ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব বাধা পেরিয়ে

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৪ জুন ২০১৫

সব বাধা পেরিয়ে

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে দরিদ্র মেধাবীরা জয় করেছে দারিদ্র্য। কেউ ইটভাটায় কাজ করে, দিনমজুরি এবং বাবার সঙ্গে রিক্সা চালিয়ে এবং মাঠে কাজ করেও এবারে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে আঁধার ঘরে আলো জ্বালিয়েছে। নাজমুন্নাহার শাকিলা দুধকুমার নদে শূন্য করেছে বসতভিটা-আবাদী জমি। নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের নকুলার গ্রামের শাহজাহান আলী এখন দিনমজুর। সহধর্মীনি নাজমা বেগমও অন্যের বাড়ির কাজের লোক। টানাপোড়েনের সংসারে মেয়ে নাজমুন্নাহার ৫ম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। কিন্তু বন্ধ হয় পড়ালেখা। বাবা-মায়ের নিষেধ উপেক্ষা করে আবারও পড়তে যায় শাকিলা। এবারে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মাহমুদা খাতুন একই ইউনিয়নের মোবাল্লেগ পাড়ার স-মিল শ্রমিক আব্দুর রহমান সন্তানকে ভাল কাপড় ও ভাল খাবার দিতে না পারলেও ইচ্ছা তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করা। স্ত্রী রহিমা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতিনিয়ত পড়ার চাপ দিত মেয়ে মাহমুদা খাতুনকে। তাদের ইচ্ছাকে মূল্য দিয়ে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি এবং এবারে নাগেশ্বরীর বেরুবাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সে স্বপ্ন পূরণে মাহমুদা খাতুন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। কিন্তু ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভাল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে কিনা সে তা জানে না। বাবা-মা ও শঙ্কিত। সহদেব কুমার পড়ালেখায় অনেক খরচ তাই বর্গাচাষী বাবা বকুল চন্দ্র ও মা মমতা রানী চেয়েছিলেন ছেলে সহদেব কুমার তাদের সঙ্গে মাঠে কাজ করুক। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা পড়ালেখা করে হওয়ার। এ কারণে সহদেব একদিন বল্লভের খাস থেকে চলে আসে নাগেশ্বরী পৌর এলাকায় সুখাতী গ্রামে তার কাকা মুকুল চন্দ্রের বাড়িতে। সেখান থেকে অদম্য ইচ্ছা শক্তি, মেধা, যোগ্যতা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠা দিয়ে এবারে নাগেশ্বরী পৌর এলাকার সুখাতী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যা নিকেতনের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দিয়েছে সবাইকে। ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও অর্থাভাবে কিভাবে সম্ভব তা সে জানে না। সোনিয়া নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা,১৩ জুন ॥ তালতলীর চন্দনতলা গ্রামের পঙ্গু মানিক মিয়া ও শাহীনুর বেগমের মেয়ে সোনিয়া। ছোটবগী পিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সোনিয়া পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। জেএসসি পাসের পর লেখাপাড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তার প্রতিভাবান মেয়েটি এ বছর এসএসসির (বিজ্ঞান বিভাগের) করিডর পেরিয়েছে। এখন তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আর্থিক সচ্ছলতা নেই। বাবা দু’পা হারিয়ে পঙ্গু জীবন অতিবাহিত করছেন। বাবার আয় বলতে কিছুই নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স্ক ভাতাই তার একমাত্র সম্বল। প্রতিদিন অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় দু’বেলা খাবারের জন্য।
×