ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কঠিন প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তান- পারবে তো বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৬ জুন ২০১৫

কঠিন প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তান- পারবে তো বাংলাদেশ?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ লড়াইয়ের প্রথম পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। তাদের ৩-১ গোলে হারিয়েছে কিরগিজস্তান। এবার ক্রুইফের শিষ্যদের মোকাবেলা করবে ‘দ্য ক্রাউন’ খ্যাত এবং ১৩৯ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী তাজিকিস্তান। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তাজিকিস্তানের মোকাবেলা করবে ১৬৬ র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ। তাজিকিস্তান র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ২৭ ধাপ। বোঝাই যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে জেতাটা প্রায় অসম্ভবই। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও তাজিকিস্তান ফিফা স্বীকৃত ৬ ম্যাচে পরস্পরের মোকাবেলা করেছে। তাজিকিস্তান জিতেছে ৪ ম্যাচ, বাংলাদেশ ১টি। ড্র হয়েছে একটি ম্যাচ। এই ম্যাচটিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন বাংলাদেশের ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। বাংলাদেশের জন্য না হোক, ক্রুইফের জন্য ম্যাচটি হতে যাচ্ছে ‘এসিড টেস্ট।’ কেননা, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তাজিকিস্তানের সঙ্গে জিততে না পারলে বিদায় করে দেয়া হবে ক্রুইফকে! বাংলাদেশ-তাজিকিস্তান ম্যাচ উপলক্ষে সোমবার বাফুফে কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান আহমেদ অমিত, দুই দলের কোচ, অধিনায়ক ও ম্যানেজার। ক্রুইফ বলেন, ‘আজ আমাদের একটি বড় সুযোগ পয়েন্ট পাওয়ার। তাদের সম্পর্কে যে ধারণা পেয়েছি তাতে বুঝতে পেরেছি তাদের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা সহজ হবে না। তারা কঠিন দল। জর্দানের বিপক্ষে তাদের ম্যাচ ভিডিও দেখেছি। তাদের প্রতি বিভাগই ভাল। শারীরিকভাবেও তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমি মনে করি আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ এই ম্যাচ নিয়ে। তবে আমি মনে করি এটি ফুটবল। এখানে সবই সম্ভব। আমরা জয়ের চেষ্টা করব। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করলে ম্যাচ জেতাও সম্ভব।’ যোগ করেন ক্রুইফ। বাংলাদেশ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘আগামীকালকের (আজ) ম্যাচে আমরা শতভাগ দিতে চেষ্টা করব তা বলব না, আমরা নিজেদের শতভাগই দেব। গত ম্যাচের ভুলগুলো যেন এই ম্যাচে না হয় সেদিকে সবাই খেয়াল রাখব।’ মামুনুল আরও বলেন, ‘একটা ম্যাচ হারলে আমরা সারারাত ঘুমাতে পারি না। মানসিক কষ্টে থাকি। তবে সেই হার থেকে নিজেদের মধ্যে জয়ের তাড়নাটাও বাড়ে। এ ম্যাচে জয়ের জন্য আমরা মানসিকভাবে উজ্জীবিত আছি।’ গত ম্যাচে হারের পর কী কী পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুল বলেন, তাজিকিস্তানের ম্যাচ ভিডিও দেখে ১৩/১৪ খেলোয়াড় সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন কোচ। তাদের কোন কোন খেলোয়াড় ভাল, তাদের ভিডিও দেখে মুভমেন্টগুলো লক্ষ্য করে কৌশল নির্ধারণ করেছেন। তাজিকদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে অনেক গবেষণা করে শিষ্যদের নিজেদের দায়িত্বটা বুঝিয়ে দিয়েছেন ডি ক্রুইফ। এসব ম্যাচে কোন কোন পজিশনে ফাউল করা যাবে না তার শিক্ষাও দিয়েছেন। তাই এই ম্যাচে ভুল করলে সেই দায়িত্বটা খেলোয়াড়দের যার যার নিজের এমনটাই অভিমত দলীয় অধিনায়কের, ‘খেলোয়াড়দের দেশকে কিছু দিতে হবে। দলীয় পারফর্মেন্স ছাড়া ভাল ফল সম্ভব নয়। তা দলের সবাইকে যার যার পজিশনে ভাল খেলে দেশের জন্য কিছু করতে হবে।’ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নেয়ার আগে সিরিয়ার সঙ্গে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে তাজিকিস্তান। সেই ম্যাচে ৩-২ গোলে হেরেছে তারা। আর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে জর্দানের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছে তাজিকিস্তান। তবে বাংলাদেশের মাটিতেও জয় পেতে আত্মবিশ্বাসী তাজিকিস্তানের কোচ মুখসিন মুখামাদিয়েভ, ‘বাংলাদেশ তাদের নিজেদের মাটিতে আগের ম্যাচটি হেরেছে। তবে তারা সহজ দল নয়। তাদের হারানো কঠিন হবে। ইনশাল্লাহ আজ ম্যাচে আমরাই জিতব।’ খারাপ আবহাওয়া ম্যাচে সমস্যার কারণ হবে না বলে মনে করছেন তাজিক কোচ, ‘আবহাওয়া গরম হোক কিংবা বৃষ্টি হোক সেটি বিষয় না। সমস্যা হলে দুই দলেরই হবে।’ বাংলাদেশ আসার আগে তাজিকরা একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। সিরিয়ার কাছে সেই ম্যাচে তারা হেরেছে ৩-২ গোলে। বাংলাদেশ যে ৬ বার তাজিকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছে তার চারটিই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ। ২০০৩ সালের ২৬ নবেম্বর ঢাকায় সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ২-০ গোলে। বিশ্বকাপের প্রাক বাছাই পর্বের ফিরতি ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছর ৩০ নবেম্বর দুশানবেতে। ফল ছিল একই। ২০০৭ সালের ৮ অক্টোবর বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের হোম ম্যাচে তাজিকিস্তানকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তবে ২৮ অক্টোবর দুশানবেতে এ্যাওয়ে ম্যাচে বাংলাদেশকে হারতে হয় ৫-০ গোলে। এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে দুবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-তাজিকিস্তান। একবার করে জিতেছে দুই দেশ। ২০০৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে ৬-১ গোলে হারিয়েছিল তাজিকিস্তান। ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কলম্বোয় অনুষ্ঠিত এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে তাজিকিস্তানকে ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। গোল করেছিলেন মিশু এবং এনামুল। সর্বশেষ সাক্ষাতে জয়। এবার ঘরের মাঠে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে দুঃস্বপ্নটা ভুলে বাংলাদেশ কি পারবে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ধারা তৈরি করতে? বাংলাদেশ জাতীয় দল তাদের সর্বশেষ জয় পেয়েছিল গত ৬ ফেব্রুয়ারি, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’ ফুটবলের সেমিতে তারা ১-০ গোলে হারিয়েছিল থাইল্যান্ড যুবদলকে। তারপর তিন ম্যাচ ধরে জয়হীন তারা? আজ কী তারা পারবে আবারও জয়ের ধারায় ফিরতে?
×