ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রভাবশালীরা ব্যর্থ করে দিল পাহাড়ী এলাকার উচ্ছেদ অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৫ জুন ২০১৫

প্রভাবশালীরা ব্যর্থ করে দিল পাহাড়ী এলাকার উচ্ছেদ অভিযান

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে প্রভাবশালী মহলের জন্য পাহাড় ঘেঁষে বসতি স্থাপনকারীদের উচ্ছেদ অভিযান বিঘিœত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাসকারীদের প্রশাসন যখনই উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় তখন অবৈধ ঘরের মালিক ও কেয়ারটেকাররা অসহায় দরিদ্রদের এই বলে হুমকি দেয় যে ‘একবার এই জায়গা ছেড়ে গেলে আর ফিরে আসা যাবে না।’ রবিবার মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলসহ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালান হয়। বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এতে খুলশী থানা পুলিশসহ শতাধিক পুলিশ অংশ নেয়। মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি ঘর উচ্ছেদের পর অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হন কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এসব অবৈধ নির্মাণে বাধা না দেয়ায় ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। এই বছর চট্টগ্রামে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ঘেঁষে গড়ে উঠা ৬৬৬টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন তৎপর হলেও শেষ পর্যন্ত আমলাদের হস্তক্ষেপ ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের যোগসাজশের কারণে টাংকির পাহাড় ও মতিঝর্ণা এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের সরিয়ে নেয়া যায়নি। ভূমিদস্যুরা ১১টি পাহাড় এলাকা থেকে প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকা ভাড়া আদায় করছে। এর একটি অংশ চলে যাচ্ছে পুলিশ, জেলা প্রশাসন, ওয়াসা, চউক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতে। এর পেছনে রয়েছে সরকারী গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহার। ফলে কেউ যেতে চায় না অন্যত্র। জানা গেছে, চট্টগ্রামে ১১টি পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে লালখান বাজারস্থ মতিঝর্ণা ও ওয়াসার টাংকির পাহাড়। সেখানে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত সিঁড়ির ন্যায় পাহাড় কেটে পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ টাংকির পাহাড়ে রয়েছে দ্বিতল ভবনও। দুই থেকে আড়াই ফুট সরু সুরঙ্গের মতো চলাচলের পথ রেখেই এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বাধা দেয়ার কেউ নেই। কারণ যারা বাধা দেয়ার সংস্থা তারাই মাসোয়ারায় ডুবে রয়েছে। জিলাপীর প্যাঁচের ন্যায় এ পাহাড়ে গড়ে উঠেছে তিন হাজারেরও বেশি পরিবারের আবাস স্থল। বিদ্যুত, গ্যাস, পানির সব ধরনের উপযোগিতা বিদ্যমান থাকায় এ পাহাড় ছেড়ে কেউ অন্যত্র যেতে চায় না। কম ভাড়ার কারণে এখানে বসতি ক্রমেই বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন তথা পাহাড় রক্ষা কমিটিসহ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে কোন কমিটিই শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকে না। তবে কাগজে কলমে কমিটির মোটা কথাগুলো নথিভুক্ত থাকায় ভূমিদস্যু ও পাহাড় খেকোরা কমিটির সদস্যদের ম্যানেজ করেই পাহাড়ের পাদদেশে ও চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে পুঁজি করেই ভাড়া বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা জানিয়েছেন, প্রশাসন তাদের সরে যেতে বলে, কিন্তু পরক্ষণেই জমিদারের কেয়ারটেকার বা জমিদার নিজেই হুমকি দেয়। আরও অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে পুঁজি করেই ভাড়া বাণিজ্য গড়ে তোলায় প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকদের মাসোয়ারার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। তবে পাহাড় ধসের নেপথ্যে রয়েছে ভূমিদস্যুদের কালো হাত। ভূমিদস্যুরাই মূলত পাহাড় কেটে ভাড়া ঘর নির্মাণ করছে। এসব ভূমিদস্যু ভাড়া বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চূড়া পর্যন্ত মাটি কেটে গৃহ নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা ভূমিদস্যুদের পাহাড় কর্তনে সহযোগিতা করছে। সে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার আমলারা। ঝুঁকিপূর্ণ এ টাংকির পাহাড়ে একের পর এক স্থাপনা গড়ে উঠলেও চউকের অথরাইজেশন বিভাগ ও নির্মাণ কমিটি বাধা না দেয়ায় অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
×