ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা, বৃষ্টিতে প্লাবিত ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৪ জুন ২০১৫

বগুড়ায় বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা, বৃষ্টিতে প্লাবিত ময়মনসিংহ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বগুড়ার সারিয়াকান্দীতে নির্মাণাধীন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার ১৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আরও কিছু অংশ হুমকির মুখে পড়েছে। যমুনার পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার (সেমি) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে দুই ঘন্টার ভারি বর্ষণে ময়মনসিংহ শহর প্লাবিত হয়েছে। গাইবান্ধায় পানি বৃদ্ধির ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে নীলফামারীর জলঢাকা ও ডিমলা উপজেলার তিস্তাপারের ২৫ গ্রাম ও চর বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। একটি ক্রসবাঁধের পাঁচ শ’ ফিট বিধ্বস্ত হয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জে একটি রিটায়ার্ড বাঁধের প্রায় দুশ’ মিটার ধসে গেছে। প্লাবিত হয়েছে যমুনাপারের নিম্নাঞ্চল। পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার ৩৪ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বৃষ্টিপাতে হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। শুক্রবার বিকেলে সারিয়াকান্দির গোদাখালিতে নির্মাণাধীন বাঁধের একাংশ ভেঙ্গে যাওয়ার পর বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। শনিবার বাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া অংশের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৬০ মিটারে দাঁড়িয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি ও বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে গোদাখালি, সুতানাড়া দড়িপাড়া, মুড়াগাছা, পাইকারতলি, ঘুঘুমারিসহ ১০/১২ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ধুনটের চিকাশি ইউনিয়নের ৪/৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে লোকজন বাড়িঘর ভেঙ্গে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ ॥ শনিবার সকালে দুই ঘণ্টার ভারি বর্ষণে ময়মনসিংহ শহর প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শহরের অধিকাংশ সড়কে কোমর ও হাঁটু সমান পানিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। শহরের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। শহরের ড্রেন উপচে ময়লাযুক্ত নোংরা পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সকালের হঠাৎ বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবী মানুষ। বৃষ্টির কারণে শহরের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শনিবারের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টিতে শহরের ব্রাহ্মপল্লী ও নতুন বাজার সড়কে কোমর পানি এবং শহরের বাণিজ্যিক এলাকা রামবাবু রোড, গাঙিনাপাড় ও স্টেশন রোডে হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে যায়। শহরের আউটার স্টেডিয়াম ও চরপাড়া, নয়াপাড়া, কাচিঝুলি, কলেজ রোড, হামিদ উদ্দিন রোড, পুরহিতপাড়া, নওমহলসহ অধিকাংশ আবাসিক এলাকার বাসাবাড়িতে ময়লাযুক্ত নোংরা পানি ঢুকে শহরবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলে। শহরের প্রধান খাল ও ড্রেন ময়লা জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং শহরের ভাটি এলাকার ড্রেন বেদখল হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই এরকম জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এদিকে বর্ষণের কারণে শহরের কাচিঝুলি সড়কের ওপর একটি বিশাল রেইনট্রি উপড়ে গেলে প্রায় দুই ঘণ্টা ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। শহরের জয়নুল আবেদিন পার্ক এলাকায় শহররক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ধসে পড়ে ভারি বর্ষণে। ময়মনসিংহ পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটু জানান, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শহরে এই জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। গাইবান্ধা ॥ গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সকালে বিপদসীমার ১৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চর এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। শত শত মানুষ এখন পানিবন্দী। নীলফামারী ॥ ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। শনিবার ডালিয়া পয়েন্টে সকাল ৬টা থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার দুই সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ছয়টার পর ১০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে বলে জানান উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুরুজ্জামান। পানি বৃদ্ধির কারণে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তাপারের ২৫ গ্রাম ও চর বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া পানির চাপে ডিমলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের সুপারীটারী ছোটখাতা এলাকায় পাঁচশ’ ফিট মাটির ক্রসবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। অপরদিকে তিস্তাপারের ছোটখাতা, পূর্বখড়িবাড়ী, দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামে নদীভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে মানুষজন। কুড়িগ্রাম ॥ পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিতে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমোর নদীর তীরবর্তী শতাধিক গ্রাম ও দ্বীপচরের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ৪২ সেমি, দুধকুমোরে ১৫ সেমি, তিস্তায় ১৯ সেমি পানি বেড়েছে। ফলে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও রাজীবপুরের ৪২ ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। পাহাড়ী ঢলে রৌমারীর কালো, ধরনি ও জিঞ্জিরাম নদীর পানিতে ৩০ সীমান্ত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে গেছে ইছামতি বাঁধ। যাত্রাপুরের গারুহারা, চরপাবর্তীপুর, নুনখাওয়ার মাঝেরচর, উলিপুরের হাতিয়া ও বুড়াবুড়ি এবং চিলমারীর জোরগাছসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙ্গন। গত দু’দিনে এসব এলাকার দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে। চর যাত্রাপুর বাজারের কাছে সদ্য নির্মিত একটি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সিরাজগঞ্জ ॥ মৌসুমের শুরুতেই প্রমত্তা যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গনও শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার যমুনাপারের বালিঘুগরীতে পানি উন্নয়ন বিভাগের একটি রিটায়ার্ড বাঁধের প্রায় দুইশ’ মিটার এলাকা ধসে গেছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চৌহালী উপজেলার ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চার শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়েছে। আবাদী জমিও গ্রাস করেছে প্রমত্তা যমুনা। পুরাতন রিটায়ার্ড বাঁধের প্রায় দুশ’ মিটার এলাক ধসেপড়ায় আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ বাঁধটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে আরও পশ্চিমে নতুন করে একটি রিটায়ার্ড বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়েছে। যমুনার পূর্বপাড় চৌহালীর বোয়ালকান্দি থেকে পাথরাইল পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনার ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনে চৌবাড়িয়া পূর্ব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীরবাসুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়কাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজাজুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেহাইকাউলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌহালী মহিলা মাদ্রাসার পরিত্যক্ত ভবন ইতোমধ্যেই যমুনায় বিলীন হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলার ২২ ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার কোথাও কোথাও বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। হবিগঞ্জ ॥ একটানা তিন দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশের নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শহরের ইনাতাবাদ, পুরান মুন্সেফী, উত্তর ও দক্ষিণ শ্যামলী, গোসাইনগর, নিউ মুসলিম কোয়ার্টার, মাহমুদাবাদ, ঘাটিয়া, খোয়াই বাঁধ সংলগ্ন উভয়পাড়ের কিছু অংশ, অনোয়ারপুর, হরিপুর, শায়েস্তানগর ও উমেদনগরসহ আরও বেশকিছু এলাকায় কোন কোন স্থানে পানি জমে জনদুর্ভোগ এখন চরমে। শহরের কালিবাড়ী ক্রস রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়কেও পানি জমে থাকায় লোকজনের চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
×