ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণ ॥ ৯ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে

কারা বিভাগ যুগোপযোগী করতে রাজশাহীতে তৈরি হচ্ছে প্রশিক্ষণ একাডেমি

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৩ জুন ২০১৫

কারা বিভাগ যুগোপযোগী করতে রাজশাহীতে তৈরি হচ্ছে প্রশিক্ষণ একাডেমি

মশিউর রহমান খান ॥ দেশে প্রথমবারের মতো রাজশাহীতে তৈরি করা হচ্ছে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় এটি নির্মাণ করা হবে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কারা বিভাগের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহে ও কারা সপ্তাহ ২০১৪ তে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রশিক্ষণ একাডেমিটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কারা বিভাগে কর্মরতদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটি নির্মাণ করা হলে কারাগারে কর্মরত প্রায় ৯ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এ প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা সম্ভব হবে। কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে এটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাবটি পাস করা হয়। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতর। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কারাগার সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত কারা অধিদফতরের স্বয়ংসম্পূর্ণ কোন প্রশিক্ষণ একাডেমি নেই। এ প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের মাধ্যমে কারা বিভাগে কর্মরত ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য স্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা পাবে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় মোট ৩৭ দশমিক ১৪ একর জমির ওপর এ প্রশিক্ষণ একাডেমিটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কারা বিভাগে চাকরিতে প্রবেশের পর কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হয় না। সামান্য মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেই সরাসরি লাঠি হাতে দায়িত্ব পালনে নেমে যান কারারক্ষীরা। এদের মধ্যে কয়েকজনকে অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলেও দায়িত্ব পালনে তেমন কোন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। কারারক্ষী ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এমনও লোক রয়েছে যিনি গত ৩০ বছর যাবত কারা বিভাগে চাকরি করলেও কোন প্রকার প্রশিক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। সম্প্রতি কোন প্রকার প্রশিক্ষণ না থাকায় কারা মহাপরিদর্শক বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে এসব ৪০ থেকে ৫০ বছরের উর্ধের চাকরিরত কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণের জন্য আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা না থাকায় কোনমতেই কারা বিভাগের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কারা সূত্র জানায়, ১৯৮০ সালে বিচারপতি এ কে এম এ মনিরের নেতৃত্বে গঠিত কারা সংস্কার কমিশন একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এরই প্রেক্ষিতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় ১৯৯৫ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে অস্থায়ীভাবে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি চালু করা হয়। যাতে বর্তমানে স্বল্প পরিসরে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠার লগ্ন হতে অদ্যাবধি জেল সুপারদের ৬ মাস মেয়াদী ৬টি ব্যাচ, ডেপুটি জেলাদের ৩ মাস মেয়াদী ১০টি ব্যাচ এবং কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের ৩ মাস মেয়াদী ৩৭টি ব্যাচে মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানেও এ সংক্রান্ত মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান চলমান রয়েছে। কারা অধিদফতরের অধীনে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি, রাজশাহীর সার্বিক সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছেন রাজশাহী বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স। এছাড়া কমান্ড্যান্টের দায়িত্বে আছেন সিনিয়র জেল সুপার, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, কোর্স কো-অর্ডিনেটর ও প্যারেড অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন একজন ডেপুটি জেলার। পাশপাশি একজন প্রধান প্রশিক্ষক ও ৯ জন সহকারী প্রশিক্ষক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
×