ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার ব্যাটসম্যানদের অগ্নিপরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৩ জুন ২০১৫

এবার ব্যাটসম্যানদের অগ্নিপরীক্ষা

মিথুন আশরাফ ॥ বৃষ্টি, বৃষ্টি এবং বৃষ্টি। ফতুল্লা টেস্টে যেন এ একটি শব্দই সবার মুখে মুখে। বৃষ্টি যে বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে পিছুই ছাড়ছে না। বৃষ্টির জন্য প্রথম দিনে এক সেশন খেলা হল না। দ্বিতীয় দিন পুরোটাই বৃষ্টি হলো। একটি বলও মাঠে গড়াল না। দিনটি পরিত্যক্ত হয়ে গেল। তৃতীয় দিনও বৃষ্টির বাধায় খেলা হতে পারল মাত্র ৪৭.৩ ওভার। বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত ৪.১০ মিনিটে তৃতীয় দিনও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলো। তাতে ভারত অবশ্য শিখর ধাওয়ানের ১৭৩, মুরলি বিজয়ের ১৫০ ও অজিঙ্কেয়া রাহানের ৯৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৬২ রান করে ফেলল। এ পাহাড়সম রানই বাংলাদেশকে বিপদের সম্মুখীন করতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে ম্যাচ ড্রর দিকে এগিয়ে চলেছে, তা বোঝা যাচ্ছে। এখনও যে ম্যাচের একটি ইনিংসই শেষ হয়নি। তবুও বাংলাদেশের হারের শঙ্কা থাকছেই। তবে এখন ব্যাটসম্যানদের সামনে অগ্নিপরীক্ষা। প্রশ্ন উঠতে পারে কিভাবে? হাতে আছে খেলার আরও ২দিন। এ দু’দিন যদি পুরো খেলা হয়, হারের শঙ্কাই থাকছে। ভারত এখন যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকেই ইনিংস ঘোষণা করলে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে খেলতে নামবে। তৃতীয় দিনে যেভাবে বল ঘুরল, বাংলাদেশের স্পিনাররা যেভাবে নিজেদের মেলে ধরলেন, তাতে ভারত স্পিনার হরভজন সিং ও রবীচন্দ্রন অশ্বিনও নিশ্চয়ই ঝলক দেখাবেন। সাকিব দুর্দান্ত বোলিং করে ৪ উইকেট তুলে নিলেন। ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিজয়, রাহানের উইকেট শিকার করলেন। দেশের মাটিতে প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট নেয়ার রেকর্ডও গড়লেন। সাকিবের সঙ্গে কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের পছন্দের ক্রিকেটার লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনও নিলেন ২ উইকেট। এর মধ্যে আবার বিরাট কোহলির উইকেটটিও জুবায়ের শিকার করলেন। তৃতীয় দিন যেন ভারত ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। প্রথম দিন ভারত যে ২৩৯ রান করেছিল, তৃতীয় দিন এর সঙ্গে আর ২২৩ রান করতে পারল। ভারত ব্যাটসম্যানরাই বাংলাদেশ স্পিনারদের সামনে তৃতীয় দিন এমন বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কী অবস্থা হবে? যদি পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা খুলনার স্মৃতি ফিরে আসে তাহলে ভাল। তামিম, ইমরুল, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিবরা মিলে ড্রর যে সম্ভাবনা আছে, তাই বজায় রাখবেন। কিন্তু যদি বাংলাদেশের খেলা সর্বশেষ টেস্টের হিসেব সামনে চলে আসে, তখন কী হবে? পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে সর্বশেষ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। সেই টেস্টে তিনদিনেই হারের সম্ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তান প্রথম দিন পুরোটা খেলে। দ্বিতীয় দিনে চা বিরতির পরপরই প্রথম ইনিংসে ৫৫৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর দিনটি শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ হারায় ৫ উইকেট। তৃতীয় দিন মধ্যাহৃ ভোজের বিরতির আগেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ২০৩ রানেই বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায়। ফলোঅনে পড়ে। যদি বাংলাদেশকে আবারও ব্যাটিংয়ে পাঠাতো পাকিস্তান, তাহলে তিন দিনে ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল। বাংলাদেশ তখনও ৩৫৪ রানে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে। তৃতীয় দিন শেষ সেশনের অর্ধেকটা সময় আগে ১৯৫ রান করে বাংলাদেশের সামনে জিততে ৫৫০ রানের টার্গেট দিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। এরপর বাংলাদেশ খেলতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৩ রান করে দিন শেষ করে। চতুর্থদিনে দ্বিতীয় সেশনও শেষ হয়নি, ২২১ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে হারও হয়। সাড়ে তিনদিনেই খেলা শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশ মাত্র চার সেশন খেলতে সক্ষম হয়। এখনও যদি দু’দিন টানা খেলা হয়, সেইরকম কিছু যে ঘটবে না, তা বলা মুশকিল। এ অবস্থায় যদি ইনিংস ঘোষণা করে ভারত, ফলোঅন এড়াতেই বাংলাদেশের ২৬৩ রান লাগবে। এ রান তোলার আগে অলআউট হয়ে গেলে নিশ্চয়ই ভারত আবারও বাংলাদেশকেই ব্যাটিংয়ে পাঠাবে। তখন যদি বাংলাদেশ পরপর দুই ইনিংসেই ব্যাটিংয়ে খারাপ করে, তাহলে হারের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। হাতে আছে ৬ সেশন। প্রতিটি সেশনই এখন বাংলাদেশের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব দিয়ে এখন ব্যাটসম্যানরা এ চ্যালেঞ্জ জয় করতে পারলেই হয়। শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই নয়, ইতিহাসও বাংলাদেশকে শঙ্কার মধ্যে ফেলছে। ইতিহাস ঘেঁটে যতদূর বের করা গেল, একদিনে ২৭ উইকেট পড়ার রেকর্ডও আছে। ১৮৮৮ সালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে দ্বিতীয় দিনে এমনটি ঘটেছে। দ্বিতীয় দিনে ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট, অস্ট্রেলিয়ার ১০ ও ইংল্যান্ডের আবার ১০ উইকেট পড়েছে। তাতে দ্বিতীয় দিনেই খেলা শেষ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া জিতেছে। এ তো গেল ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পড়ার রেকর্ড। একদিনে ২৫, ২০, ১৮ উইকেট পড়ার ইতিহাসও আছে ভুরি ভুরি। একবিংশ শতাব্দীতে এসে ২০১১ সালে যে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে দ্বিতীয় দিনে ২৩ উইকেট পড়েছে, তা অনেক আলোড়ন জাগায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও দুঃখজনক এমন একটি অধ্যায় আছে। ২০০৮ সালের নবেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্লুমফন্টেইন টেস্টে দ্বিতীয় দিনেই ১৯ উইকেট পড়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেট, বাংলাদেশের ১০ উইকেট পড়ে। ২০০১ সালে হ্যামিল্টনে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে প্রথম দু’দিন বৃষ্টির জন্য খেলাই হয়নি। তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম দিন খেলা হয়। এর মধ্যে চতুর্থ দিনে যে ১৮ উইকেট পড়েছে, নিউজিল্যান্ডের ৪টি, বাংলাদেশের ১৪টি উইকেটের পতন ঘটেছে। ইনিংস ব্যবধানে হার হয়েছে বাংলাদেশের। একদিনেই বাংলাদেশের অলআউট হওয়ার ইতিহাস আছে। এবারও যদি সেই রকম কিছুই ঘটে যায়। তাহলে হারও হয়ে যেতে পারে। তৃতীয় দিনের সেরা বোলার সাকিব আল হাসান যদিও ম্যাচকে ‘ড্র’ হতে দেখছেন। সঙ্গে শঙ্কার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। বলেছেন, ‘ড্র করতে হলে এখন ব্যাটসম্যানদেরই যা করার করতে হবে।’ সাকিব বুঝতে পারছেন হয়ত আজ চতুর্থ দিনে সকাল থেকেই বাংলাদেশকে ব্যাটিং করতে হবে। তাই ব্যাটসম্যানদের দিকেই দৃষ্টি দিয়েছেন। তবে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট শতক করা মুরলি বিজয় কিন্তু জয়ের কথাই বলেছেন। হাতে আছে দু’দিন। এ দু’দিনেই বাংলাদেশকে হারানোর সম্ভাবনা দেখছেন বিজয়। সেই শঙ্কা অবশ্য থাকছেই।
×