ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাপয়েন্টেড ডে ৩১ জুলাই

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১১ জুন ২০১৫

এ্যাপয়েন্টেড ডে ৩১ জুলাই

ক্রমে লুপ্ত হয়ে আসছে বিদ্যমান সীমান্ত পিলারগুলো। সব বাধাবিঘœ দূর করে ছিটমহল হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতাই এখন মুখ্য। ৬৮ বছরের দগদগে ক্ষত আর বেদনার অবিরাম ভার বয়ে বেড়ানোর দিন শেষে আসবে নতুনের আবাহন। দু’দেশের এই অন্ধ কারা প্রকোষ্ঠের মতো বন্দিত্বের দশা মোচন প্রক্রিয়ার সমাপন ঘটার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে এক নয়া জাগরণ। আনন্দ উচ্ছল জীবন তারাও এখন চাইতে পারবে। তাদের ভুবনজুড়ে থাকবে সাত দশক ধরে বিচ্ছিন্ন মাতৃভূমি। পরবাসী ভূখ- বাসিন্দার জীবন থাকছে না। আর দিন পঞ্চাশ পর ৩১ জুলাই মধ্যরাতে শুরু হবে ছিটমহল বিনিময়ের আনুষ্ঠানিক পর্ব। সীমান্ত পিলারে ঘেরা দু’দেশের মানুষ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান্তির নিশ্বাস নেবে। যে দেশ ছিল তার কাছে প্রতিবেশী, পিলারের ওপারের মানুষ; তারা হয়ে যাবে পিলারমুক্ত স্বাধীন স্বদেশের নাগরিক। ছিটমহলের বাসিন্দা বলে নাক সিঁটকে যাদের দু’দেশেই ডাকা হতো ‘ছিট’, সেই তারা প্রাণের প্রবাহ নিয়ে জীবনের স্বপ্ন কুড়িয়ে আনবে এক নতুন ভোর, নতুন ভুবনে নেবে ঠাঁই। কিন্তু আলোর নিচে যেমন থাকে অন্ধকার তেমনি এই নবজাগরণের অপর পিঠে আছে শোষণ, বঞ্চনা, অবহেলার প্রবঞ্চনার নানা দিক। একদা চোরাকারবারিদের নির্বিঘœ পাচারের ট্রানজিট স্থল ছিটমহলগুলোতে মানুষের কোন অধিকার ছিল না। পাচারকারী, ভূমি দখলকারী এবং প্রভাবশালীদের দৌরাতেœ্য তাদের জীবন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। অনেকের জমি এমনকি বসতভিটা পর্র্যন্ত বেদখল। ভূমিহীনরা অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে দিন গুজরান করে আসছে। ছিটমহলবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য অধিকার বলে কিছুই ছিল না। তাদের জীবন নির্বিঘœ নয়। এখনও যে তা হয়ে উঠবে, তেমন নিশ্চয়তা পুরোপুরি পাওয়া যায় না। ছিটমহল হস্তান্তরের পর স্পষ্ট হবে তারা ভূসম্পত্তির মালিকানা কত পাবে। যারা অদলবদল করবে দেশ, তাদের অনেকেই যে একই জমি একাধিক জনের কাছে বিক্রি করবে না, তার নিশ্চয়তা মেলে না। দু’দেশের অর্ধলাখের বেশি মানুষের ছিটমহলগুলোতে এই হস্তান্তরপূর্ব সময়টাও বিপজ্জনক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অধিবাসীদের অন্য অধিকারগুলো বিঘিœত হতে পারে। এই যে পঞ্চাশ দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে, এই সময়টাতে বাসিন্দাদের সংশ্লিষ্ট দেশের দায়িত্ব হবে নিরাপত্তা বজায় রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ। মানবেতর জীবন থেকে উত্তরণের জন্য অধিক সহায়তা প্রদান করাও কর্তব্য। স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর হওয়ার পথে সব বাধা কেটে যাওয়ার পর ছিটমহল বিনিময় শুরু হবে। ৩১ জুলাইকে তাই ‘এ্যাপয়েন্টেড ডে’ হিসেবে ধরে কাজ শুরু করা হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে প্রায় ৮শ’ পরিবার বাংলাদেশ হতে ভারতের দিকে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত চাইছে আগামী নবেম্বরের মধ্য এই পরিবারগুলোর পুনর্বাসন সম্পন্ন করতে। ছিটমহল বিনিময় পরবর্তী পুনর্বাসনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভারত। বাংলাদেশ সরকারও বাজেটে ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। উভয় সরকারের সম্মতিতে দু’দেশের ছিটমহলে কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা যৌথভাবে পরিদর্শনের কাজ চালাবে। তারা সমীক্ষা শেষে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সীমান্তের শতছিন্ন অবস্থার একটা বড় কারণ ছিল ছিটমহল। চুক্তির পর এখন দু’দেশের সীমানা সুর্নিদিষ্ট হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহল বাসিন্দারা চুক্তি অনুযায়ী নিজ নিজ অধিকার ফিরে পাবে; এই প্রত্যাশা তাদের যেমন তেমনি আমাদেরও।
×