ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিডিপিতে যুক্ত হচ্ছে না ১১ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৭ জুন ২০১৫

জিডিপিতে যুক্ত হচ্ছে না ১১ হাজার কোটি টাকা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ প্রাণিসম্পদ এবং রাবার ও চা-বাগানসহ গাছগাছালি থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে অবদান রাখলেও তা থাকছে হিসেবের বাইরেই। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যুক্ত হচ্ছে না ১০ হাজার ৯০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার হিসাব। প্রাণিসম্পদ খাত অর্থাৎ গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি এবং চা, রাবারসহ ফলদবৃক্ষের বাগানে বেসরকারী খাতের অবদান জিডিপির শূন্য দশমিক ৮১ ভাগ এবং মোট বিনিয়োগের ৩ দশমিক ৬৩ ভাগ। এ হিসাব মাংস উৎপাদন এবং কাঠ জাতীয় বৃক্ষে বেসরকারী বিনিয়োগক বাদ দিয়ে করা। অর্থনীতিতে নতুন নতুন খাতের অবদান খুঁজে বের করার অংশ হিসেবে এসব তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সার্ভে অন প্রইভেট সেক্টর গ্রোস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফরমেশন ইন কাল্টিভেটেড বায়োলজিক্যাল রিসোর্স ২০১৪ শীর্ষক এক জরিপের প্রতিবেদনে এ হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে। বিবিএস জানায়, জরিপ পরিচালনার জন্য চার হাজা বাড়ি (যাদের গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে), ৭৯৮টি ফার্ম, ৫৮টি চা বাগান এবং ৫৮টি রাবার বাগানকে স্যাম্পল হিসেবে নেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের ফলাফলে বলা হয়েছে, মোট যে পরিমাণ অর্থের হিসাব জিডিপির বাইরে থাকছে তার মধ্যে পরিবার ভিত্তিক বছরে পশুপালন থেকে ৯ হাজার ৫৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, পরিবার ভিত্তিক গাছপালা থেকে ১ হাজার ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, খামারভিত্তিক পশু পালন থেকে ২৯৮ কোটি ৮০ লাখ, চা-বাগান থেকে ৯ কোটি ৮০ লাখ এবং রাবার বাগান থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী মোট গরুর সংখ্যা (পরিবার এবং খামার মিলে) ২ কোটি ৮২ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ গরু (পরিবারের হিসাব অনুযায়ী) এক কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার এবং মহিলা গরু রয়েছে এক কোট ৭২ লাখ ১৩ হাজারটি। সব মিলে দেশে মহিষের সংখ্যা হচ্ছে ৫৫ লাখ ১৭ হাজার। এর মধ্যে (শুধু পরিবার ভিত্তিক) পুরুষ মহিষ ২০ লাখ ৬৭ হাজার এবং মহিলা মহিষ ২০ কোটি ৮৫ লাখ। দেশে মোট ছাগল রয়েছে এক কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার। ভেড়ার সংখ্যা হচ্ছে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার। এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হিসাব বের করেছে বলেই সরকার ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বপ্ন দেখছে। এটি আমাদের বড় অর্জন। আগামীতে অপ্রচলিত যেসব খাত অর্থনীতিতে অবদান রাখছে সেসব খাতের হিসাব বের করে জিডিপির হিসাবে যুক্ত করা হবে। তিনি জানান, সফটওয়্যার রফতানি, উৎপাদন এবং অর্থনীতিতে এর অবদান কত এ বিষয়ে এখনো কোন জরিপ পরিচালনা হয়নি। বিবিএস শিঘ্রই সফটওয়্যার বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করবে। এভাবেই দেখা যাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে গেছে। কানিজ ফাতেমা আরও বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রকাশ করতে চায়। এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য যাতে নিয়মিত পাওয়া যায় সে প্রচেষ্টা পরিসংখ্যান ব্যুরো চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য যত দ্রুত সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। এখন থেকে শ্রমজরিপ সংক্রান্ত তথ্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে দেয়া হবে বলেও তিনি জানান। প্রাণিসম্পদ ও গাছপালা সংক্রান্ত জরিপের কর্মসূচী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল খালেক জানান, চাষকৃত জৈবিক সম্পদ এ বেসরকারী খাতের অবদানকে এখন পর্যন্ত জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু জাতিসংঘ প্রণীত সিস্টেম অব ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টস ২০০৮-এর ভিত্তিতে জিডিপি প্রণয়ন করতে হলে চাষকৃত জৈবিক সম্পদ এ বেসরকারী খাতের অবদানসহ বাংলাদেশকে আরও দুটো খাতকে হিসাবের আওতায় আনতে হবে। খাত দুটো হলো বিনোদন ও সাক্ষরতা এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার খাত। তিনি জানান, বিনোদন ও সাক্ষরতাখাতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত জরিপ কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। অপরদিকে, কম্পিউটার সফটওয়্যার খাতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত জরিপকাজ আগামীবছর থেকে শুরু হবে। এই জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ ও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পরিসংখ্যান ব্যুরোর ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টটিং উইং। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও-এ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সফিকুল ইসলাম, এম এ মান্নান হাওলাদার এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ মহাপরিচালক বাইতুল আমিন ভুঁইয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়জেদ। সংক্ষিপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করেন কর্মসূচী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল খালেক।
×