ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৪ জুন ২০১৫

জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

সমুদ্র হক ॥ দেশকে উন্নত ধনী দেশগুলোর কাছাকাছি পৌঁছাতে সরকারের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের আওতায় আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দেশে এই প্রথম বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী শুরু হচ্ছে। তবে তার আগেই বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) মহাপরিচালক একাডেমির সকল পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে শুদ্ধাচার সংশ্লিষ্ট সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। মহাপরিচালক এম এ মতিন ও সেন্টার ফর ইরিগেশন এ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের (সিআইডব্লিউএম) পরিচালক মাহমুদ হোসেন খান জানান, আরডিএর আওতায় যত প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চলছে তার প্রত্যেকটিতেই শুদ্ধাচার কৌশল বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরডিএর কৃষি বিভাগের পরিচালক এ কে এম জাকারিয়া বললেন, সরকারী কর্মকর্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যে ধারণা তা পাল্টাতে এবং সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে সরাসরি জবাবদিহিতার আওতায় আনার লক্ষ্যেই এই কর্মসূচী, যা সরকারের নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তিন বছর আগে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে অবমুক্ত হয়েছে। দেশের সকল মানুষ যেন সরকারী সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছ থেকে ভাল ব্যবহার ও সময়মতো কাজ বুঝে পায় এবং কোনভাবেই যেন দুর্নীতির মধ্যে জড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করাই এ কর্মসূচীর অন্যতম উদ্দেশ্য। মোটকথা জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক, এর কোন ব্যত্যয় হবে না। সূত্র জানায়, উদীয়মান ও প্রগতিশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ ঘোষিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বাংলাদেশ কয়েকটি শর্তপূরণ করে। এ জন্য বর্তমান সরকারকে জাতিসংঘ পুরস্কৃত করেছে। দেশকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একবিংশ শতকের প্রথম দশকের মধ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই দেশ থেকে ক্ষুধা বেকারত্ব বঞ্চনা অশিক্ষা দারিদ্র্য দূর করতে ভিশন-২০২১ (রূপকল্প ২০২১) কার্যক্রম হাতে নেয়। বলা হয় দেশে বিরাজ করবে সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি। সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন মৌলিক সমানাধিকার এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। শুদ্ধাচারের পরিকল্পনার প্রধান বিষয় হলো উল্লিখিত লক্ষ্য পূরণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের আবশ্যিক কর্তব্য এবং সেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি দমন শুদ্ধাচার প্রতিপালন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য পরাকৌশল। বর্তমান সরকারের শাসনামলে গঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রণীত আইনকানুন বিধিবিধান এবং পদ্ধতি সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে। তবে কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে একটি আন্দোলন গড়ে তোলা। যাতে নাগরিকগণ সৎচরিত্রের হয়ে সরকারী কর্মচারীদের সঙ্গে যে যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করেন। যার সফলতায় রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং সমাজের প্রতিষ্ঠানসমূহে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা পায়। সরকারীভাবে বলা হয়েছে এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির সিআইডব্লিউএমের পরিচালক মাহমুদ হোসেন খান বলেন, শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ বোঝায়। এর দ্বারা একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদ-, নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্য বোঝানো হয়। ব্যক্তিপর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা। এই দলিলটিতে শুদ্ধাচারের এ অর্থই গ্রহণ করা হয়েছে। শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তেমনই পরিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক দল গণমাধ্যম বেসরকারী সংস্থাসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানে স্থানীয় শাসনের যে ব্যবস্থা নির্দেশ করা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে গ্রামের ও শহরের স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠান যেমন ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা পরিষদ জেলা পরিষদ পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের সকলের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে হবে। বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) মহাপরিচালক এমএ মতিন স্পষ্ট করেই বলেন, সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন হওয়ার পর তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর বগুড়া আরডিএতে ভর বছর সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীর নানা ধরনের যত প্রশিক্ষণ হয় প্রতিটির সঙ্গে বিশেষ এবং আবশ্যিক বিষয় হিসাবে শুদ্ধাচার কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরডিএর কৃষি বিভাগের পরিচালক এ কে এম জাকারিয়ার সাফ কথাÑ দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিতে, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে ধনী দেশে পরিণত করতে সকল ক্ষেত্রেই শুদ্ধাচার কৌশল অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন সকল পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে শুদ্ধাচার একটি সমন্বিত কৌশল।
×