ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৈত্রীর বন্ধনে নৃত্যের ছন্দে উদযাপিত হলো রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৩ জুন ২০১৫

মৈত্রীর বন্ধনে নৃত্যের ছন্দে উদযাপিত হলো রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত পঁচিশে বৈশাখ ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মজয়ন্তী। সর্বশেষ এগারোই জ্যৈষ্ঠ অতিবাহিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী। আর শুক্রবার একসঙ্গে উদ্্যাপিত হলো রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী। বাঙালী মনন ও শাণিত চেতনা নির্মাণের দুই কবিকে এক আয়োজনে জানানো হলো অঞ্জলি। নৃত্যের উচ্ছ্বসিত ছন্দে মৈত্রীর বন্ধনে গাওয়া হলো কবিদ্বয়ের বন্দনা। শুক্রবার জ্যৈষ্ঠের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় উদ্্যাপিত হয় রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী। আর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি। দুই দেশের বন্ধনের স্বপ্নমাখা এই সমিতির রয়েছে বিশেষ ইতিহাস। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী- এ দুই মহান নেতার দুই দেশের বন্ধুত্বের অভিপ্রায়ের সূত্র ধরে সৃষ্টি হয় এই সমিতি। সেই সমিতির আয়োজনে পরিবেশিত হলো রবীন্দ্রনাথের ভানুসিংহ পদাবলী অবলম্বনে নির্মিত নৃত্যনাট্য রাই-কৃষ্ণা পদাবলী। অন্যদিকে উপস্থাপিত হলো নজরুলের সৃষ্টি¯œাত নৃত্যানুষ্ঠান চির উন্নত মম শির। নৃত্য পরিবেশনার আগে অনুষ্ঠিত হয় মৌলিক অধিকার ও বাংলাদেশের সংবিধান শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন। সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুশারী। অতিথিরা মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। এর আগে সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। এছাড়াও সমবেত কণ্ঠে গীত হয় ‘দাও শৈর্য, দাও ধৈর্য হে উদারনাথ’ ও ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’। একই সঙ্গে বাংলা ও হিন্দিতে গাওয়া হয় যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে শিরোনামের গানটি। আলোচনায়, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নানা বিষয় তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্ক দু’দেশের জনগণের। মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এ বন্ধনকে অটুট রাখতে এবং এগিয়ে নিতে হৃদ্যপূর্ণ মনোভাবে কাজ করছে দুই দেশ। আর্থ-সামাজিক বন্ধন শুধু নয়, দুই দেশের মধ্যে রয়েছে ঐশ^র্যময় সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। আর এ সম্পর্কে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছেন দুই মহৎ কবি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। তাঁরা আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে বেশকিছু উদ্যোগ নেন। এই দুই মহান নেতার অভিপ্রায় বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আলোচনা শেষে প্রথমে পরিবেশিত হয় গীতিনৃত্যনাট্য রাই-কৃষ্ণ পদাবলী। শামীম আর নীপা ও শিবলী যার কাহিনীর শুরুটা বৃন্দাবনে। যেখানে কিনা একসঙ্গে বেড়ে উঠছিল রাধা ও কৃষ্ণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হয় তাদের প্রেম। মাঝে ঘটে যাওয়া অনেক কাহিনীর মাঝে কৃষ্ণের অনিঃশেষ প্ররোচনায় উদ্দীপ্ত হয় রাধা। আবেগকে দমন করতে না পেরে নিজেরে করে সমর্পণ। দুই দেশবরেণ্য নৃত্যশিল্পী নীপা ও শিবলির নাচের অনিন্দ্য মুদ্রা ও অভিব্যক্তির আশ্রয়ে উপস্থাপিত হয় মৃত্যুহীন প্রেমের অনিন্দ্য প্রকাশ। কবি শেখ হাফিজুর রহমানের রচনায় গীতিনৃত্যনাট্যটির ভাবনা ও পরিচালনা করেছেন সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। রাইয়ের চরিত্রে শামীম আরা নীপা ও কৃষ্ণের চরিত্রে রূপ দিয়েছেন শিবলী মোহাম্মদ। অন্যান্য চরিত্রে রূপ দিয়েছেন আইরিন পারভীন, শাম্মী ইয়াসমিন, মীম চৌধুরী, ফারজানা ইয়াসমিন, অনিকা হোসেন, শুভ্রা কোরাইয়া প্রমুখ। রতœা চৌধুরীর সঙ্গীত পরিচালনায় কণ্ঠ দিয়েছেন হৈমন্তী শুক্লা, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মনময় ভট্টাচার্য, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। অন্যদিকে কাজী নজরুলের চির উন্নত মম শির শীর্ষক নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। তাঁরা হলেন সুমনা কান্দের, ¯েœহা দাস ও জয় প্রসূন ব্যানার্জী। শহীদুল আলমের আলোকচিত্র প্রদর্শনী কল্পনা’স ওয়ারিয়র্স ॥ মানবাধিকার, নারীর অধিকার ও পার্বত্য ভূমির আন্দোলনে সোচ্চার আদিবাসী এক সংগ্রামী নারী কল্পনা চাকমা। তিনি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৯৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন এই সাহসী নারী। ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ঘটনা আলোড়ন তুললেও আজ অবধি কল্পনা চাকমার সন্ধান মেলেনি। অপহরণের অভিযোগের তীর ওঠে এক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছেন দেশবরেণ্য আলোকচিত্রী শহীদুল আলম। সেই ধারাবাহিকতার সূত্রে শুক্রবার দৃক গ্যালারিতে শুরু হলো কল্পনাকে নিয়ে আলোচিত্র প্রদর্শনী। শহীদুল আলমের তৃতীয় পর্বের এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘কল্পনা’স ওয়ারিয়র্স’। এবারের প্রদর্শনীর ছবিগুলো ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। লেজার প্রিন্টের সাহায্যে মাদুরের ওপর ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কল্পনা চাকমার প্রতিকৃতি। একই পদ্ধতিতে প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে কল্পনার সন্ধানে যাঁরা দীর্ঘ ১৯ বছর কাজ করেছেন তাঁদের প্রতিকৃতি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ছয় দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। এ সময় একটি বিশেষ পারফর্মিং আর্ট পরিবেশিত হয়। এরপর শহীদুল আলম এবং কল্পনা চাকমার সন্ধান আন্দোলনের সঙ্গীদের মধ্যে যাদের প্রতিকৃতি প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হচ্ছে তাঁদের অনেকেই আয়োজনটির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। প্রদর্শনীটি বেশিরভাগ ছবি কল্পনা চাকমাকে নিয়ে গবেষণার ভিত্তিতে ধারণ করা হয়েছে। এই গবেষণা দলে সহায়তা করেছেন সমাজবিজ্ঞানী সৈয়দা গুলরুখ, লেখক রুমানা আহমেদ এবং আলোকচিত্রী সাদিয়া মারিয়াম। প্রদর্শনীতে কল্পনা চাকমাকে খুঁজে পাওয়ার কাজ করা ২৩ সংগ্রামী সাথীর প্রতিকৃতি উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেনÑ কবিতা চাকমা, সামারাই চাকমা, নিলীমা চাকমা, বিজয় কেতন চাকমা, মেঘনা গুহঠাকুরতা, আমেনা মহসিন, শাহীন আখতার, ইলিরা দেওয়ান, খুশি কবির, সেলিম সামাদ, আনু মুহাম্মদ, সাথী চাকমা প্রমুখ। আগামী ১৭ জুন শেষ হবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। কিউবিজম শিল্পধারায় সাদাকালোর সৃজনকর্ম প্রদর্শনী ॥ ধানম-ির গ্যালারি টোয়েন্টি ওয়ানের আয়োজনে শুক্রবার থেকে শুরু হলো বিশেষ প্রদর্শনী। শিরোনাম কিউবিজম শিল্পধারায় সাদাকালোর সৃজনকর্ম। চিত্রকর্মের সঙ্গে সঙ্গে ছিল ফ্যাশন প্রদর্শনী। জ্যৈষ্ঠের সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, নজরুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক ও শিল্প-সমালোচক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন। প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে উপস্থাপিত হয়ে সাদাকালোর সৃজনকর্ম ফ্যাশন- শো। আগামী ২০ জুন পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এক নির্ঝরের গান এ্যালবামের প্রকাশনা ॥ স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। তাঁর আরেক পরিচয় চলচ্চিত্র নির্মাতা। এর বাইরে আরেকটি পরিচয় হচ্ছে গীতিকার। রয়েছে তাঁর রচিত অসংখ্য গান। আবার সেসব গানের সুরকারও তিনি। তাঁর কয়েকটি গানের শিরোনাম হচ্ছে ‘মনের ওজন’, ‘গোপন কথাটা রাখছি পকেটে’, ‘ক্রীতদাসী’, ‘হয় কিংবা না হয়’, ‘বৃষ্টি তোমার চোখের পানি’, ‘ফসকে যাওয়া সুযোগ’, ‘আমি’, ‘তিল থেকে তাল’, ‘নিয়মিত সংঘাতে’, ‘গোপন কথা গোপন বাক্সে’, ‘বিষধর সাপ’, ‘ফাঁকা বালিশ’, ‘আবছা ছায়া’, ‘হায় হায় চাঁদমামা’ ‘নূপুরে নূপুরে হালকা যুদ্ধ’ ইত্যাদি। প্রতি গানের পেছনের পৃথক ভাবনা ও গল্প। এভাবেই ১০১টি গানের রচয়িতা নির্ঝর। আর সেই ১০১টি গান নিয়ে এক নির্ঝরের গান শীর্ষক এ্যালবামটি প্রকাশ করছে গানশালা। শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ্যালবামটির প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় থিয়েট্রিক্যাল মিউজিক আঙ্গিকে। সেখানে ছিল একজন শিল্পীর জীবন, তাঁর স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও বেদনার গল্প। শুধমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। নির্ঝরের গান এ্যালবামটি ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে। গানশালার নিজস্ব ওয়েবসাইটে (িি.িমধধহংযধষধ.পড়স) পাওয়া যাবে গানগুলো। পাওয়া যাবে কাইনেটিক মিউজিকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অনলাইন প্ল্যাটফরমেও। কাইনেটিক মিউজিকের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট সব অনলাইন থেকে যে কেউ ভিসা, মাস্টারকার্ড এবং বিকাশের মাধ্যমে গানগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন।
×