স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন বলেছেন, নির্বাচনই গণতন্ত্রের একমাত্র পূর্বশর্ত নয়। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র হচ্ছে, প্রতিনিয়ত জবাবদিহিতা। যুক্তরাজ্য টেকসই গণতন্ত্রের জন্য সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনাকে উৎসাহিত করে। তিনি আরও বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়াটা লজ্জাজনক। এছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির না আসাটা দুর্ভাগ্যজনক বলেও মন্তব্য করেন গিবসন। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়েজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিম ও সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন আশা প্রকাশ করেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র তাদের কাজের মাধ্যমে ঢাকাকে আদর্শ নগরীতে পরিণত করবেন। এ মেয়ররা যুক্তরাজ্যের মেয়রদের মতোই কাজ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেন নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন সকালে পর্যবেক্ষণের পর সুষ্ঠু পরিবেশের কারণে আমি স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক সারাদিন সেই সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় থাকেনি। দুপুরের দিকে বিএনপিও নির্বাচন বর্জন করে। এরপরেও আমরা আশা করেছিলাম, যেসব ইস্যুতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে সব বিষয়ে তদন্ত করবে। কিন্তু সেটি পরে আর করা হয়নি, এটা খুবই লজ্জাজনক। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রশংসাও করেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার এদেশে গণতন্ত্রের যাত্রা ব্যাহত হলেও মানুষ গণতন্ত্রেরই পক্ষে। যা বাংলাদেশের জন্য খুব ইতিবাচক। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে হাইকমিশনার গিবসন বলেন, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতা রয়েছে। তবে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা আর দায়িত্বশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এমন পররাষ্ট্র নীতিকে উত্তম বলে প্রশংসা করেন। এছাড়া মানবাধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে রবার্ট গিবসন বলেন, মানবাধিকারের বিষয়ে ছয়টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। এগুলো হলোÑ মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নির্যাতন বন্ধ, মৃত্যুদ- রহিত, ধর্ম পালনে স্বাধীনতা, নারী অধিকার এবং ব্যবসা বাণিজ্যে স্বাধীনতা।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে মৃত্যুদ- দেয়া হলে যুক্তরাজ্য কেন সেই মৃতুদ-ের বিরোধিতা করেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে রবার্ট গিবসন বলেন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বজুড়ে মৃত্যুদ- প্রথা বিলোপের জন্য কাজ করছে। আমরা যে কোন ব্যক্তিরই মৃত্যুদ-ের বিপক্ষে।
বাংলাদেশে ভাল ব্যবসার পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করলেও দেশের দুর্নীতি কমাতে হবে বলে মন্তব্য করেন রবার্ট গিবসন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে গিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি ব্লগার হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার। এছাড়া ব্লগার হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়ে তাদের বিচারে কোন ছাড় না দেয়ার পক্ষেও মত দেন রবার্ট গিবসন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে গিবসন বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে তিনি আশা করেন, সরকার বিদেশী বিনিয়োগের পথে বাধা হয়ে থাকা দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলোর সমাধান করবে। তাহলেই বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি করবে।
অনুষ্ঠানে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামী সশস্ত্র গ্রুপের সমালোচনা করে রবার্ট গিবসন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আইএস সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনের প্রতি হুমকি হয়ে উঠেছে। এটা বিশ্বশান্তির জন্যও হুমকিস্বরূপ। আবার এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউরোপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় হামলা চালিয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ সব গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ করতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: