ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তের সব টাওয়ার সরিয়ে ফেলছে বিটিআরসি ;###;বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উভয় পাশের এই নেটওয়ার্কের সুবিধা নিয়েই এলাকাটি মানবপাচারের রুটে পরিণত

রাখাইন প্রদেশজুড়ে বাংলাদেশী মোবাইল নেটওয়ার্ক

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৩ জুন ২০১৫

রাখাইন প্রদেশজুড়ে বাংলাদেশী  মোবাইল নেটওয়ার্ক

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ দেশের অধিকাংশ মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু টাউনশিপ পর্যন্ত বিস্তৃত এ কারণে সীমান্তের নৌ, সমুদ্র ও স্থলপথে মানব পাচার, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করছে। শুধু তাই নয়, মোবাইলের মাধ্যমে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় টাকা পাচারও থেমে নেই। সাম্প্রতিক সময়ে মানব পাচারের ঘটনায় রোমহর্ষক যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে এতে করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির পক্ষ থেকে কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্তের দেশীয় সব মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক টাওয়ার সরিয়ে নিতে পত্র দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বেসরকারী কোন মোবাইল অপারেটর নেই। সরকারের নিয়ন্ত্রণে যে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু রয়েছে তা তাদের সীমান্ত অতিক্রম করে অর্থাৎ াংলাদেশী এলাকা পর্যন্ত থাকার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অথচ বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় টাওয়ার নির্মাণের ফলে এর নেটওয়ার্ক আরাকান প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিশেষ করে মংডু টাউনশিপ পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃতি ঘটেছে। আরাকান প্রদেশের সর্বত্র বাংলাদেশী মোবাইল কোম্পানিগুলোর সিমকার্ড অবাধে বেচাকেনা হয়। আর মোবাইল সেট ও সিমকার্ড এদেশ থেকে পাচারের জন্য রয়েছে অবৈধ ব্যবসা। এদিকে, মানব পাচার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে গডফাদার ও দালালদের গ্রেফতার অভিযান যখন চলমান তখন দালাল চক্রের সহযোগী সন্ত্রাসীরা পুলিশের এক সোর্সকে গুলিতে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। এছাড়া কক্সবাজার সদর, মহেষখালি ও টেকনাফে আরও ৬ দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে আট দালালের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। অপরদিকে, মিয়ানমারের আকিয়াব কারাগারে গত বারো বছর ধরে এক বাংলাদেশী বন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কক্সবাজার বিজিবি সূত্রে জানানো হয়েছে, নাফ নদী, বঙ্গোপসাগর এবং সীমান্তসংলগ্ন স্থলপথে মানব পাচার, মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালান বন্ধে তাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্কের জন্য স্থাপিত টাওয়ার সরিয়ে নেয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল তা বিটিআরসি আমলে এনেছে এবং বিটিআরসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব টাওয়ার সরিয়ে নিতে পত্র দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ উখিয়াসহ আশপাশ এলাকা এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার সীমান্ত অঞ্চলে দেশীয় বিভিন্ন প্রাইভেট অপারেটরের নেটওয়ার্কের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে টাওয়ার। পাহাড়ের চূড়া, স্থলে এবং উঁচু ভবনের ছাদে এসব টাওয়ার স্থাপনের ফলে এগুলোর নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি ঘটেছে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ পর্যন্ত। সূত্র মতে, মংডু টাউনশিপের দশ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় বাংলাদেশী বেসরকারী মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক থাকায় সেখানে মিলছে দেশীয় কোম্পানিগুলোর সিমকার্ড। রাখাইন প্রদেশের এ অঞ্চলসংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারি এলাকার উভয় পাশে নেটওয়ার্ক থাকছে বিধায় পুরো এলাকাটি ক্রমান্বয়ে চোরাচালানের পথ মানব পাচারের রুটে পরিণত হয়। এ বিষয়টি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রায় প্রতিটি সভায় সীমান্তরক্ষী বিজিবির পক্ষ থেকে তোলা হলেও এতদিন খুব একটি জোর পায়নি। কিন্তু এখন বিটিআরসি বিষয়টি আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর হয়েছে। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের উর্ধতন মহলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এদেশের ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা সিমকার্ড নিয়ে থাকে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সিমকার্ড নিতে নাম ঠিকানাও লাগে না। দালাল ধরিয়ে দেয়ায় পুলিশ সোর্স খুন ॥ মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন দালাল ধরিয়ে দিতে সহায়তা করার জের হিসেবে টেকনাফে গুলিতে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এক সোর্সকে। নিহত ব্যক্তির নাম মোঃ সেলিম। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে টেকনাফের পুরান পল্টন পাড়ার মাইমুনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমে ৪/৫জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী এ ঘটনা ঘটায়। পুলিশ জানায়, সেলিম পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত। সে নিজেও একজন রোহিঙ্গা। তবে প্রায় দু’দশক আগে তার পরিবার মিয়ানমার থেকে এসে এদেশে বসতি গেঁড়েছে। মানব পাচারে দালালদের সম্পর্কে তার কাছ থেকে বহু তথ্য নিয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি টের পাওয়ার পর দালাল চক্রের সন্ত্রাসীরা তাকে কয়েক দফায় হুমকি দেয়।
×