ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য উচ্চতায় তামিম ইকবাল

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৪ জুন ২০১৫

অনন্য উচ্চতায় তামিম ইকবাল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এখন শুধু বাকি থাকল একটিই ফরমেট। টি২০ ক্রিকেট। ওয়ানডের পর টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক হয়ে গেছেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। ফতুল্লায় সফরকারী ভারতের বিরুদ্ধে বৃষ্টিবিঘিœত টেস্টে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি অবশ্য তামিমের ব্যাটিং। মাত্র ১৯ রান করেই সাজঘরে ফিরে গেছেন। তবে এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় ৭ রান যোগ হওয়ার পর তিনি এই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছেন। সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে ছাড়িয়ে গেছেন তামিম টেস্টে রান করার দিক থেকে। শুধু টি২০ ক্রিকেটে তামিমের ওপরে আছেন সাকিব আল হাসান। এখন তামিম একাধারে ওয়ানডে ও টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস, সর্বাধিক রান এবং সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক। যেখানে মাত্র একটি বিষয়ে তার চেয়ে পিছিয়ে লিটল মাস্টার ভারতের শচীন টেন্ডুলকর ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। তাদের শুধু নিজ দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস নেই। তামিমের এ অর্জনটি দেখতে এদিন হাবিবুলও ফতুল্লায় উপস্থিত ছিলেন। টেস্ট শুরুর আগেই তিনি তামিমকে বলেছিলেন,‘আমি চাই তুমি এবারই তুমি রেকর্ডটা গড়ে ফেল।’ হাবিবুল চান তামিম টেস্টে অন্তত ১০ হাজার রান করবে। সুযোগটা ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গত মাসের প্রথমদিকে হওয়া দ্বিতীয় টেস্টেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় ৫৩ রান করতে পারেননি দুই ইনিংসে। মাত্র ৪৬ রান করেছিলেন বলে এক মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত শীর্ষে উঠেছেন। শনিবার ফতুল্লা টেস্টের চতুর্থ দিনের শুরুতেই তিনি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ভারতীয় পেসার ইশান্ত শর্মার করা চতুর্থ বলে ২ রান নিয়ে তিনি হাবিবুলকে ছাড়িয়ে যান। এখন তিনি হাবিবুলের চেয়ে ১৩ রান এগিয়ে। ৪০তম টেস্টে ৩০৩৯ রান করেছেন তামিম ৭টি সেঞ্চুরি ও ১৭টি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ৩৯.৬৪ গড়ে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে না পারলেও ওই ম্যাচেই দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওই কীর্তি দেখিয়েছেন হাবিবুল। সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল অবশ্য অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছেন। ‘মিস্টার ফিফটি’ খ্যাতি পাওয়া এ ক্রিকেটার ৫০ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরি ও ২৪ হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ৩০.৮৭ গড়ে করেছিলেন ৩০২৬ রান নিয়ে। ৮ বছর ৩ মাসের কিছু বেশি সময় তিনি শীর্ষে ছিলেন। এবার আরও এগিয়ে গিয়ে শীর্ষস্থান অটুট রাখার লড়াই। অবশ্য অনেক পিছিয়ে আছেন বর্তমানে খেলা চালিয়ে যাওয়া সাকিব। তিনি ৪০ টেস্টে করেছেন ৪০.১৭ গড়ে ২৭৩২ রান। তবে এখনও ফেরার অপেক্ষায় প্রহর কাটানো আরেক ওপেনার মোহাম্মদ আশরাফুল আরেকটু এগিয়ে আছেন। আশরাফুল ৬১ টেস্টে করেছেন ২৭৩৭ রান। তামিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টেই ক্যারিয়ারসেরা ২০৬ রানের ইনিংস খেলেন। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে কোন বাংলাদেশী ক্রিকেটারের সেটাই সর্বাধিক ব্যক্তিগত ইনিংস। একাধারে ওয়ানডে (১৫৪), টি২০ (৮৮) ও টেস্ট এ তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই তার বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস রয়েছে। টেস্টে সর্বাধিক ৭টি এবং ওয়ানডেতে সর্বাধিক ৬টি করে সেঞ্চুরি রয়েছে তার। কীর্তির দিক দিয়ে তামিমের সবচেয়ে কাছাকাছি আছেন শচীন ও পন্টিং। দু’জনই নিজ নিজ দলের টেস্ট এবং ওয়ানডের সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরির মালিক। তবে এ দুই ফরমেটে এ দু’জন নিজ দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলতে পারেননি। নিজের রেকর্ডটা দীর্ঘদিন পর মুছে গেলেও খুশিই হয়েছেন বর্তমানে জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল। তিনি বলেন, ‘আমি মাঠে এসেছি তামিম আমার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে সেটা দেখার আশায়। আমি কখনও চাইনি এটা করতে সে বেশি দেরি করে ফেলুক। দেখে ভাল লাগল তামিম আমাকে ছাড়িয়ে গেছে। এখন আমি চাই টেস্টে তামিম ১০ হাজার রান করুক। আমি সব সময়ই ভেবেছি সাকিব কিংবা তামিমের মধ্যে যে কোন একজন আমার সর্বাধিক রানের রেকর্ডটা ছাপিয়ে যাবে।’ তবে এখন হাবিবুলের মনে হচ্ছে সুযোগ-সুবিধার অভাবে অনেক রান করা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সে সময়টাতে আমি যে রকম খেলোয়াড় ছিলাম হয়ত ৬-৭ হাজার রান করতে পারতাম। তখনকার চেয়ে এখন সুযোগ-সুবিধা অনেক ভাল। এ ছাড়া আমি অনেকবার সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও তা পাইনি। আমি হয়ত ২৪ অর্ধশতকের মধ্যে বেশ কয়েকটি সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারতাম। তাছাড়া তখন দলে ঢোকার জন্য এখনকার মতো এত বেশি প্রতিযোগিতা ছিল না। সে কারণেও রান করার ক্ষুধাটা হয়ত কম ছিল। আমার আশপাশে শুধু আশরাফুলই ছিল।’
×