ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইএমএফ বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন

বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ ॥ ১৪ ধাপ অগ্রগতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ জুন ২০১৫

বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ ॥ ১৪ ধাপ অগ্রগতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বিশ্ব অর্থনৈতিক সূচকে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। সংস্থা দুটির মতে, ১৪ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৪৪তম। এ সময় বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ বেড়ে ২০৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭২ দশমিক ৪০ ডলার। ২০১৩ সালে ছিল ৪৬১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বিশ্ব উন্নয়ন সূচক’ থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বিশ্ব উন্নয়ন সূচক’ এ বাংলাদেশের অবস্থান ২০১৩ সালে ছিল ৫৮তম। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই শুধু নয় সামাজিক ক্ষেত্রে দশ সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাপক। এমনই চিত্র উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে। দেশের সামাজিক দশ সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জনের কারণ হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সরকার দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যা চলতি মাস থেকে বাস্তবায়ন শেষ হবে। এসব পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং দারিদ্র্যের হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান সরকার পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে। সরকারের পূর্ব ও বর্তমান মেয়াদকালে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ সময়কালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘাত প্রতিঘাতের মাঝেও অর্জিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারের দক্ষ সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার ফলে রাজস্ব আহরণে উর্ধগতি এবং ঋণ গ্রহণে স্থিতিশীলতা রজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রতিবেশী ও সমমানের রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশেল ভাবমূর্তি উজ্জ্ব¡ল করেছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতেও (জিডিপি বেজড অন পিপিপি) বাংলাদেশ সামনে এগিয়েছে তিন ধাপ। ২০১৩ সালের হিস?াব অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৬তম। তবে ২০১৫ সালে উঠে আসে ৩৩তম স্থানে। গত ছয় বছরে ক্রমাগতভাবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে জিডিপি অর্জন করে চলেছে বাংলাদেশ। যা গোটা বিশ্বের কাছে প্রশংসা পেয়েছে। তাছাড়া প্রবৃদ্ধি এখন উন্নীত হয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশে। তবে জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নম্বর স্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালে ছিল ১৬ হাজার ৭৬৮ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে চীন। ২০১৩ সালে চীনের জিডিপির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ২৪০ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ২১১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাপানের জিডিপির পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ২১০ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালে ছিল বেশি; ৪ হাজার ৯১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। জার্মানির অবস্থান চতুর্থ (৩ হাজার ৪১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার)। ২০১৩ সালে ছিল ৩ হাজার ৭৩০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাজ্যের অবস্থান পঞ্চম। তারপরে আছে ফ্রান্স। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত তিন ধাপ এগিয়ে দশম স্থান থেকে সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে। ২০১৩ সালে ভারতের জিডিপির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৮৭৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৩০৮ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদন অনুযায়ী ভিয়েতনাম, তাজাকিস্তান, পর্তুগাল, কাতার, নিউজিল্যান্ড ও পেরুকে পেছনে ফেলে উপরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ক্রয় ক্ষমতার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে এক নম্বরে উঠে এসেছে চীন। এ হিসেবে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১৬ হাজার ৭৬৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার জিডিপি অর্জনের মধ্য দিয়ে এক নম্বরে ছিল। ২০১৫ সালে ১৮ হাজার ৯৭৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার জিডিপি অর্জন করে এক নম্বরে উঠে এসেছে চীন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। বৈদাশিক মুদ্রার রির্জাভ ছাড়িয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলার। রফতানি আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার। গত ৬ বছরে ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। পরের পাঁচ বছরে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার দাঁড়?ায় ৪০ শতাংশে। ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা বর্তমানে নেমে এসেছে ২৪ শতাংশে। এদিকে, ২০১৮ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার আরও ১০ শতাংশ নিচে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান বিকাশের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিগত সময়ে সরকার মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সামাজিক যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে সেগুলো হচ্ছে, মানুষের গড় আয়ু, পানির ব্যবহার, বিদ্যুতের ব্যবহার, টয়লেট সুবিধা, নির্ভরশীলতার অনুপাত, শিক্ষার হার, শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃ মৃত্যুর হার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার এবং স্থুল প্রতিবন্ধিতা। যা সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্টাটিসটিকস অব বাংলাদেশ এসভিআরএস-২০১৩ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য অনুযায়ী মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭০ বছর ১ মাস, বিদ্যুত ব্যবহার করে দেশের ৬৬. ৯ শতাংশ, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে ৯৮.৫ শতাংশ মানুষ, স্যানিটারি পায়খানার ব্যবহার ৬৪. ২ শতাংশ, ১৫ বছরে উর্ধে শিক্ষার হার ৬১ শতাংশ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬২.২ শতাংশ মানুষ, কমেছে মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন বিষয়ে ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তাছাড়া এখন সুপেয় বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির হার বেড়েছে। এসব কারণে আগে যেসব প্রাণঘাতি রোগ-বালাই দেখা দিত, বিভিন্ন রোগে মহামারি হয়ে মানুষ মারা যেত এখন সেসব আর নেই বললেই চলে। ফলে মানুষের গড় আয়ু ৪৩ বছর থেকে বেড়ে এখন ৭০ বছর ১ মাস হয়েছে। সূত্র জানায়, এর আগে চলতি বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন বলেছেন, দারিদ্র্য নিরসন ও মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতা থেকে অন্য দেশগুলো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। পাঁচ দিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করার আগে তিনি এসব কথা বলেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন আরও বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা অব্যাহত রাখবে। কিন্তু সরকারকে যেসব বিষয়ের প্রতি
×