ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্ন আর বাস্তবতার লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৭ জুন ২০১৫

স্বপ্ন আর বাস্তবতার লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আছে ভারতের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। তা না হলেও অন্তত একটি ওয়ানডে জেতার স্বপ্ন লালন করা আছে। সেই স্বপ্ন জয় হলেই ভারতের কাছে বিশ্বকাপে আম্পায়ারের সুবাদে হারা ম্যাচের প্রতিশোধও নেয়া হয়ে যাবে। স্বপ্ন জয় আর প্রতিশোধের সেই মিশন বৃহস্পতিবারই শুরু হয়ে যাচ্ছে। এদিন প্রথম ওয়ানডে দিয়ে সিরিজ শুরু হবে। এরপর ২১ ও ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে। সব ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ৩টায় শুরু হবে। ক্রিকেটে প্রতিশোধ শব্দটি যতই উঠুক, ক্রিকেটাররা কিন্তু একবারও মুখ থেকে এ শব্দটি বের করতে চান না। যতই মনে সেই শব্দটি উঁকিঝুঁকি দিক, যখনই কোন দলের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে প্রতিশোধের ম্যাচ কি না জিজ্ঞেস করা হয়, ক্রিকেটাররা কিন্তু কথা ঘুরিয়েই দেন। তা এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে যে কিভাবে হেরেছে বাংলাদেশ, তা পুরো জাতির জানা। তা নিয়ে মনে ক্ষোভও আছে। এরপরও বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা কিন্তু মুখে সেই বিষয় আনতেই রাজি নন। শুধু অতীত স্মৃতি বলেই কথা কাটিয়ে দিতে চান। তবে স্বপ্ন জয়ের চেষ্টার কথা কিন্তু ঠিকই বলছেন। সিরিজ জয়ের স্বপ্ন আছে। তা না হলেও অন্তত ভারতের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের মধ্যে একটি ওয়ানডে জেতার স্বপ্ন মনে লালন করে রেখেছেন মাশরাফিবাহিনী। সেই স্বপ্ন জয় এখন হয়ে গেলেই হয়। সোমবার বেসরকারী একটি কোম্পানির শুভেচ্ছা দূত হওয়ার অনুষ্ঠানে সৌম্য সরকার সিরিজ জয়ের আশার কথাই জানিয়েছেন। সঙ্গে বিশ্বকাপের কথাও তার যে স্মরণ আছে, তা জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত প্ল্যান সবসময়ই থাকে। বড় প্ল্যানই আছে। মেন টার্গেট থাকবে মাঠে জেতার জন্য নামব। টিমের জন্য খেলব এবং বড় কিছু করার চেষ্টা করব।’ আর তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘যেগুলো হয়ে গিয়েছে, সেগুলো অতীত। যদি এই সিরিজে সুযোগ পাই তাহলে চেষ্টা করব নতুন করে কিছু একটা শুরু করার। সবাই আসলে চেষ্টা করে সবসময় ভাল করার। দিনে দিনে আমরাও উন্নতি করছি এবং কঠোর পরিশ্রম করছি। আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে আমরা আরও ভাল করব। আশা করছি ভাল একটা কিছু উপহার দেব।’ যেভাবে বৃষ্টি পড়েই চলেছে, তাতে খেলায় যে সমস্যা হবে, তা বোঝাই যাচ্ছে। যেহেতু খেলা একদিনের। এমন ম্যাচে তাই পেসারদের ভূমিকা বেশিই থাকবে। তাইত বাংলাদেশ দলে মাশরাফি, তাসকিন, রুবেল ও মুস্তাফিজর রহমান থাকার পরও অনুশীলনে শহীদ, শফিউল, রাজু ও আল আমিনদের মতো পেসাররাও ব্যাটসম্যানদের বল করে চলেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০তে অভিষেক হয় পেসার মুস্তাফিজর রহমানের। এবার ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতেও অভিষেক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বলেছেন, ‘ভারতের সবাই তো ক্লাস ব্যাটসম্যান। বিশেষ করে বিরাট কোহলি ফর্মে আছে। তার উইকেট নেয়ার চেষ্টা করব। আমার কাজই উইকেট তুলে নেয়া। আমাকে দিয়ে যেন দেশের উপকার হয়, তা নিয়েই ভাবছি।’ সেই কাজটি পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক টি২০ ম্যাচে করেও দেখিয়েছেন মুস্তাফিজ। ৪ ওভার বল করে ২০ রান দিয়ে শহীদ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাফিজকে আউট করেছেনও এ বাঁহাতি পেসার। আরেকজন আছেন। যিনি সবসময়ই ভারতের বিপক্ষে দুর্বার। তার উপস্থিতিই যেন দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে দেয়। তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। ৪ জুন বাসা থেকে রিকশায় করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আসতে সময় বাসের ধাক্কায় ইনজুরিতে পড়েন। দুই হাতের তালু ছিলে যায়। সঙ্গে হাঁটুতেও ব্যথা পান। এখনও হাতের ক্ষত পুরোপুরি সেরে উঠেনি। এরপরও খেলতে নামবেন মাশরাফি। দলটি ভারত বলে কথা। মাশরাফি বল হাতে ত্যাজ নিয়ে দৌড়াচ্ছেন, পুরো স্টেডিয়ামে তখন ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; মাশরাফি, মাশরাফি’ রব উঠেছে এবং তাতেই পুরো দল দুর্দান্ত খেলার প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে চলতে শুরু করে দিয়েছে, তা করতে কী ভুলতে পারেন মাশরাফি। তাই খেলবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে যতই ভারত ব্যাটসম্যানের পায়ে লেগে আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকুক, রিভিউ নেয়ার কোন পদ্ধতিই কিন্তু এবার থাকছে না। বিশ্বকাপে ছিল। তাতেও কাজ হয়নি। কোয়ার্টার ফাইনালে রুবেলের বলটি ‘নো’ না হয়েও আম্পায়ার নো দিয়েছেন। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের আউটটি না হয়েও হয়েছে। এবার কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। তাতে থাকবে প্রতিশোধ নেয়ার ঝাঝও। সোমবার যমুনা ফিউচার পার্কে র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বিশ্বকাপের ম্যাচটি নিয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ‘এ সিরিজটার জন্য আপনারা অপেক্ষা করছেন। আপনাদের দোয়া ও সমর্থনে আমরা ভাল করার অনুপ্রেরণা পাই। আমাদের ভাল-খারাপ সব অবস্থাতেই এবং সবসময়ই আপনারা পাশে থাকেন। টেস্ট ম্যাচ ড্র হয়েছে, আশা করছি ওয়ানডে সিরিজে আমরা ভাল ফল পাব।’ বোঝাই যাচ্ছে, সবাই চান বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নেক বাংলাদেশ। সেই প্রতিশোধ নেয়া গেলে স্বপ্ন জয়ও হয়ে যাবে। সেই স্বপ্ন জয় আর প্রতিশোধের মিশন বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে।
×