ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিকে বাঁচতে হলে জামায়াত ছাড়তে হবে ॥ বি চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৩ জুন ২০১৫

বিএনপিকে বাঁচতে হলে জামায়াত ছাড়তে হবে ॥ বি চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক রাষ্ট্রপতি ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি এখন জামায়াতনির্ভর দল হয়ে উঠেছে। এ কারণে চারদিক থেকে চাপে রয়েছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে ‘বাঁচতে’ হলে আবার জিয়ার রাজনীতিতে ফিরতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে জামায়াত ছাড়ারও পরামর্শ দিলেন বিএনপির অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী একেএম মাঈদুল ইসলাম মুকুলের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিএনপির অন্যতম মিত্র বি চৌধুরী এসব কথা বলেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর চার দলীয় সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয় বি চৌধুরীকে। খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এক বছরের মধ্যেই ইমপিচ করার হুমকিতে পদত্যাগ করেন তিনি। গঠন করেন নতুন দল বিকল্পধারা। এরপরও বি চৌধুরীর বিএনপিপ্রীতি এখনও অটুট। ২০ দলীয় জোটে তার দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ না থাকলেও বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার সবচেয়ে শুভাকাক্সক্ষীদের একজন তিনি। নিজের দল থাকলেও বিএনপির কল্যাণ নিয়েই তিনি বেশি ভাবেন। তবে সমালোচনা করেন না। অনেক দিন পরে হলেও বোধোদয় হয়েছে বি চৌধুরীর। তাই জামায়াত ছাড়তে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বদরুদ্দোজা বলেন, জিয়াউর রহমান হাজার হাজার মাইল হেঁটেছেন, সবাইকে নিয়ে ১২শ’ খাল কেটেছিলেন। সেদিন খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি তিনবার ক্ষমতায় এসেছেন, কত মাইল খাল কেটেছেন? বি চৌধুরীর ভাষায় এ দলটি দুটি পর্যায় পেরিয়ে এখন তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপটি ছিল ‘জিয়াউর রহমানের রাজনীতি। এরপর এলো খালেদা জিয়ার রাজনীতি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। এখন তৃতীয় ধাপে আছে, জামায়াতনির্ভর রাজনীতি। এই ধাপটি বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না। চতুর্দিকে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ একটু বেশি। তাই চতুর্থ ধাপ আসতে বাধ্য, যখন আবার ঘুরে ফিরে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে তার তত্ত্বাবধানে বিএনপির প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় দলের মহাসচিব ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। জাতীয় পার্টির সাংসদ মাঈদুল ইসলামও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। জিয়ার আমলে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৮১ সালে জিয়া নিহত হওয়ার পর বিচারপতি সাত্তার এবং পরে এইচএম এরশাদের মন্ত্রীসভাতেও মাঈদুল দায়িত্ব পালন করেন। তার লেখা ‘আত্মসত্ত্বার রাজনীতি এবং আমাদের ভাবনা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে বি চৌধুরী বলেন, দল প্রতিষ্ঠার সময় জিয়াউর রহমান তখনকার তরুণ শিল্পপতি মাঈদুলের কাছ থেকেই সর্বপ্রথম এক কোটি টাকা ‘অনুদান’ নিয়েছিলেন। এখন সেই বিএনপিতে আমিও নেই, মাঈদুলও নেই। জিয়ার বিএনপি তিনটি স্তর পার হয়ে এসেছে। একটা হচ্ছে জিয়ার বিএনপি, সেখানে আমরা সবাই ও জনগণ। একটা প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঢুকে গেছেন। হাজার হাজার মাইল হেঁটেছেন। এখন জিয়ার রাজনীতি নেই। বিকল্পধারা সভাপতির মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তবে তার ‘টেকনিক’ ছিল ভিন্ন। উনি বলেছিলেন, সব দল ফেলে দাও, একদল হয়ে যাও। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের চেতনা তাকে সমর্থন দেয়নি। দেয়নি বলেই আওয়ামী লীগও তা গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ লিখিতভাবে কখনও বাকশালে ফিরে যায়নি। যদিও বঙ্গবন্ধু তাদের স্বীকৃত নেতা, এতে কোন সন্দেহ নেই। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বান্তবায়নের মধ্য দিয়ে ৫০ হাজার মানুষের সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি হওয়ায় ‘খুশি হয়েছেন’ জানালেও নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন বি চৌধুরী। তিনি বলেন, মোদি সাহেব ২২ চুক্তি করে গেলেন। আমরা হ্যাঁ হ্যাঁ করে গেলাম। চুক্তি মানে কী। বেস্ট চুক্তি সেই চুক্তি, যেখানে আমি ঠকব না, আপনিও ঠকবেন না; আমি জিতব, আপনিও জিতবেন। এখানে কি তা হয়েছে? আমরা জানি না। এখনও জাতীয় সংসদে চুক্তিগুলো উপস্থাপন করা হয়নি। জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য মাঈদুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বদরুদ্দোজা অনুষ্ঠানে বলেন, গ্রন্থে অনেক সত্য তিনি লুকিয়ে গেছেন। সব সত্য কথা হয়ত বলা যায় না...। মাঈদুল কেন বিএনপি ছেড়ে এরশাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন, সে বিষয়টিও এই বইয়ে লেখা উচিত ছিল। কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাঈদুল অনুষ্ঠানে তার বই ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কথা বলেন। অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী, সাবেক সচিব এম মোকাম্মেল হক, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসানুল হাদী ও প্রকাশনা সংস্থা হাতেখড়ির সত্ত্বাধিকারী আবু তাহের সরকার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। হাতেখড়ি থেকে প্রকাশিত মাঈদুল ইসলাম মুকুলের ‘আত্মসত্তার রাজনীতি এবং আমাদের ভাবনা’ বইটির দাম রাখা হয়েছে ৫০০ টাকা।
×