ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জাতীয় সংলাপ আজ

পাঁচ বছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৫ জুন ২০১৫

পাঁচ বছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০) ৮ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যমাত্রা ধরে চূড়ান্ত করা হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন শুরুর বছরে অর্থবছর ২০১৬ তে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে ৭ শতাংশ, ২০১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০১৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অর্জন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া হিসেবে আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় সংলাপ। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংলাপে মূল পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করবেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সংলাপে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সাবেক উপদেষ্টা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ও প্ল্যান অব ইকনোমিস্টের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, এটি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন ধাপে কার্যক্রম শেষ হলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক অনুমোদন দেয়া হবে। শীঘ্রই এই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানান, ছয়টি বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। এগুলো হচ্ছে- কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠন, বিদ্যুত, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ, আইসিটি-স্বাস্থ্য-শিক্ষাসংক্রান্ত সেবা রফতানিতে সুনির্দিষ্ট নীতিকৌশল প্রণয়ন, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন এবং রফতানির গতিশীলতা আনতে পণ্যের বৈচিত্র্যায়ন। সূত্র জানায়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্য লক্ষ্যগুলো হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি বর্তমানের (২০১৫ সাল) ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। মোট বিনিয়োগ বর্তমানে জিডিপির ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে আগামী পাঁচ বছরে জিডিপির ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। জাতীয় সঞ্চয় বর্তমানে জিডিপির ২৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে জিডিপির ৩২ দশমিক ১ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। ভোগ বর্তমানে জিডিপির ৭৭ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে পাঁচ বছরে জিডিপির ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির জন্য কাজ করছে একটি জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি। এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ২০০৯ সালের ২৬ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভার সিদ্ধান্ত ১০.৩ অনুযায়ী সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগকে (জাতীয় দারিদ্র্য ফোকাল পয়েন্ট) প্রয়োজনীয় উপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের এ স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সদস্য রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সিনিয়র সচিব বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, সচিব পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা এ কমিটির সদস্য রয়েছেন সেগুলো হচ্ছে, ভূমি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, বিদ্যুত বিভাগ, সড়ক বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং সদস্য সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ। সূত্র জানায়, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘাটতিসমূহ এবং ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। একই সঙ্গে অতি দারিদ্র্য দূরীকরণের বাস্তবসম্মত উপায় গ্রহণ, দীর্ঘ ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ওপর জোর দেয়া, দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শস্য বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সঞ্চয়, বিনিয়োগ, সরকারী আয় ও ব্যয়, ঘাটতি অর্থায়ন, বৈদেশিক সহায়তা, সরকারী-বেসরকারী খাতের ভূমিকা, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও সংস্কারের ধরন বিষয়েও নতুন পরিকল্পনা দলিলে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়িত করা। রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চায় বর্তমান সরকার। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কর্মক্ষম সব বেকার ও প্রচ্ছন্ন বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথমসারির উন্নত দেশগুলোর কাতারে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যে সামাজিক খাতের সাফল্য ধরে রাখতে গণমুখী কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৩ বছরে দেশে যত লোক দারিদ্রমুক্ত হয়েছে তার প্রায় ৪৫ শতাংশ ঘটেছে গত পাঁচ বছরে। এই সময়ে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ দশমিক ৩ বছর হয়েছে। এছাড়া লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমান শীর্ষে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর লক্ষ্যভিত্তিক সম্প্রসারণ দারিদ্র্য হ্রাসে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
×