ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওমরাহ করতে গিয়ে নিরুদ্দেশ

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৩ জুন ২০১৫

ওমরাহ করতে গিয়ে নিরুদ্দেশ

ওমরাহ হজ পালনের নামে মানব পাচার করা হয়েছে, এমন অভিযোগের কোন সুরাহা হয়নি। এই কারণে গত ২২ মার্চ থেকে সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসাদান বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, ওমরাহ করতে গিয়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশী গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে সে দেশ ত্যাগ করেনি। অবৈধভাবে সৌদিতে অবস্থান করছে। এই সময়ের মধ্যে ৫১ হাজার ৩২১ জন বাংলাদেশী ওমরাহ ভিসায় হজে যায়। নিয়মানুযায়ী ওমরাহ শেষে তাদের সৌদি ত্যাগ করার কথা। দেখা গেছে ভিসার নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরেছেন ৪২ হাজার ৭৬৮ জন। বাকি ৮ হাজার ৫৫৩ জন ফিরেননি। সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিগুলো এদের ফেরত আনার কোন উদ্যোগ নেয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের প্রায় ২১টি ট্রাভেল এজেন্সি ওমরাহ ভিসার নামে সৌদি আরবে মানব পাচার করে আসছে, এমন অভিযোগ ওঠার পরও ধর্ম মন্ত্রণালয় তদন্ত করে দেখেনি। সৌদি আরব অভিযুক্ত ২১টি এজেন্সির তালিকা দিলেও মানব পাচার আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এই পাচারের সঙ্গে হজ এজেন্সি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির এজেন্সিও রয়েছে। ফলে সৌদি আরব ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করে। ভিসা প্রদানও বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে এত এজেন্সি থাকার বিষয়ে সৌদিরা অনেক দিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছে। কিন্তু তা নিয়ে কোন বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হয় না। সৌদি আরব বলেই দিয়েছে, সে দেশে পালিয়ে থাকা ব্যক্তিদের ফিরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত ওমরাহ ভিসা চালু করা হবে না। হজে পাঠানোর পর ফেরত আনতে না পারাটা তো মানব পাচারেরই শামিল। সাধারণত রমজান মাসে বাংলাদেশ থেকে হাজার বিশেক মানুষ ওমরাহ হজে যান। আর ক’দিন পর রমজান শুরু হচ্ছে। অথচ সৌদি ভিসা বন্ধ। কিছু হজ এজেন্সির কারণে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান আজ ভুক্তভোগী। এই যে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া কিংবা দেশে না ফেরা ব্যক্তিদের সবাই বাংলাদেশী কিনা প্রশ্ন উঠলেই জবাব মিলবে, এদের একটা বড় অংশই রোহিঙ্গা। যারা ব্যবহার করছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট। একটি চক্র রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী নাগরিক বানিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসার ব্যবস্থা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত রোহিঙ্গাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশান্তরী হওয়া। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সৌদি সরকারের কালো তালিকাভুক্ত এজেন্সির বাইরে আরও কয়েকটি এজেন্সির বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তারা খুবই প্রভাবশালী। অদৃশ্য কারণে মানব পাচার আইনের অধীনে এই অপরাধ সংঘটিত হলেও মামলা রুজু করা হয়নি। এসব অভিযোগে আসন্ন হজে অতিরিক্ত ২৫ হাজার হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধির বাংলাদেশের প্রস্তাব সৌদি সরকার নাকচ করে দিয়েছে। একবার নাকচ হওয়ার পর কোটা বৃদ্ধির আশা সুদূরপরাহত বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করছে। এখন সৌদি সরকারের ওমরাহ ভিসার নিষেধাজ্ঞা তুলতে হলে ফিরে না আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ফেরত আনতে হবে। যদিও সেটি করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। সরকারের উচিত অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ধর্মপ্রাণ বাঙালী মুসলমানের ধর্মপালনের পথে প্রতিবন্ধকতা দ্রুত অপসারণ করাটাই এই মুহূর্তের অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
×