ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসহায় বাংলাদেশের বোলিং!

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১১ জুন ২০১৫

অসহায় বাংলাদেশের বোলিং!

মিথুন আশরাফ ॥ উইকেট ব্যাটিং নির্ভর। তাই বলে এমন। কোন উইকেটই পড়বে না একদিনে! বাংলাদেশ বোলাররা কোন উইকেটই প্রথমদিনে তুলে নিতে পারবে না। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে ভারত একতরফা দাপটই দেখাচ্ছে। প্রথম দিনে বৃষ্টির বাধায় খেলা হলো ৫৬ ওভার। ফ্লাডলাইট জ্বালিয়েও ৯০ ওভারের ৩৪ ওভারই খেলা হলো না। এর মধ্যেই ৭৩ রানে নতুন জীবন পাওয়া শেখর ধাওয়ানের ১৫০ ও মুরলি বিজয়ের ৮৯ রানে বিনা উইকেটে ২৩৯ রান করে ফেলেছে ভারত। তাতে ফতুল্লা টেস্টে দুর্দশাতেই পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এমনই দুর্দশা, এখন ব্যাটসম্যানদেরই যা করার করতে হবে। ঠিক যেমনটি পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে করেছিলেন তামিম, ইমরুলরা। তা না করতে পারলে এ টেস্টে বিপদই আছে। এমন দিন বাংলাদেশ এর আগেও দেখেছে। কোন উইকেট না হারিয়ে প্রতিপক্ষ পুরোদিন খেলে দিয়েছে। ২০০০ সালের পর যে পাঁচ ম্যাচে কোন উইকেট না হারিয়ে পুরোদিন খেলে দেয়ার রেকর্ড আছে, এর মধ্যে বাংলাদেশেই তিনবার সেই দুঃস্মৃতির মুখোমুখি হয়েছে। তাও আবার প্রতিটি খারাপ দিনই বাংলাদেশে ঘটেছে। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় দিনে ২৮০, ২০০৭ সালে মিরপুরে ভারত প্রথমদিনে ৩২৬ ও ২০০৮ সালে আবার চট্টগ্রামে প্রথমদিনে দক্ষিণ আফ্রিকা কোন উইকেট না হারিয়ে ৪০৫ রান করেছে। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুর্থদিনে ৩৩৫ রান করে ভারত আর ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় দিনে শ্রীলঙ্কা ৩৫৭ রান করেছিল। বুধবার আরেকটি খারাপ দিন বাংলাদেশের সামনে ধরা দিয়েছে। এবারও ভারতই সেই দিন দেখাল। কোন উইকেট না হারিয়ে প্রথমদিন শেষ করে দিল ভারত। খেলা শুরু হওয়ার আগ থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, বৃষ্টি বাধা তৈরি করতে পারে। আগেরদিন কী গরম ছিল। আর বুধবার সকাল থেকেই একটু পরপর আকাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। ঠা-া বাতাস বয়েছে। তবুও খেলা শুরু হয়েছে যথাসময়েই, সকাল ১০টায়। ভারত টস জেতায় শুরুতেই বাংলাদেশের সামনে দুর্ভাগ্য ধরা দিয়েছে। উইকেট ব্যাটিং নির্ভর। তাই যে দলই টস জিতে, আগে ব্যাটিংই নিত। ভারতও তাই করল। যেই খেলতে নামলেন ধাওয়ান ও বিজয়, পুরো দিনটি নিজেদেরই করে নিলেন। দুইজন মিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডও গড়ে ফেললেন। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে উইকেটে স্পিনও ধরার কথা। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমই মঙ্গলবার তা বলেছিলেন। অথচ স্পিনাররা কিছুই করতে পারলেন না। না শুভগত, না সাকিব, না তাইজুল, না কোচ হাতুরাসিংহের পছন্দের স্পিনার জুবায়ের; কোন স্পিনারই একটি উইকেটও তুলে নিতে পারলেন না। আর স্পেশালিস্ট পেসার তো বাংলাদেশ একজন (মোহাম্মদ শহীদ) নিয়ে খেলল! বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ১৫ বছরে যা মাত্র ২ বারই দেখা গেল। তাও প্রথমবার গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুধু রুবেলকে নিয়ে খেলেছিল বাংলাদেশ। ৯১ টেস্টে দেখা গেল দুইবার। এবার শহীদকে নিয়ে খেলল। তাতে শহীদ উইকেট তো পেলেনই না, রানও দিলে প্রচুর (১২ ওভারে ৫২ রান)। এ টেস্ট যে বাংলাদেশ ড্র করার জন্যই খেলছে, তা বোঝাই গেছে। একাদশে তামিম, ইমরুল, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব, সৌম্য, টেস্টে ৭৭তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হওয়া উইকেটরক্ষক কাম-ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলছেন। ঠিক যেমনটি পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে ভাবনা করা হয়েছিল। এবারও তাই হয়েছে। তাতে এখন ড্র মিললেই হয়। তা কী সম্ভব? সকালের সেশন তখনও শেষ হয়নি। আর কিছুক্ষণ বাকি। ৬ ওভারের মতো বাকি। সাড়ে এগারোটা বাজতেই বৃষ্টি নামে। ততক্ষণে ভারতের দুই ওপেনার ‘ওয়ানডে স্টাইলে’ খেলে ২৩.৩ ওভারে ১০৭ রান করে ফেলে। এক বল আগেই তাইজুলের বলে ৭৩ রানে থাকা ধাওয়ানের ক্যাচ শর্ট মিডউইকেটে মিস করেন শুভগত হোম। ধাওয়ানও আউট হওয়া থেকে বাঁচলেন, বৃষ্টিও নামল। বৃষ্টি নামতেই খেলা বন্ধ হয়। এমন সময় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে তার টুইটার বার্তায় বলে দিলেন, ‘বাংলাদেশের বোলিংয়ে কোন ধারই নেই। এ টেস্ট ভারতই জিতবে।’ ভোগলে’র এতটা আত্মবিশ্বাসের পেছনে যুক্তি সেই বাংলাদেশের বোলারদের ধারহীন বোলিং। কিন্তু খেলা কী একদিনেই শেষ? একাদশ নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই এক পেসার নিয়ে খেলায় অনেক বিতর্ক হচ্ছে। বিসিবির পরিচালক আকরাম খান তো সরাসরিই এক পেসার নিয়ে খেলার সমালোচনা করেছেন। যেখানে ভারত ৩ পেসার, ২ স্পিনার ও ৬ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছে, সেখানে বাংলাদেশ ৭ ব্যাটসম্যান, ৩ স্পিনার, ১ পেসার নিয়ে খেলছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ যে করেই হোক ম্যাচ থেকে ভারতকে রেজাল্ট বের করতে দিতে চাইছে না। আর ভারত জেতার জন্যই নেমেছে। সেই জেতার লক্ষ্যে আবার প্রথমবারের মতো পূর্ণমেয়াদে টেস্ট নেতৃত্ব দেয়া বিরাট কোহলি যেমন মঙ্গলবার বলেছিলেন, ‘চতুর্থ, পঞ্চমদিনে কোন বোলার কাজে লাগবে, তা দেখেও একাদশ করা হবে।’ সেই দিকেই দৃষ্টি দিয়েছে ভারত। তাতে পেসার ৩ জন নিয়ে খেলছে ভারত! শেষ দুই দিনেই ম্যাচ বের করে নিতে চায় কোহলিরা। যে অবস্থা এখন ম্যাচে, তাতে তো মনে হচ্ছে প্রথমদিনেই যা করার করে নিয়েছে ভারত। যদি বৃষ্টি না হতো, আর খেলা এক সেশন না হতো; দিন শেষে স্কোরবোর্ডে আরও রান জমা হতো। সাড়ে তিনটায় খেলা শুরু হলো। তাতে শেষে গিয়ে ফ্লাডলাইট জ্বালিয়েও খেলা চলছিল। তবে ৬ ওভার কমই খেলাতে হলো। ভারত যে ২৩৯ রান করেছে, প্রতি ওভারে প্রায় সাড়ে চার রান করে তুলেছে। সেই হিসেব ধরলে খেলা যে হলো না ৩৪ ওভার, তাতে আরও ১৭৫ রান হওয়ার কথা। তাতে প্রথমদিনেই চার শ’ রানের কাছাকাছি চলে যেত। তাতে বাংলাদেশের ওপর আরও চাপ তৈরি হয়ে যেত। এখনও চাপ আছে। তবে সঙ্গে কী এখনও ড্র করার স্বপ্ন বেঁচে নেই? তাও আছে। তবে এখন তা করতে পারেন শুধু ব্যাটসম্যানরাই। স্বাভাবিকভাবেই ভারত এখন ৫০০, ৬০০ রান না করে ইনিংস ঘোষণা করবে না। তা করতে গেলে অন্তত আজ দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত খেলতেই হবে। যদি ভারত ইনিংস ঘোষণা করার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনটি উইকেট হারানো ছাড়াই কাটিয়ে দিতে পারে, তাহলে এ টেস্ট থেকে ড্র বের করে নিতেও পারে মুশফিকবাহিনী। তৃতীয় দিনটিও এজন্য কাটিয়ে দিতে হবে। তাহলে হাতে থাকবে দুই দিন। যে দুই দিনে বাংলাদেশ ফলোঅন এড়ানোর সঙ্গে বড় স্কোর দাঁড় করাতে পারলে ম্যাচ হারও এড়ানো যাবে। অথবা প্রথম ইনিংসে যাই হোক, পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে যেমন ব্যাটিং করেছিল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, তেমন কিছু করতে পারলেও হবে। আপাতত যে অবস্থা, তাতে ম্যাচ ভারতের দিকেই হেলে আছে। ধাওয়ান ও বিজয় মিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি গড়লেন। ২০০৭ সালে ওয়াসিম জাফর ও দিনেশ কার্তিক মিলে যে উদ্বোধনী জুটিতে ১৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন, সেই রেকর্ডকেও পেছনে ফেলে দিলেন ধাওয়ান ও বিজয়। তাতে ভারত প্রথমদিনেই ফতুল্লা টেস্টে সুবিধাজনক অবস্থাতেই চলে গেল। দুর্দশায় পড়ে গেল বাংলাদেশ।
×