ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা মৌলিক নাট্যদলের দ্বিতীয় প্রযোজনা সমকালীন রাজনৈতিক আলেখ্য ‘অংকুর’

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৪ জুন ২০১৫

ঢাকা মৌলিক নাট্যদলের দ্বিতীয় প্রযোজনা সমকালীন রাজনৈতিক আলেখ্য ‘অংকুর’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমসাময়িক রাজনীতি এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত ‘অংকুর’ নাটকটি সম্প্রতি মঞ্চে এসেছে। ঢাকা মৌলিক নাট্যদল প্রযোজিত ‘অংকুর’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে। নাটকটি রচনা করেছেন দেশের বরেণ্য নাট্যকার কাজী রফিক। নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মৌলিক নাট্যদলের সভাপতি সাজু আহমেদ। ‘অংকুর’ নাটকের গল্পে তুলে ধরা হয়েছে এক রূপবান রূপী নারীর জীবন। গ্রামের এক গরিব চাষার ঘরে যার জন্ম। কিন্তু মেধাবী। চাষার ঘরে জন্ম হলেও সব ছিল রূপবানের। এক সময় নদী ভাঙ্গনের পর সুদের কারবারিদের খপ্পরে পরে তার পরিবার। কিশোরী রূপবান মোল্লা পুরুতের ফতোয়াবাজিতে গ্রাম ছাড়া হয়। এক সময় বস্তি হয় তার ঠিকানা। বিয়ের লোভ দেখিয়ে বেচাকেনা করে শরীর। তারপর সে হয় অন্ধকার জগতের বাসিন্দা। তবে রপবতী রূপবানের প্রশংসায় ছড়িয়ে পরে চারদিকে। আস্তানায় হাজির হয় জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রিয় কবি, এমনকি স্বয়ং একজন মোল্লাও। তাদের তিনজন নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নামে রূপবানকে একাই ভোগ করার জন্য। রূপবানের আশ্রিতা পরি। সে ভালবাসে আরেক আশ্রিত প্রহরীকে। একসময় রাজনৈতিক নেতা, কবি আর মোল্লার ঔরসে রূপবানের গর্ভে জন্ম নেয় এক অংকুর। কিন্তু সে অংকুরের দায় দায়িত্ব কেউ স্বীকার করতে চায় না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রূপবানের গর্ভের অংকুরকে নষ্ট করার। কিন্তু বাদ সাধে কবি। কিন্তু কবিকেই মৃত্যুবরণ করতে হয় রাজনৈতিক নেতা এবং মোল্লার প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে। অবশ্য ততক্ষণে তারা টের পায় রূপবানের গর্ভের সন্তান পৃথিবীতে এসেছে। উদ্বোধনী মঞ্চায়নে নাটকের শিল্পীরা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে উচ্চারণের বিষয়টি আরও সাবলীল এবং স্পষ্ট হওয়া উচিত ছিল। এছাড়া নাটকের সঙ্গীত প্রয়োগ ততটা মানানসই মনে হয়নি। আলোক প্রক্ষেপণের সময় আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল। নাটকের সবচেয়ে দুর্বল দিক ছিল সেটের অপ্রতুলতা। ভাল একটি গল্প উপস্থাপনের ক্ষেত্রে মানানসই সেট থাকা বাঞ্ছনীয়। সে দিক থেকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে সেট খুব কম মনে হয়েছে। নাটকে কোরিওগ্রাফিতেও যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। এ নাটকে যথেষ্ট কোরিওগ্রাফির সুযোগ রয়েছে। তাহলে নাটকটি আরও সমৃদ্ধ হবে। অভিনয়শিল্পীদের আরও সাবলীল হতে হবে। তবে নাটকের সবচেয়ে ভাল দিক হলো অভিনয়শিল্পীরা প্রত্যেকেই কমবেশি ভাল অভিনয় করতে পেরেছেন। উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হিসেবে অনেকটাই উৎরে গেছেন শিল্পীরা। তবে কাজী রফিকের মতো নাট্যকারদের সংলাপ এবং গল্পনির্ভর নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে নাটকের সব দিক খেয়াল রাখা উচিত বলে মতামত দিয়েছেন দর্শকরা। ভবিষ্যত প্রদর্শনীতে নাটকের কলাকুশলীরা এ বিষয়গুলোকে মাথায় রাখলে ঢাকার মঞ্চে ‘অংকুর নাটকটি একটি উল্লেখযোগ প্রযোজনায় পরিণত হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্য বেশি বেশি মহড়া করার তাগিদ দিয়েছেন নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়নে উপস্থিত দর্শকরা। উদ্বোধনী মঞ্চায়নে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ওহী চৌধুরী, অলিউল্লাহ অলি, মনি বেগম, তুষার খান, জাভেদ আকাশ, নিলয় রহমান, জিএম স্পর্শ, নিপা, সাজু আহমেদ, হিরা, অপু, ফারুক, সবুজ, রানা মল্লিক প্রমুখ। নাটকের সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন হাসান সিদ্দিকী, কোরিওগ্রাফি করেছেন নিলয় রহমান, পোশাক মনি বেগম, সেট ডিজাইন করেছেন অলি উল্লাহ অলি। নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন উপলক্ষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি সাজু আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন নাট্যকার কাজী রফিক, দলের প্রধান উপদেষ্টা সোহেল আহমেদ খান, যাত্রানট মিলন কান্তি দে, চলচ্চিত্র পরিচালক তাকে মাহমুদ প্রমুখ।
×