ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিকভাবে আইনী কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ ইইউর

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৭ জুন ২০১৫

আন্তর্জাতিকভাবে আইনী কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ ইইউর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বের সকল দেশের ন্যায্যতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে আইনী কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আলোচনার মাধ্যমে আইনী কাঠামো গঠন করা সম্ভব হলে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকির ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করে ইউরোপীয় এই জোট। অপরদিকে প্রবৃদ্ধির হার ঠিক রেখেই জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলা করতে চায় বাংলাদেশ। মঙ্গলবার রাজধানীতে ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বাংলাদেশ জলবায়ু কূটনীতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব আলোচনা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় গুলশানের একটি হোটেলে এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদ্যু, ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি এ্যাবার্ট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) ফেলো এম আসাদুজ্জামান, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান প্রমুখ। সেমিনারে প্রধান অতিথি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা কার্বন গ্যাসও কমিয়ে আনতে চাই। চলতি বছরে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে এসব বিষয়কেই অগ্রাধিকার দেবে বাংলাদেশ। আমরা আলোচনার মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে চাই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শক্তিশালী অংশীদার। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদ্যু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ২০১৫ সালকেই আমরা ‘নিষ্পত্তিমূলক’ বছর বলে বিবেচনা করতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে একটি আইনী কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ করেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, কার্বন গ্যাস কমিয়ে আনার জন্য দ্রুত একটি আইনী কাঠামোর মধ্যে আনতে পারলে সকল দেশই উপকৃত হবে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি অ্যাবার্ট বলেন, চলতি বছর প্যারিসে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলন সামনে রেখে বিভিন্ন দেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ে জোর দিতে হবে। এর মধ্যে প্রথমেই গ্রীন হাউস গ্যাস কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া জলবায়ু অর্থায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। আর জলবায়ু ঝুকি মোকাবেলার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে কি কি আলোচনা হবে, তা এখন থেকেই ঠিক করতে হবে। সেমিনারে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, প্রবৃদ্ধির হার ঠিক রেখেই জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলা করতে চায় বাংলাদেশ। জলবায়ু ঝুঁকি আমরা এমনভাবে মোকাবেলা করতে চাই, যেন আমাদের প্রবৃদ্ধিতে কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এছাড়া দারিদ্র্যের হার কমানোর ক্ষেত্রেও কোন প্রভাব না পড়ে, এসব বিবেচনা নিয়েই এই ঝুঁকি মোকাবেলা করতে চাই। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, আগামী বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাস্তুচ্যুতির বিষয়টি বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তন হলে বাংলাদেশের যেসব প্রান্তিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে, তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। এই পুনর্বাসন দেশের অভ্যন্তরে হতে পারে, দেশের বাইরেও হতে পারে। এটা নিয়ে আলোচনা জরুরী। সেমিনারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন সরকারী, বেসরকারী প্রতিনিধি, কূটনীতিক, গবেষণা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। সেমিনার শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আয়োজিত জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা শীর্ষক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার ১১ বিজয়ীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
×