতিবেদককে ফোন করা হয়েছিল, সব রেকর্ড আমি নিয়ে এসেছি। দুটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তদন্ত কমিটির প্রধান কে এম আবদুল ওয়াদুদ প্রথমে গত ২ জুন ৬টা ৪৮ মিনিটে ওই প্রতিবেদককে ফোন করেন। এরপর আবার রাত সাড়ে আটটায় ফোন করা হলে ওই প্রতিবেদক বলেছিলেন ‘আমি খুব ব্যস্ত, এখন বাড়ি চলে যাচ্ছি।’ কাজেই তদন্ত কমিটিতে তাকে ডাকা হয়নি এটা অসত্য। মতিয়া চৌধুরী বলেন, যে কারও ভুল হতেই পারে। কাগজ আছে, তাই বলে সত্যের ওপর দিয়ে সত্যকে প্রমাণ করার প্রবণতা থাকা ঠিক নয়। তারা (প্রথম আলো) বলেছে, আরও নাকি তদন্ত করা হচ্ছে। আমি নিশ্চয়ই সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাই না। তদন্ত করে আরও কী বের করবেন, দেখি। এমপিদের নিরাপত্তা চান ফিরোজ রশীদ ॥ তথ্যমন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দেশের ২৫ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি টেনে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এই ২৫ জনকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। আমরা প্রায়ই দেখছি এরকম হুমকি দেয়া হচ্ছে। দিনকে দিন হুমকির পাল্লা ভারী হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এভাবে জনে-জনে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না। যদি হুমকি থেকে থাকে, তাহলে সবার আগে হুমকিতে আছেন এই সংসদের সদস্যরা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় এমপিদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে, ভয়ে এমপিরা এলাকায় যেতে পারেননি। তখন আমরা কেউ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চাইনি। চেয়েছিলাম সমাজের নিরাপত্তা, মানুষের নিরাপত্তা। এবারও খালেদা জিয়া ও জামায়াতের তিন মাসের তা-বে এমপিরা হুমকিতে ছিলেন। হুমকির বিষয়টি ভালভাবে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, এই যে বলা হচ্ছে ২৫ জনকে হুমকি দেয়া হয়েছে, এরা কারা? এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা জনগণের কাছে যান না। তাহলে তাদের কারা কেন হুমকি দেবে? স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলব-বিষয়টি একটু যাচাই-বাছাই করুন। কোন নম্বর থেকে কারা হুমকি দিয়েছে, বের করা কঠিন কিছু নয়। কারণ এসব ব্যক্তি তো সমাজে এমন কিছু হয়ে যাননি যে, শুধু তাদেরই হুমকি দেয়ার দরকার হয়। তিনি বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের অনেকেই হুমকিতে রয়েছেন। তাহলে কী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাদের সবাইকে গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা দিতে পারবেন? কাজেই নিরাপত্তা যদি দিতেই হয়, তাহলে সেটি আগে দিতে হবে এমপিদের।
×