ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ হতোদ্যম বিএনপি হতাশ জাতীয়তাবাদের প্রবাসী সংস্করণ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৫ জুন ২০১৫

সিডনির মেলব্যাগ ॥ হতোদ্যম বিএনপি হতাশ জাতীয়তাবাদের প্রবাসী সংস্করণ

প্রবাসে অকারণে সোচ্চার আর মূলত জামায়াতঘেঁষা বাংলাদেশী অংশটি কেমন যেন মিইয়ে পড়েছে। তাদের হাঁকডাক হাসিনাবিরোধিতার আড়ালে-আবডালে আসলে যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতা, তার মূলে আঘাত হেনেছেন খালেদা জিয়া। এটা দুনিয়ার নিয়ম, আপনি যদি একবার পরনির্ভর হন বা হতে শুরু করেন, সহজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন না। বিএনপির এমন দুঃসময় আগে কখনও আসেনি। তারা সবসময় সুযোগ কাজে লাগিয়ে গদিতে থেকেছে। মুখে বড় বড় কথা বললেও তলে তলে ভারতের সঙ্গে আপোস আর দালালি করে গেছে। সে জায়গাটা এমন জঘন্যভাবে বেরিয়ে পড়বে এটা আসলে তারা নিজেরাও বুঝতে পারেনি। কেন এটা হলো? একটা বিষয় খালেদা জিয়ার দল বুঝতে পারছে না। এখন দুনিয়াব্যাপী যে পরিবর্তন, যে ধারা, তার সঙ্গে চলতে হলে মেধার বিকল্প নেই। বলতে গেলে আমরা এখন খোলা দুনিয়ার অধিবাসী। কারও কোন কিছু গোপন নেই। সব দেশের খবরাখবর এমনকি গ্রাম-গ্রামান্তরের খবরও এসে হাজির দুয়ারে। এমন বাস্তবতায় বিএনপি কি মনে করে আগের মতো মাঠে আওয়ামী লীগ বা প্রগতিশীলতাকে ভারতের দালাল বলে বাসায় ফিরে দিল্লীর চামচামি করলে তা জনগণ টের পাবে না? যে কথা বলছিলাম, সোস্যাল মিডিয়া নামের যে বিপ্লব তার কল্যাণে মানুষ এক নিমিষে সব জানতে পারে। শুধুই জানা? ফটো, ভিডিও, অডিও মিলে দৃশ্যমান এক বর্ণিল জগত। এই জগতে বিএনপির সাদাকালো অপপ্রচার এখন ফ্যাসফেসে। যে কারণে আমাদের প্রবাসী জামায়াত-বিএনপি সমর্থকদের মুখে এখন শব্দ নেই। আগে হলে তারা বলতেন, না না সব মিথ্যা। শেখ হাসিনা আর বুদ্ধিজীবীরা মিলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপোসহীনা তুলনাহীনা যাবেন মোদির কাছে? বরং মোদিই ঢাকার যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে মাদাম জিয়াকে পেয়েছিলেন, তাও দশ মিনিটের জন্য। এই যে আনন্দবাজার লিখেছে, হাতের ফর্দ বা নালিশের তালিকাটাও পুরো পড়ার সময় পাননি, সেটাকে কি বলা হতো? বলত, ভারতকে তিনি শাসিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, এই দশ দফার বাইরে কোন কথা হবে না। গ্রামগঞ্জের নিরীহ সরল মানুষদের সে গল্প শোনাতেন বীর নেতারা। সেদিন এখন গত। এখন আর মিছিল-মিটিংয়েরও দরকার পড়ে না। হাতে হাত ধরে রাস্তায় দাঁড়ানোর নতুন কায়দাটি ছাড়া মিটিংয়ের আসলে দরকার কোথায়? একমাত্র বাম নামে পরিচিত পুরনো রীতিতে আচ্ছন্ন নতুন ধারা বা মতবাদ গ্রহণে অস্বীকৃতদেরই তার দরকার পড়ে। করবেইবা কি? তাদের জনগণের সামনে আসার ঐ একটাই পথ। কিন্তু তারা মার খায়নি, মার খেয়েছে বিএনপি। কারণ বামদের শক্তি কমবেশি যাই হোক, তারা জাতীয়তাবাদীদের মতো আকছার মিথ্যায় বসবাস করে না। এখন তাই সময় বড় কঠিন। বেগম জিয়ার হাতের ফর্দ কি ছিল, মোদি কি বলেছেন, সব বেরিয়ে আসছে। তাও ভারতীয় মিডিয়ায়। ফলে তারা একথা বলতে পারছে না, এসব আওয়ামী অপপ্রচার। বিদেশে যেসব বাঙালী মনে করত একমাত্র বিএনপিই পারবে প্রতিবেশীকে শায়েস্তা করতে, যাদের চিন্তা-ভাবনায় যুক্তি বা সমঝোতার চাইতে আক্রোশ আর সাম্প্রদায়িকতা অধিক, তারা থ বনে গেছে। এমন নির্লজ্জ ভারতপ্রেম তো রাধাকৃষ্ণের প্রেমকেও হার মানায়। স্বয়ং রাধাও এমন মুচলেকা দিয়ে প্রেম করেনি। তারা আগ বাড়িয়ে এও বলেছে, আর কোনদিন ভারতবিরোধী রাজনীতিও নাকি করবে না। কি সাংঘাতিক কথা। কোন সম্পর্কের কি আসলেই কোন সঠিক সময় আছে? না। একবারের মিত্র সারাজীবনের মিত্র থাকে দুনিয়ায়? ভারত যদি সত্যি কোনদিন বৈরী হয় বা বৈরী হয়ে ওঠে, তখন কি হবে? তখন কি আমরা সবাই ভারতবিরোধী হতে বাধ্য হব না? বিএনপি সেটাতেও নাকে খত দিতে রাজি। কথায় বলে, ‘অতি প্রেম প্রেম নয়, চিরদিন তাহা নাহি রয়।’ মোদি তা জানেন। আর জানেন বলেই খালেদা জিয়াকে এমন সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যা তাঁর জন্য তো বটেই, আমাদের জাতির জন্যও অস্বস্তিকর। এই অস্বস্তি যদি শেখ হাসিনা তৈরি করতেন আজ সারাদেশে একশ্রেণীর মানুষ নিন্দা আর সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিতেন। বাস্তবে একদিকে নীরব বিএনপি সমর্থকরা, আরেকদিকে সরব কথিত সুশীলরাই এদেশের মূল সমস্যা। ঘরে-বাইরে যখন নির্বাক বিএনপি তখন এরা নানাভাবে বিষয়কে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে আবারও সামনে আসতে চাইছে। খেয়াল করবেন, এদেশের এক নামকরা কবিপুত্র যার অন্তরে রাজাকারী, বাইরে প্রগতি, কিভাবে বিষয়গুলো গেলানোর চেষ্টা করে থাকে। এদের ওঠবস বা ভালমন্দের ভাগিদার কিন্তু তাদের কথিত দুশমনরাই। যে সাম্প্রদায়িক ব্যাধি এদের অন্তর ছেয়ে রেখেছে তা খোলাসা করে বলার শক্তিও এদের নেই। বিস্ময়ের সঙ্গে দেখি, সুশীল নামধারী এরা মুখ ফুটে বলতে পারে না বলে কত কৌশলে কত বাজে কথা বলায়। যেমন ধরুন, মোদি যখন সফরে তখন এক রিক্সাওয়ালার কাল্পনিক চরিত্র ফেঁদে বলালেন, আমি যেমন রিক্সাওয়ালা, সেও চাওয়ালা ছিল। যত দোষ নন্দঘোষ বলেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এত উষ্মা। খালেদা জিয়ারা পাওয়ারে থাকলে কি তাঁকে শুধু ডাল-ভাত খাইয়ে বিদায় করতেন? সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু এসব সুশীলরা তা করে না। শুধু কুৎসা আর নিন্দা ছড়ায়। বেগম জিয়া যে জামাই আদরে ধুতি উপহার দিলেন তাঁর বেলায় চুপ কেন ভাই? তাই আমাদের আসল দুশমন চিনতে হবে। খালেদা জিয়া ও তাঁর দলের নমনীয় মনোভাবের পরই শুধু বিএনপি করার কারণে সেরা সাহিত্য পুরস্কার হাতিয়ে নেয়া মানুষও বলছে, বিএনপিতে নাকি ‘র’-এর এজেন্ট ঢুকে পড়েছে। মূল বিষয়টা দেখুন, ভারতবিরোধিতার নামে সাম্প্রদায়িকতা আর বিদ্বেষ। এসবের মুখে ছাই দিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে বিদেশী প্রভু আর লবিং দিয়ে নমনীয় করতে না পারায় বিএনপি নেমেছে কৌশলের পথে। কিন্তু চিড়ে ভেজেনি। বরং বিদেশী মিডিয়ায় নগণ্য হয়ে গেছে আসল চেহারা। এখন তাই দেশের মতো বিদেশেও এরা ম্লান আর নিষ্প্রভ। তারপরও আমাদের সাবধান হতে হবে। [email protected]
×