ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নৃত্য গীত কবিতায় দিনভর ‘এই বরষায়’

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৩ জুন ২০১৫

নৃত্য গীত কবিতায় দিনভর ‘এই বরষায়’

মনোয়ার হোসেন ॥ ঋতুচক্রে চলছে উত্তাপ ছড়ানো গ্রীষ্মকাল। জ্যৈষ্ঠের দাবদাহে পুড়ছে মাটি। জনজীবনে বইছে অস্বস্তির গরম হাওয়া। তাই তো চাতকের মতো বৃষ্টির প্রহর গুনছে মানুষ। বারিধারায় সিক্ত হওয়ার আকাক্সক্ষায় উদ্বেল নাগরিক মন। সেই সূত্রে আসছে হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ ছড়ানো রূপময় বর্ষা। আকাশ থেকে ঝরে পড়া জলের রিমঝিম শব্দে জীবনে আসবে নতুন ছন্দ। আর শুক্রবার ছুটির দিনে সেই কামনায় বর্ষাবন্দনার আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো ‘এই বরষায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানমালা। দিনভর গানের সুরে, নৃত্যের নান্দনিকতায়, কবিতার ছন্দে উচ্চারিত হলো বর্ষার জয়গান। সেই সঙ্গে ছিল নাটক, চলচ্চিত্র, ছবি আঁকা, কাবাডি প্রতিযোগিতা, পাপেট শো, বর্ষাবিষয়ক সেমিনার ও ছবির প্রদর্শনী। সকাল থেকে রাত অবধি রকমারি আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে একাডেমির বর্ধমান ভবনসংলগ্ন উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। বৃষ্টির ফোঁটা না ঝরলেও বর্ষাভিত্তিক নৃত্য-গীত-কবিতা সিক্ত হয়েছে শ্রোতা-দর্শকের অন্তর। যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গ্রে এ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেড ও ওয়াটার এইড। বর্ষাবন্দনার এ আয়োজনের সূচনা হয় সকাল দশটায়। নজরুল মঞ্চ থেকে বেলুন উড়িয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় বক্তব্য রাখেন গ্রের কান্ট্রি হেড সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন, বাংলা একাডেমির প্রশাসনিক বিভাগের পরিচালক মোঃ হাসান-উল-কবীর প্রমুখ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে সম্মেলক কণ্ঠে মধুর সুরে গীত হয় ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। মিতা হকের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরতীর্থের শিল্পীরা। এরপর ভেসে আসে বর্ষাকে নিবেদিত কবিতার দোলায়িত ছন্দ। বিশ্বকবির কবিতাকে আশ্রয় করে খ্যাতিমান বাকশিল্পী শিমুল মুস্তাফা উচ্চারণ করেন ‘এমনও দিনে তারে বলা যায়, এমনও ঘোর বরষায়’। কণ্ঠশিল্পী আহমেদ হাসান সানি পরিবেশন করেন ‘ভালবাসা নিস’ শিরোনামের গান। জাহিদ মামুন খানের সুরেলা কণ্ঠে গীত হয় ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগল আমার মন জেগে ওঠে’। ঝর্ণা সরকার পড়ে শোনান রবি ঠাকুরের ‘মেঘলা দিনে’ শিরোনামের কবিতা। স্বাগতা, সন্ধি ও সভ্যতাÑ এই তিন শিল্পীর সঙ্গীত দল পরিবেশন করে ‘ধিতাং ধিতাং বলে’, ‘এসো শ্যামল সুন্দরও’সহ বেশকিছু গান। সম্মেলক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করে স্রোতের বাচিকশিল্পীর। চট্টগ্রামের নাট্যদল নাটুয়া মঞ্চস্থ করে নাটক। জুমার নামাজের বিরতি দিয়ে রাত নয়টা পর্যন্ত চলে এই বর্ষানির্ভর এই বর্ণিল আয়োজন। দিনভর সুরে সুরে শ্রোতা-দর্শককে মাতিয়ে রাখে সঙ্গীত দল বাপ্পা মজুমদার এ্যান্ড ফ্রেন্ডস, জলের গান, চিরকুট, জুয়েল এ্যান্ড ফ্রেন্ডস ও সমুদ্র। একক কণ্ঠে গান শোনান শাহেদ, তপু ও মিনার। বৃন্দ নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যদল ধৃতি নর্তনালয় এবং সুইটি দাশ ও তাঁর দল। এক নৃত্য উপস্থাপন করেন ওয়ার্দা রিহাব। একক কণ্ঠে আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবেশিত হয় জল পুতুলের পাপেট শো। মূকাভিনয় পরিবেশন করেন মীর লোকমান। এছাড়া বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেন মীরাক্কেলের প্রতিযোগী শাওন, পরশ ও সাইফুল। এসবের সঙ্গে বৃষ্টির পানি ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা ও মডেল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। রাত দশটা পর্যন্ত চলে মনমাতানো এ আয়োজন।
×