ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

থাই সেনা কর্মকর্তার আরও ৮ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

মানবপাচারের গডফাদার যুবদল নেতা সোহাগ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৪ জুন ২০১৫

মানবপাচারের গডফাদার যুবদল নেতা সোহাগ গ্রেফতার

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ অবশেষে চট্টগ্রামে গ্রেফতার হয়েছে কক্সবাজার অঞ্চল থেকে সাগর পথে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম শীর্ষ গডফাদার উখিয়া যুবদলের সহ-সভাপতি শামসুল আলম সোহাগ। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রণীত মানবপাচারকারী ৭০ গডফাদারের একজন। মানবপাচারকারী গডফাদার ও দালালদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো অভিযান শুরুর পর তিনি উখিয়া থেকে গা-ঢাকা দিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি পুলিশ থানার অদূরবর্তী হোটেল নিজামে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ তখনও জানত না এ তিনজনের মধ্যে মানবপাচারকারী চক্রের তালিকাভুক্ত অন্যতম শীর্ষ গডফাদার শামসুল আলম সোহাগ রয়েছেন। শনিবার সকালে বিভিন্ন সূত্রে পুলিশের কাছে টেলিফোন আসতে থাকে যে, হোটেল নিজাম থেকে গ্রেফতারকৃত তিনজনের মধ্যে শামসুল আলম সোহাগ নামের একজন রয়েছে যিনি মানবপাচারের অভিযোগে পুলিশের ওয়ান্টেড। কোতোয়ালি থানার ওসি জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, হোটেল নিজাম থেকে সন্দেহজনক যে ৩ জনকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয় তাদের মধ্যে মানবপাচারকারী গডফাদার শামসুল আলম সোহাগ যে রয়েছেন তা তাদের আগে জানা ছিল না। পরে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মাধ্যমে উখিয়া পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওসি জানিয়েছেন, তাকে মহানগর আইন ও ৫৪ ধারায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। চাওয়া হয়েছে ৫ দিনের রিমান্ড। তাদের এ রিমান্ড শেষ হলে আদালতের মাধ্যমে উখিয়া থানা পুলিশের রিকুইজিশন পাওয়া গেলে তাদের হাতে হস্তান্তর করা হবে। প্রসঙ্গত, গ্রেফতারকৃত শামসুল আলম সোহাগের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলা থেকে তিনি নিজেকে বাদ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। দুটি মামলায় পুলিশ তার নাম বাদ দিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিয়েছে। অবশিষ্ট একটি মামলা এখনও বিদ্যমান। এ মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি উখিয়া থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে এসে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছিলেন। শুক্রবার রাতে তাকে পাওয়া যায় হোটেল নিজামে। সঙ্গে আরও ছিল ২ জন। উখিয়া পুলিশ জানিয়েছে, শামসুল আলম সোহাগ জালিয়া পালং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাইছড়ির মোঃ ইসলামের পুত্র। তার পিতা মাত্র চার বছর আগেও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। পুত্র শামসুল আলম মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে রাতারাতি বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। মালয়েশিয়া পাচারের জন্য বেশ কটি ইঞ্জিন বোটের মালিকও হয়েছেন। এর মধ্যে সেন্টমার্টিনের অদূরে এবং কুতুবদিয়ার উপকূলে দুটি ইঞ্জিন বোট নিমজ্জিত হয়েছে। এ ঘটনার পর তিনি আরও একটি বড় আকারের ইঞ্জিন বোট নির্মাণে হাত দিয়েছেন, যেটি এখন টেকনাফ উপকূলে রয়েছে। কক্সবাজার পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত শামসুল আলম সোহাগ কক্সবাজার ও উখিয়ার লিস্টেড ৭০ শীর্ষ গডফাদারের অন্যতম একজন। এর আগে আরেক গডফাদার ধলু হোসেন কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। উখিয়ার বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, সেখানকার সোনারপাড়ার নুরুল কবির ও রেজিয়া আক্তার রেবির হাত ধরে যুবদল নেতা শামসুল আলম মালয়েশিয়ায় মানবপাচার কাজে যুক্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সেন্টমার্টিন সাগর থেকে কোস্টগার্ডের তৎপরতায় মালয়েশিয়াগামী যে ৪০ জন উদ্ধার হয় সেই ট্রলারটির মালিকও শামসুল আলম বলে জানা গেছে। বর্তমানে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি বড় আকৃতির যে ইঞ্জিন বোট নির্মাণ হচ্ছে সেটি এখন টেকনাফের সোনারপাড়া ঘাটে রয়েছে। যুবদল নেতা শামসুল আলম ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। ইয়াবা চোরাচালান ও মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত মোটা অঙ্কের অর্থে তিনি ইতোমধ্যে বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, শীর্ষ মানবপাচারকারীর গডফাদার শামসুল আলমের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় তাকে শীঘ্রই কক্সবাজারে নিয়ে আসা হবে। এদিকে মানবপাচারকারী শামসুল আলম সোহাগ চট্টগ্রামে গ্রেফতার হওয়ার খবরে সোনারপাড়া বাজারে মিষ্টি বিতরণ করেছে ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন। মালয়েশিয়ায় চাকরি দেয়ার নামে এ গডফাদারের খপ্পরে পড়ে উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজারের বহু পরিবারের অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। অপরদিকে টেকনাফ পুলিশ অভিযান চালিয়ে শনিবার ভোর রাতে এলাকার হোয়াইক্যং লম্বাবিল থেকে জাফর আলম নামের আরেক দালালকে গ্রেফতার করেছে। সে স্থানীয় মৃত বাচা মিয়ার পুত্র। এছাড়া পুলিশ সেখানকার ইয়াবা চোরাচালানে যুক্ত ও মানবপাচার করে যে অপকর্ম চালিয়েছে তাদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। থাই জেনারেল মানস কংপানের আরও ৮ কোটি টাকার সম্পদ জব্ধ ॥ সমুদ্র পথে মানবপাচার কাজে জড়িত মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ এ চতুর্দেশীয় চক্রের শীর্ষ গডফাদার থাই সেনাবাহিনীর উপদেষ্টা লে. জেনারেল মানস কংপানকে গ্রেফতার করার পর তার আরও প্রায় ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা সমমূল্যের সম্পদ জব্ধ করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও বাংলাদেশীদের পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ সেনা কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগের তদন্ত চলা অবস্থায় প্রথম দফায় ১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার নগদ টাকাসহ সম্পদ জব্ধ করা হয়। সর্বশেষ জব্ধকৃত অর্থ ও সম্পদ মিলিয়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ জেনারেলের মালিকানায় রয়েছে অঢেল জমিজমা, ট্রলার ও হোটেল মোটেল। এছাড়া তার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে যে পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে তাতে তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন মানবপাচার কাজে জড়িত থেকে এ জেনারেল এত বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক পোস্টের খবর অনুযায়ী দেশটির অর্থ পাচারবিরোধী বিভাগীয় প্রধান পুলিশ কর্নেল সিহানার্ত প্রায়ুনরাৎ জানিয়েছেন, এ নিয়ে চতুর্থ দফায় জেনারেল মানাসের সম্পদ জব্ধ করা হয়েছে। এ পুলিশ প্রধান আরও জানিয়েছেন, জেনারেল মানাসের যে অর্থ জব্ধ করা হয়েছে সেগুলো মানবপাচারকারী দালালদের মাধ্যমে তার কাছে এসেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্যাংক লেনদেনসহ তার সম্পদের পরিমাণ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে জেনারেল মানস সরাসরি মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত ৩ জুন জেনারেল মানাসের বিরুদ্ধে থাই আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর তিনি পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তীতে থাই সেনাবাহিনীর শীর্ষ উপদেষ্টার পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত বলবৎ থাকা অবস্থায় জেনারেল মানাসকে সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোন বেতন ভাতা দেয়া হবে না বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গার জন্য ত্রাণ প্রয়োজন ॥ বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী মিয়ানমারের রাখাই প্রদেশের সোয়া চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে গেল তিন বছর আগে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর থেকে এসব রোহিঙ্গা মুসলমান মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানেটেরিয়ান এ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) দফতর।
×