ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিয়ানমারে বিদ্রোহী ঘাঁটিতে মোদির নির্দেশেই অভিযান

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১১ জুন ২০১৫

মিয়ানমারে বিদ্রোহী ঘাঁটিতে মোদির নির্দেশেই অভিযান

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ হেলিকপ্টার গানশিপ নিয়ে উড়ে মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ঢুকে দুটি বিদ্রোহী ঘাঁটিতে অভিযানটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশেই হয়েছিল। ভারতীয় কমান্ডোদের এই হামলার মঞ্চ তৈরি হয়েছিল অন্তত পাঁচদিন আগে, যে পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং সেনাপ্রধান দলবীর সিং। হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য অজিত দোভাল প্রধানমন্ত্রী মোদির সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে সঙ্গী হননি। সেনাপ্রধান দলবীরও তার যুক্তরাজ্য সফর বাতিল করেছিলেন। খবর এনডিটিভি, বিডিনিউজ ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের। মঙ্গলবার অভিযানের পর রাতে ভারতের তথ্য প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর স্থানীয় একটি টেলিভিশনে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢোকার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশেই সেনাবাহিনীর পরিকল্পনায় ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অভিযানটি চালানো হয়। ‘ইরাক, ইয়েমেন কিংবা বিশ্বের যে কোন প্রান্তেই ভারতীয়দের ওপর হামলা মেনে নেয়া হবে না। যেসব প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি রয়েছে, তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।’ মঙ্গলবার মেশিনগানসহ এমআই-১৭ হেলিকপ্টারে উড়ে মিয়ানমার সীমান্তে বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারতীয় কমান্ডোরা। গত সপ্তাহে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে সেনাবাহিনীর একটি গাড়িবহরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হামলায় ২০ সেনা নিহতের পর এ হামলা চালানো হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, সীমান্তের ওপারে নোকলাকে এনএসসিএনের (খাপলাং) একটি এবং মণিপুরের উখরুল জেলার সীমান্ত বরাবর কেওয়াইকেএলের একটি ঘাঁটিতে এ অভিযান চালানো হয়। যেভাবে হামলা ॥ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলেছে, শেষ মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিদ্রোহীদের অবস্থান নিশ্চিত হয়েই অভিযান চালানোয় তা সফল হয়েছে; যদিও অভিযানে ঠিক কতজন বিদ্রোহী হতাহত হয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি ভারতের পক্ষ থেকে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র এনডিটিভিকে জানায়, রাত তিনটায় মেশিনগান নিয়ে মিয়ানমার সীমান্তে ঢুকে পড়ে বিমানবাহিনীর সহায়তায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোবাহী হেলিকপ্টার। অভিযান চলে বিকেল পর্যন্ত। এ সময় হেলিকপ্টার লক্ষের ওপর চক্কর দিতে থাকে এবং মেশিনগান থেকে অবিরাম গুলি ছুড়তে থাকে। অভিযান শুরুর কয়েক মিনিট আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছিল। তবে তারাও বিষয়টি চেপে গিয়েছিল বলে এনডিটিভি জানায়। বিদ্রোহী লক্ষে সফল হামলার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২১ প্যারা রেজিমেন্টের কমান্ডোরা নিরাপদেই তাদের ঘাঁটিতে ফেরেন বলে সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অভিযানসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুটি ক্যাম্পে কমপক্ষে ১৫০ বিদ্রোহী ছিল এবং দুটিই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০ হতে পারে। পরদিন মিয়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিযানের বিষয়টি জানান। সীমান্তে যৌথ অভিযান চালানোর বিষয়ে ১৯৯০ সালে একটি চুক্তি করেছে ভারত ও মিয়ানমার। ‘মিয়ানমার অভিযান’ দৃষ্টি এড়াবে না পাকিস্তানের ॥ ভারতের নিজ সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে চাঞ্চল্যকর ও সফল অভিযান পরিকল্পনা এর প্রতিবেশী দেশে বিশেষত এর পশ্চিম সীমান্তে দৃষ্টি এড়াবে এমন সম্ভাবনা দেখা যায় না। ঐ পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান ট্যাক্টিক্যাল সীমিত সামরিক অভিযানে ব্যবহার্য বা নন স্ট্র্যাটেজিক পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ভারতের অনুরূপ কোন অভিযান ব্যর্থ করে দিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তানের ভূখ-ে ভারত এরূপ কোন হামলা চালাতে পারে কিনা, মিয়ানমার অভিযানের পর তা নিয়ে খুব উৎসাহের সঙ্গেই বিতর্ক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি ভারতের কোথাও মুম্বাই ধাঁচের আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে অনুরূপ পাল্টা পদক্ষেপ নিতে সরকারের ওপরও চাপ আসবে। ভারতের তথাকথিত কোল্ড স্টার্টতত্ত্বের জবাব দিতেই পাকিস্তান এর ভূখ-ে ভারতীয় সৈন্যদের প্রবেশকে ঠেকাতে ক্ষুদ্র, কম কার্যক্ষম বা তথাকথিত ট্যাক্টিক্যাল পরমাণু অস্ত্রের দিকে দৃষ্টি দিতে শুরু করেছে। কোল্ড স্টার্টতত্ত্বে সন্ত্রাসী দল বা শিবিরগুলোকে নিষ্ক্রিয় করতে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টা হামলা চালানোর চিন্তাভাবনা করা হয়। মিয়ানমার থেকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পাকিস্তান এরূপ কোন অনুপ্রবেশকে এর সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে গণ্য করবে। ভারতের সেনাবাহিনী কখনও এ তত্ত্বের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি। মুম্বাই হামলার পরই পাকিস্তান এসব নন স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা জোরদার করছে। ২০১২ সালের রিপোর্টে মার্কিন পরমাণু বিশেষজ্ঞ হ্যান্স এম ক্রিস্টেনসেন পাকিস্তানকে এমন ৫টি দেশের তালিকাভুক্ত করেন, যেগুলো ট্যাক্টিক্যাল পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে বা করছে। অন্য ৪টি দেশ হলো চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের সেনাবাহিনীর ঘোষণায় নিশ্চিত করেছে যে, মিয়ানমার অভিযান গত সপ্তাহে মনিপুরে বিদ্রোহীদের হাতে ১৮ সৈন্য নিহত হওয়ার প্রতিশোধমূলক ঘটনা মাত্রই ছিল না, এক আগাম পদক্ষেপও ছিল, কারণ যারা এ অভিযানে নিহত হয় তারা ভারতে আরও হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। অবশ্য পাকিস্তানের কথা বলতে গেলে ভারতের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কথা এই যে, পাকিস্তান এর ট্যাক্টিক্যাল পরমাণু অস্ত্রের পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এমন স্বল্পপাল্লার নসর ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ৪ জুনের এক ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালায়। জঙ্গীদের হামলায় ভারতের মনিপুর রাজ্যে ১৮ ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। মিয়ানমারের ভেতর পরিচালিত ওই সেনা অভিযানে প্রায় ১৫ বিদ্রোহী নিহত হয়।
×