ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য

নিষিদ্ধ জঙ্গীরাই নতুন নামে নানা কৌশলে সংগঠিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১১ জুন ২০১৫

নিষিদ্ধ জঙ্গীরাই নতুন নামে নানা কৌশলে সংগঠিত হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নতুন নামে সংগঠিত হচ্ছে। এটা জঙ্গীদের তৎপরতার নতুন কৌশল। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে জুনুদ আল তাওহিদ আল খলিফা, বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ, শহীদ হামজা ব্রিগেড ইত্যাদি নামে তিনটি জঙ্গী সংগঠনের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। নতুন এই তিন জঙ্গী সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সংগঠিত হয়ে তৎপরতা চালানোর বিষয়ে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর ও আনসারুল্লাহ-বাংলাটিমসহ মোট ছয়টি সংগঠনের জঙ্গীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নতুন নামের জঙ্গী সংগঠন তৈরি করছে। ইতোমধ্যে জুনুদ আল তাওহিদ, বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ, শহীদ হামজা ব্রিগেড ইত্যাদি জঙ্গী সংগঠনের নেতারা ধরা পড়েছে। তারা দেশের ভেতরে নাশকতা ও ব্যাংক ডাকাতি এবং দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক উগ্রপন্থী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) পক্ষে কর্মী সংগ্রহ, তাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নতুন নামের জঙ্গী সংগঠনগুলোতে ১৫ থেকে ২০ জন করে জঙ্গী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামানো হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সতর্ক থাকায় নতুন নামের জঙ্গি সংগঠনের নেতারা ধরা পড়ে জঙ্গি তৎপরতার নানান তথ্য দিচ্ছে। মাত্র তিন দিন আগে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে ফিদা মুনতাসির সাকের নামে এক জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি জুনুদ আল তাওহিদ আল খলিফার জঙ্গী নেতা। ফিদা মুনতাসির সাকেরকে গ্রেফতারের আগে গত মাসের শেষদিকে রাজধানীর বারিধারা থেকে আব্দুল্লাহ আল গালিব নামে আরেক জঙ্গী ধরা পড়ে, যে নতুন জঙ্গী সংগঠন জুনুদ আল তাওহিদ আল খলিফার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে গোপন তৎপরতা শুরু করে। গ্রেফতারকৃত দুই জঙ্গি নেতাই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বাংলাদেশ শাখা সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিল। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবির ও হিযবুত তাহরীর জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এখন তারা নতুন জঙ্গী সংগঠন জুনুদ আল তাওহিদ আল খলিফা নাম দিয়ে তৎপরতা শুরু করেছে। জুনুদ আল তাওহিদ আল খলিফা নতুন জঙ্গী সংগঠনে ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণ দেয়ার পর তাদের দিয়ে আইএসের আদলে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার অপতৎপরতা চালানো হয়। শহীদ হামজা ব্রিগেড নামে এক নতুন জঙ্গী সংগঠনের সন্ধান পাওয়া গেছে চট্টগ্রামে। গত মঙ্গলবার শহীদ হামজা ব্রিগেড জঙ্গী সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান খালেদ হাসান ওরফে রাকিব ধরা পড়েছে। তাকে গ্রেফতারের আগে র‌্যাবের এক বিশেষ টিম চট্টগামে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে রাকিবের নাম পাওয়া যায় এবং নতুন জঙ্গী সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সন্ধান পায় র‌্যাব। তারা সবাই ওয়ানম্যান আর্মি হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের একেকটি উইং-এ ৭ জন করে সদস্য আছে বলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ নামে নতুন একটি জঙ্গী সংগঠন তৈরি করে গত সোমবার রাজধানীর বনশ্রী ও সূত্রাপুর থানা এলাকায় ধরা পড়েছে ৯ জঙ্গী। তারা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হুজি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য। ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা নিয়ে তৎপরতা চালানোর সময় ধরা পড়া ৯ জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের আদলে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় ফান্ড সংগ্রহের জন্য ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা মূলত হরকত-উল-জিহাদ (হুজি) ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য। এই দুটি জঙ্গী সংগঠনসহ ছয়টি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ নামে নতুন জঙ্গী সংগঠন তৈরি করে তৎপরতা শুরু করে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও সতর্কতার কারণে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার ছয়টি জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধ করেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনসহ অন্যান্য জঙ্গীরা নতুন প্লাটফরম হিসেবে নতুন নামে জঙ্গী সংগঠন গড়ে তুলে তৎপরতা চালাতে চাইছে। তবে নতুন নামের জঙ্গী সংগঠন এবং জঙ্গীরা এখনও পর্যন্ত খুব একটা বিপজ্জনক নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। জঙ্গী সংগঠন ও জঙ্গী তৎপরতার বিষয়ে কঠোর নজরদারি, সতর্কতা ও অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
×