ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বাংলা একাডেমি আঙ্গিনায় ঢাকা বইমেলা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১০ জুন ২০১৫

বাংলা একাডেমি আঙ্গিনায় ঢাকা বইমেলা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বশেষ ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা। দীর্ঘ পাঁচ বছরের বিরতি দিয়ে আবার শুরু হলো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত এই গ্রন্থমেলা। তবে এবারের ১৮তম এ মেলার নামকরণে এসেছে পরিবর্তন। মেলার শিরোনাম থেকে আন্তর্জাতিক শব্দটি উঠে গিয়ে পরিণত হয়েছে ঢাকা বইমেলা ২০১৫। চেতনার জাগরণে বই সেøাগানে মঙ্গলবার থেকে বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত আঙিনায় শুরু হলো বইয়ের এই মেলা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মেলা আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশ সমিতি। ৬টি সরকারী সংস্থার সঙ্গে ৬৮টি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী এই বইয়ের আড়ং। মঙ্গলবার জ্যৈষ্ঠের বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে মেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবা মশকুরের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি অসীম সাহা। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও সচিব আলতাফ হোসেন এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন গ্রন্থকেন্দ্রের সচিব অসীম কুমার দে। এ বইমেলা আয়োজনের ধারাবাহিকতার অভাবের বিষয়টি উঠে আসে আসাদুজ্জামান নূরের বক্তব্যে। তিনি বলেন, এই মেলাটি নিয়ে আমরা বিপদের মধ্যে আছি। এই গ্রন্থমেলাটির কোন ধারাবাহিকতা নেই। মাঝে দীর্ঘদিনের বিরতি দিয়ে আবার যাত্রা শুরু করল। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এটি ১৮তম মেলা হলেও আজ অবধি নিজস্ব চরিত্রে উপস্থাপিত হতে পারেনি। এর নেপথ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও আয়োজক সংস্থার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। তবে আশার বাণী উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আগামীতে সুপরিকল্পিতভাবে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এখন থেকেই সে বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হবে। বইমেলাটি আন্তর্জাতিক রূপে পরিণত না হওয়ার আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে বই নিয়ে যে কর্মপ্রবাহ চলছে সেটা আমরা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছি। বিশ্বের সঙ্গে আমাদেরও সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে। এই মেলাটি আন্তর্জাতিক মানের হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গ্রন্থানুরাগী জনসমষ্টির সমাগম ঘটত এখানে। এর ফলে আমাদের সম্পর্কে বহির্বিশ্বের প্রচলিত নেতিবাচক ধারণাগুলো অনেক কমে যেত। তাই আমরা আগামীতে এই বইমেলাকে আকর্ষণীয় করে তোলার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বইমেলার অভিজ্ঞতার আলোকে একটি চমৎকার মেলার আয়োজন করব। এছাড়া এ বছরের নবেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে বাংলা একাডেমির বর্ধমান ভবনের পার্শ্ববর্তী উন্মুক্ত স্থানে প্যান্ডেল টাঙিয়ে তৈরি করা হয়েছে মেলার স্টল। ৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশ নিয়েছে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির অংশভুক্ত ৬৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে মেলায় ঠাঁই পেয়েছে ৭৪টি স্টল। বই সংগ্রহের পাঠকরা পাবেন ২৫ শতাংশ মূল্যছাড়। তবে আগে থেকে কোন প্রচারণা না থাকায় মেলার প্রথম দিন তেমনভাবে পাঠক কিংবা গ্রন্থানুরাগীদের সমাগম ঘটেনি। মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশের কাস্টার কেয়ার সার্ভিসের তানিয়া হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর আমরা অনেক নতুন বই প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে আছে লালনসমগ্র, রবীন্দ্রসমগ্র, কাফকা গল্পসমগ্র, আরজ আল মাতুব্বর রচনাসমগ্র ইত্যাদি। যথাযথ প্রচারণা না হওয়া আজ প্রথম দিনে তেমনভাবে পাঠকের দেখা মেলেনি। আশা করছি আগামী দু-এক দিনের জমে উঠবে এই বইমেলা। অন্যান্য প্রকাশকরাও একই রকম আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সপ্তাহব্যাপী মেলা শেষ হবে ১৫ জুন। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। বেঙ্গল শিল্পালয়ে সঙ্গীতাসর প্রাণের খেলা ॥ বাঙালীর মনন ও যাপিত জীবনের প্রাণস্ফুর্তির প্রাসঙ্গিক দুই কবি ররীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। আর এই দুই কবিকে স্মরণ করে প্রাণের খেলা শীর্ষক দুই পর্বের সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। সে আয়োজনে আগেই পরিবেশিত হয়েছে নজরুলের গান। আর মঙ্গলবার পরিবেশিত হলো কবিগুরুর গান। সন্ধ্যায় ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে ধ্বনিত হলো রবীন্দ্র সুরের ঐশ্বর্য। মর্মগ্রাহী সুর ও বাণীর আবেদনে সিক্ত হলো শ্রোতার অন্তর। প্রেরণাসঞ্চারী গানগুলো পরিবেশন করেন প্রখ্যাত দুই কণ্ঠশিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী ও শামা রহমান। শামা রহমান পরিবেশিত গানগুলোর শিরোনাম ছিলÑ আজ যেমন করে গাইছে আকাশ, ওগো তুমি পঞ্চদশী, ভুবনজোড়া আসনখানি, আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, ছায়া ঘনাইছে বনে বনে, কণ্ঠে নিলেম গান আমার শেষ পাড়ানির কড়ি, লিখন তোমার ধুলায় হয়েছে ধূলি, দীপ নিবে গেছে মম, যখন এসেছিলে অন্ধকারে। মহিউজ্জামান চৌধুরীর গাওয়া গানগুলোর শিরোনাম হলোÑ ওই জানালার কাছে বসে আছে, দৈবে তুমি কখন নেশায় পেয়ে, একদা তুমি প্রিয়ে, তুমি রবে নীরবে, আমায় দাও গো ব’লে, হার-মানা হার, আজি মর্মরধ্বনি কেন জাগিল রে, তুমি যেও না, যতবার আলো জ্বালাতে চাই, আমি চঞ্চল হে, এরে ভিখারি সাজায়ে কী রঙ্গ তুমি করিলে, অকারণে অকালে মোর পড়ল যখন ডাক, শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে। শিল্পীদের সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন তবলায় ইফতেখার আলম প্রধান, কী-বোর্ডে রূপতনু, গিটারে দীপন এবং বেহালায় আলমাস আলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। মিলন কান্তি দের আবৃত্তিসন্ধ্যা ॥ প্রখ্যাত যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে। যাত্রাপালার আঙিনা পেরিয়ে মঙ্গলবার তাকে দেখা গেল অন্য রূপে। কবিতার দোলায়িত ছন্দের শিল্পিত উচ্চারণে মুগ্ধ করলেন আবৃত্তিপ্রেমীদের। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার অনুষ্ঠিত হলো তার একক আবৃত্তিসন্ধ্যা। যাত্রা সংগঠন দেশ অপেরা আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। মঞ্চসারথী আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অতিথি ছিলেন সাবেক সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়। আবৃত্তিসন্ধ্যায় ১৫টি কবিতা আবৃত্তি করেন মিলনকান্তি দে। শুরুতেই তিনি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম সর্গ আবৃত্তি করেন। এরপর পাঠ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’, ’দেবতার গ্রাস’ ও ‘সামান্য ক্ষতি’। পড়ে শোনান কাজী নজরুলের ‘বিদ্রোহী’, ‘মানুষ’ ও ‘খেয়াপাড়ের তরণী’ কবিতা তিনটি। এ্যাথেনা গ্যালারির চিত্রাঙ্কন কর্মশালা শুরু ॥ রাজধানীর প্রগতি সরণির এ্যাথেনা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের আয়োজনে মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী চিত্রাঙ্কন কর্মশালা। সকালে গ্যালারি প্রাঙ্গণে শুরু হয় এই কর্মশালা। কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করে এ্যাথেনার চেয়ারপার্সন নিলু রওশন মোর্শেদ। ‘দ্য বিউটি অব ড্রইং বা অঙ্কন সৌন্দর্য’ শীর্ষক এই গ্রুপ অঙ্কন কর্মশালাটি পরিচালনা করছেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী জামাল আহমেদ। কর্মশালায় দেশের বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর পাশাপাশি কয়েক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ শিল্পীসহ মোট ১১ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। কর্মশালাটি চলবে কাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত।
×