ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবের রেকর্ড, আশায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৩ জুন ২০১৫

সাকিবের রেকর্ড, আশায় বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ তিনদিনে মোট ২৭০ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল। সেখানে বৃষ্টির বাধায় বাংলাদেশ-ভারত ফতুল্লা টেস্টে খেলা হয়েছে মাত্র ১০৩.৩ ওভার। খেলা হয়নি ১৬৬.৩ ওভার। তিনদিনে ৯ সেশনের ৫ সেশনই খেলা হয়নি। একটি ইনিংসই এখনও শেষ হয়নি। হাতে আছে মাত্র দু’দিন। এ দু’দিনেই অবশ্য টেস্ট ড্র হবে, না বাংলাদেশের হার হবে; তা বোঝা যাবে। বৃষ্টিতে একের অধিক সেশন শেষ হলে ম্যাচ ড্র’ই হবে। আর যদি পুরো দু’দিন খেলা হয়, তাহলে বাংলাদেশের হারের শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ভারত যে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৬২ রান করেছে, তাতেই বাংলাদেশের হারের বিপদ এখনও কাটেনি। দু’দিনে যদি আর বৃষ্টি না হয়, ভারত যদি আর ব্যাট না করে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদেরই হয়ত উইকেট আঁকড়ে থাকতে হতে পারে। দু’দিন ব্যাটসম্যানরা টিকে থাকতে পারলেই ম্যাচ ড্র হয়ে যাবে। যদি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা তা করতে না পারেন তাহলেই হারের শঙ্কায় পড়ে যেতেও পারে। তৃতীয় দিনে ৪ উইকেট নেয়া দিনের সেরা বোলার বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ড্র’র দিকেই নজর দিচ্ছেন। বলেছেন, ‘জানি না তারা (ভারত) কী করবে? যদি শুরুতেই আমাদের নামতে হয়, সেজন্য আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। আমাদের লক্ষ্য যতক্ষণ সম্ভব ব্যাটিং করা। যেমন দেখছি তাতে ড্রয়ের সম্ভাবনাই বেশি। উইকেট যতটা দেখেছি, তাতে করে তেমন কঠিন কিছু মনে হচ্ছে না।’ তবে সেঞ্চুরিয়ান মুরলি বিজয় কিন্তু জয় ছাড়া কিছুই এখনও ভাবছেন না। বলেছেন, ‘যদি আবহাওয়া ঠিক থাকে, তাহলে জয়ের চেষ্টা করব।’ প্রথমদিনে স্পিনে কোন দ্যুতিই দেখা যায়নি। এক সেশন খেলাই হয়নি। ভারতও করেছিল বিনা উইকেটে ২৩৯ রান। প্রথমদিনেই আসলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে চলে গিয়েছিল। শিখর ধাওয়ানতো প্রথমদিনেই ১৫০ রান করে ফেলেছিলেন। আর মুরলি বিজয় করেছিলেন ৮৯ রান। দু’জন মিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড জুটিও গড়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন খেলাই হয়নি। বৃষ্টির জন্য ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তৃতীয় দিন থেকে সাড়ে নয়টায় খেলা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে বৃষ্টির শঙ্কা কেটে খেলাও শুরু হয় যথাসময়েই। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ স্পিনারদের ঝলক দেখানোও শুরু হয়ে যায়। ভারতের স্কোরবোর্ডে আর ৪৪ রান যোগ হতেই বাংলাদেশ স্পিনারদের বিষে লাল হতে থাকেন ভারত ব্যাটসম্যানরা। অলরাউন্ডার সাকিবের স্পিন জাদুও শুরু হয়ে যায়। শুরুতেই ধাওয়ান (১৭৩), এরপর ২৯১ রানে রোহিত শর্মাকে (৬) আউট করে ভারতের ইনিংসে ধস নামান সাকিব। ধাওয়ান যখন আউট হন, এর আগেই ভারতের হয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ধাওয়ান-বিজয় মিলে সর্বোচ্চ ২৮৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। বাংলাদেশ দলে কোচ হাতুরাসিংহের সবচেয়ে পছন্দের ক্রিকেটার জুবায়ের হোসেন। সেই স্পিনারকে নিয়ে কতই না কথা হয়েছে। কোচ বার বার এ স্পিনারকে খেলাতে চেয়েছেন। দলে রাখার চেষ্টাও করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে সেই সুযোগ না মিললেও ভারতের বিপক্ষে খেলছেন জুবায়ের। আর তাতেই সফল। ৩১০ রান যখন ভারতের স্কোরবোর্ডে, বিরাট কোহলির (১৪) উইকেটটি শিকার করেন জুবায়ের। এরপর অবশ্য ১১৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেন বিজয় ও রাহানে। ভারত যখন ৪২৪ রানে পৌঁছে, তখন আবার ভারতের লাগাম টেনে ধরার কাজটি করেন সাকিব। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট শতক তুলে নেয়া বিজয়কে (১৫০) আউট করে দেন। ভারতেরও ৪ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ৪৪৫ রান হতেই ৬ রান করা ঋদ্বিমান সাহাকে সাজঘরে ফেরান জুবায়ের। আর ৮ রান যোগ হতেই ৯৮ রান করা রাহানের উইকেটটিও সাকিব শিকার করেন। ধাওয়ানের উইকেট যখন নেন, তখনই দেশের মাটিতে দেশের বোলারদের মধ্যে প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট শিকার করেন সাকিব। রাহানের উইকেটটি নিয়ে ম্যাচে ৪ উইকেট শিকার করে ফেলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে আলো না ছড়াতে পারলেও ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেই ঝলক দেখিয়েছেন সাকিব। রাহানের উইকেট পতনের পর রবীচন্দ্রন অশ্বিন (২*) ও হরভজন সিং (৭*) ব্যাট করতে থাকেন। কিন্তু যখন ভারত ৪৬২ রানে পৌঁছে তখন যে বৃষ্টি শুরু হয়, আর খেলা গড়ায় না। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বৃষ্টি খেলায় বাগড়া ঘটাতে পারেনি। যেই দুই দল মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায়, এরপর থেকে একটু পর পর খেলা শুরু হয়, আবার বৃষ্টির জন্য দুই দলের ক্রিকেটারদের সাজঘরে ফিরতে হয়। তিন-চারবার এমন ঘটে। শেষে ২.৫০ মিনিটে যে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়, ৪.১০ মিনিটে খেলা পরিত্যক্ত করার ঘোষণাই দিতে হয়। তৃতীয় দিন খেলা হয় মাত্র ৪৭.৩ ওভার। এর মধ্যে ভারত অবশ্য শক্ত অবস্থানেই আছে। এর আগেও দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ সেশনের বেশি খেলতে না পারা, ৪৫০ রানের কম করে অলআউট হওয়ার ইতিহাস বাংলাদেশের আছে। আর এখানেই ভয়ও আছে। সাকিব, জুবায়ের মিলে যদি ভারত ইনিংস ধ্বসে দিতে পারেন, তাহলে অশ্বিন, হরভজনও কী সেই কাজটি করতে পারবেন না? তা যদি করে ফেলেন, তাহলে বাংলাদেশের হারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে যদি কোনভাবে বৃষ্টি আসে, সেই বৃষ্টি আরেকটি দিন পরিত্যক্ত হয়ে যায়, তাহলে ম্যাচ নিশ্চিতই ড্র হয়ে যাবে। এখন ড্র না হার হবে, সেদিকেই নজর থাকছে।
×