ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মা ডরোথির জীবন সংগ্রাম ব্যবহার করতে চান হিলারি

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৫ জুন ২০১৫

মা ডরোথির জীবন সংগ্রাম ব্যবহার করতে চান হিলারি

আমার পাশে মা আছে। একটু ভুল বলা হলো। মা নয়, মায়ের স্মৃতি। আর সেই স্মৃতিটুকু হাতিয়ার করেই এবার বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী মসনদ দখলের লড়াইয়ে নামছেন হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন। হিলারি আর তার মা ডরোথি হাওয়েল। দু’জনের জীবন-কাহিনীতে আসমান-জমিন ফারাক। স্বাচ্ছন্দ ও সাফল্যে মোড়া হিলারির জীবন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় চোস্ত ছিলেন। একের পর এক স্কলারশিপ পেয়ে নামজাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছেন। হিলারির বাবা ছিলেন এক সফল ব্যবসায়ী। তিনিও হিলারির প্রতিটি পদক্ষেপে মেয়েকে সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছেন। হিলারিকে বলেছেন, তুমি মেয়ে বলে থেমে থেকো না। এগিয়ে চলো। আকাশ ছুঁতে হবে। তারপর একে একে ইয়েল ল্য কলেজ থেকে আইন পাস, বিল ক্লিন্টনের সঙ্গে বিয়ে, আট বছরের জন্য আমেরিকার ফার্স্ট লেডি, দাম্পত্য ঝড়-ঝাপ্টা কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানো, প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে বারাক ওবামার কাছে হেরে গেলেও তার ক্যাবিনেটে চার বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে থেকে যাওয়া। হিলারির এই নজরকাড়া জীবনে উজ্জ্বল উপস্থিতি তার মা ডরোথির। যে ডরোথির জীবনের অনেকটাই কিন্তু তিক্ততায় মোড়া। ডরোথি হাওয়েলের বয়স তখন সবে আট। মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে ঠাকুরদা-ঠাকুমার সঙ্গে থাকতেন ডরোথি ও তার বোন। কষ্টের সেই শুরু। সকালে একগ্লাস দুধ তো দূরের কথা, সারা দিন ঠিকমতো খাবারই জুটত না দুই বোনের। কয়েক দিন বাদে ডরোথিদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দেন তাদের অত্যন্ত রক্ষণশীল ঠাকুরদা। নিজের চেষ্টায় আর এক সহৃদয় শিক্ষকের সাহায্যে কোন রকমে স্কুলের গণ্ডি পার করতে পেরেছিলেন ডরোথি। শেষ পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে ঠাকুরদার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন ডরোথি। সপ্তাহে তিন ডলার পারিশ্রমিকে পরিচারিকার কাজ করতেন। শিকাগোয় ফিরে মায়ের সঙ্গে ফের থাকতে চাইতেন তিনি। কলেজে ভর্তি করার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে শিকাগোয় ডেকে পাঠান মা। কিন্তু কলেজে পাঠানো তো দূরের কথা, মাও তাকে ব্যবহার করতেন ঘরের কাজকর্ম সামলাতে। পরে একটা কেরানির চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিলেন ডরোথি। মায়ের এই জীবনসংগ্রামের কাহিনীই এবার ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে চান হিলারি। তার ঘনিষ্ঠ শিবির জানাচ্ছে, হোয়াইট হাউসে একটি আদর্শ পরিবারকে দেখতে চায় মার্কিন আমজনতা। মধ্যবিত্ত স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছিলেন বারাক ওবামা। কিন্তু প্রতিপত্তি ও সম্পদের নিরিখে এখন আমেরিকার প্রথম সারির পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লিন্টনদের নাম। বিল ক্লিন্টনের বিপুল তহবিল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার তাদের মেয়ে চেলসির ব্যবসা বাড়ানোয় ক্লিনটন-হিলারির প্রতিপত্তি ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সেই নিয়েও নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মার্কিনীদের কাছে পৌঁছতে তার মায়ের কাহিনীই সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছেন হিলারি। শনিবার তার প্রচারের প্রথম দিন থেকেই ‘সাধারণ মানুষ’ ডরোথির গল্প শুনিয়ে তিনি ভোটদাতাদের বোঝাতে চান, সম্পদ-প্রতিপত্তির কোন গজদন্ত মিনারে বাস করে না ক্লিন্টন পরিবার। তারা সাধারণ মানুষের কাছের লোক। লড়াই করেই এগিয়েছেন তারা।
×