ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমুদ্র সম্পদ আহরণ-ভারতের পর চীনের সমঝোতা চুক্তির প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৫ জুন ২০১৫

সমুদ্র সম্পদ আহরণ-ভারতের পর চীনের সমঝোতা চুক্তির প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগরের সম্পদ আহরণে সহযোগিতা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে চীন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এ বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি হওয়ার পরেই চীন এই প্রস্তাব দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সফরের দুদিন পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে চীন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদ আহরণে সহযোগিতা দেয়ার লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই সমঝোতা চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অন ওশেনোগ্রাফি সমুদ্র সম্পদ নিয়ে গবেষণা ও আহরণে কাজ করবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের পর ঢাকা-দিল্লীর যৌথ ঘোষণায়ও বলা হয়েছে দুই দেশ যৌথভাবে সমুদ্র সম্পদ আহরণে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মোদির ঢাকা সফরের পর গত ১০ জুন আনুষ্ঠানিক সমুদ্র সম্পদ আহরণের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে চীন। তবে এর আগে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে চেয়েছিল। তখন চীন খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। অবশ্য মোদির সফরের পরেই বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, চীন বাংলাদেশের শক্তিশালী উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের সঙ্গে সব সময় সুসম্পর্ক রাখতে চায় চীন। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রেখে চলেছে চীন। এসব দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলা নিষ্পত্তির পরে বাংলাদেশ এখন সমুদ্র সম্পদ আহরণের দিকে বিশেষ মনোযোগী। দুই দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল, ২০০ নটিক্যাল মাইলের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার অধিকার পেয়েছে। সে কারণে সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। সে কারণে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমুদ্র সম্পদ আহরণে সহযোগিতা পেতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের সম্পদ আহরণে ইতোমধ্যেই চীন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে কোন দেশের সঙ্গেই এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা চুক্তি হয়নি। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে গেলেও তখন দেশটি সাড়া দেয়নি। অবশেষে ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির দুই দিন পরে চীন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। কূটনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর অঞ্চল ঘিরে চীন ও ভারত এখন সক্রিয়। দুই দেশই এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এশিয়ার উদীয়মান এই দুই শক্তি বিভিন্ন দেশকে তাদের পাশে রাখতে চাইছে। আর এই কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায় দুই দেশই। বাংলাদেশও সমানভাবে এই দুই দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। মোদির ঢাকা সফর নিয়ে রয়টার্সের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ফেঁপে ওঠা প্রভাব ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মোদির বাংলাদেশ সফর এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমানো তৎপরতারই অংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব কমাতে মোদির তৎপরতা সত্ত্বেও সামরিক সরঞ্জামের জন্য হয়ত বেজিংয়ের ওপরই নির্ভরশীল থাকবে ঢাকা। কয়েক দশক ধরেই চীনের সঙ্গে ভারতের অস্বস্তিকর সম্পর্ক চলছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে বেজিংয়ের সামরিক সহযোগিতায় ভারত ক্ষুব্ধ। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে বন্দর উন্নয়নে অর্থায়ন করে ভারত মহাসাগরজুড়ে চীন যে কথিত বলয় তৈরি করছে, এ নিয়ে ভারতও উদ্বিগ্ন।
×