ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নদীভাঙ্গন রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

ডেল্টা প্ল্যানে যুক্ত হলো বিশ্বব্যাংক ॥ সমঝোতা চুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৭ জুন ২০১৫

ডেল্টা প্ল্যানে যুক্ত হলো বিশ্বব্যাংক ॥ সমঝোতা চুক্তি সই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পানি সম্পদ নিয়ে ১০০ বছরের পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান) বাস্তবায়নে যুক্ত হলো বিশ্বব্যাংক। এ লক্ষ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সংস্থাটি দীর্ঘমেয়াদী এ পরিকল্পনা তৈরি এবং পরবর্তীতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে সহযোগিতা প্রদান করবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরের দিন থেকে কার্যকর হবে এবং তিন বছর মেয়াদে থাকবে। তবে স্বাক্ষরকারী কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে এর কার্যক্রম বাড়ানো যাবে বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে নদীর তীরের ভূমি উদ্ধার, রক্ষা এবং কার্যকর ব্যবহার সংক্রান্ত একটি সহযোগিতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নেদারল্যান্ডসের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রী লিলিয়েন পলিউমেন, বিশ্বব্যাংকের পক্ষে প্রোগ্রাম লিডার লিয়া সির্গাট এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আইএসসি ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এ্যান্ডারস ব্যারেনটেল নিজ নিজ দেশ ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা তৈরির বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে এবং এর আনুষঙ্গিক বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। বক্তব্য রাখেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান কাজী শফিকুল আযম। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সফিকুল আযমসহ নেদারল্যান্ডস, বিশ্বব্যাংক ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে দেশে প্রতিবছর প্রচুর জমি নষ্ট হচ্ছে। এ দুর্যোগ যাতে কমে যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনায় ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাদু পানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা রক্ষা করতে হবে। কেননা এখন দেখা যাচ্ছে স্বাদু পানি পান করা ও কৃষি কাজে ব্যবহারসহ নানা ধরনের অপব্যবহার হচ্ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে গত কয়েক বছরে খাপ খাইয়ে নেয়া সংক্রান্ত কার্যক্রমে অগ্রগতি হয়েছে। যেমন লবণাক্ত সহনীয় ধান আবিষ্কার ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, এই বদ্বীপকে পূর্ণ কার্যকর করতে হবে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশের পানি সম্পদ নিয়ে ১০০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ শীর্ষক এ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস। এ জন্য ইতোমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে চুক্তির আওতায় নেদারল্যান্ডস এ পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। সরকার সাম্প্রতিক কয়েক দশকে পানি সম্পদ, কৃষি, ভূমি ব্যবহার, মৎস্য ও বনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা, নীতি, কর্মসূচী ও প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, হাওর মাস্টার প্ল্যান, এগ্রিকালচার মাস্টার প্ল্যান ফর সাউদার্ন রিজিওন এবং জাতীয় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এ পরিকল্পনাগুলো কাক্সিক্ষত হারে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছে না। একক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্বৈততার সৃষ্টি হয়ে সম্পদের অপচয় হচ্ছে। সে কারণেই ৫০ থেকে ১০০ বছর মেয়াদী একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ইস্যুসমূহ যথাযথভাবে বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদী এ পরিকল্পনা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ড. শামসুল আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করার সময় বলেন, পানি সম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনীত হবে। বাংলাদেশের ব-দ্বীপ ভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রশাসন সম্পর্কে একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হবে। সমন্বিত নীতি উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাধা চিহ্নিত করে করণীয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত সরকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও মান উন্নয়ন এবং সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনা হবে। পরিকল্পনার ফলে একই কাঠামোর আওতায় সার্বিক সমন্বিত আকারে সকল খাতে এর সুনির্দিষ্ট পলিসি ও প্ল্যান এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটবে। এতে সীমিত সম্পদের মধ্যে কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবেলায় কর্মসূচীসমূহ আরও যৌক্তিক উপায়ে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হবে। অন্যদিকে ভূমি উদ্ধার, রক্ষা এবং ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে সহায়তা দেবে নেদারল্যান্ডস। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও নেদারল্যান্ডস সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং নেদারল্যান্ডসের অবকাঠামো ও পরিবেশমন্ত্রী মেলেনি সিউলতাজ ভান হাওয়েল স্বাক্ষর করেন।
×