ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টুম্পা আক্তার

এসএসসি ॥ শত বাধা পেরিয়ে

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১১ জুন ২০১৫

এসএসসি ॥ শত বাধা পেরিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ জেলা সদরের খাঁনপুকুর গ্রামের ট্রাক্টরচালক ফজিবর রহমান। নিজের কোন জমি নেই। অন্যের ট্রাক্টর নিয়ে মানুষের জমি চাষ করেন তিনি। জমি চাষ করলে টাকা পান আর বন্ধ থাকলে আয়ও বন্ধ। এ আয় দিয়েই চার ছেলে ও দুই মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করছেন তিনি। মেয়ে টুম্পা বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। টুম্পার সঙ্গে কথা বললে সে জানায়, বড় হয়ে সে চিকিৎসক হতে চায়। টাকার অভাবে যার লেখাপড়া চালিয়ে নেয়াই দুস্কর, সেখানে তার চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছেটাই অবান্তর বলে মন্তব্য তার। টুম্পার বাবা ফজিবর রহমান জানান, মেয়েও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে এগিয়ে যাক। এজন্য তিনি সহৃদয়বান ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কামনা করেন। শহিদুল ও এরশাদুল স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ রিক্সাচালক বাবার সঙ্গে সঙ্গে রিক্সাচালিয়ে পড়ার খরচ মেটাত সহোদর শহিদুল ইসলাম ও এরশাদুল হক। এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে সিলেটে গেছে ইটভাঁটির কাজ করতে। সেখানেই কর্মরত অবস্থায় তাদের স্কুলশিক্ষক আবু বকর সিদ্দিকের ফোনে তারা জানতে পায় নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে তাদের জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর। বেরুবাড়ি ইউনিয়নের চর বেরুবাড়ি গ্রামের রিক্সাচালক গোলজার হোসেন ও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা মা সুফিয়া বেগমের সন্তান দুই সন্তানের এ সাফল্যে গর্বিত। তবে এ সাফল্যের আনন্দকে ঢেকে দিয়েছে অভাবে যন্ত্রণা। ছেলেদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে কতটুকু সহায়তা করতে পারবে তারা এ নিয়ে রয়েছে শঙ্কায়। সুবর্ণা আক্তার জেসিকা নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১০ জুন ॥ সুবর্ণা আক্তার জেসিকা কতদিন না খেয়ে স্কুলে গেছে সে হিসেব তার জানা নেই, প্রাইভেট পড়তে, বইখাতা কিনতে, পরীক্ষার ফি ও ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে কত মানুষের দ্বারে-দ্বারে ঘুরেছে এসব মনে করে আজ চমকে ওঠে সে। তবুও তার মনে কোন দুঃখ নেই। কারণ সুবর্ণা এবার মাদারীপুর ডনোভান সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। শত বাঁধা পেরিয়ে সাফল্যের শীর্ষে এসেও মিলিয়ে যাচ্ছে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। সুবর্ণার পিতা আবুল কালাম হাওলাদার একজন বদলি পরিবহন শ্রমিক। মা আকলিমা বেগম গৃহিনী। তিন ভাইবোনের মধ্যে সুবর্ণা দ্বিতীয়। মাদারীপুর শহরের পাঠককান্দি এলাকায় তাদের বসবাস। পিতার আয় প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুশ’ টাকা। তাও অনিশ্চিত। এ নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে তাদের সংসার। যেখানে দারিদ্রতাই তাদের পরিবারের একমাত্র সাথী। শাহীন নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগনা, ১০ জুন ॥ শাহীনের বাবা দিনমজুর আবদুল কাদের। ৬ মাস আগে মা শিউলী বেগম ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেছে। ওই সময় থেকে বাবা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। বাবা-মা হারা শাহীন এ বছর বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তালতলী উপজেলার ছোটবগী গ্রামে তাদের বাড়ি। বাবা আবদুল কাদের পালিয়ে যাওয়ার কারণে চাচা খালেক মিয়ার আশ্রয়ে দু’ভাই জীবনযাপন করছে। অর্থের অভাবে ছোট ভাই তুহিন লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করছে। গরীব শাহীনের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
×