ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার ফেরত দেড় শ’ জনের সঙ্গে চলে এসেছে দুই রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১০ জুন ২০১৫

মিয়ানমার ফেরত দেড় শ’ জনের সঙ্গে চলে এসেছে দুই রোহিঙ্গা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ কড়া নজরদারি ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে গৃহীত ব্যাপক তৎপরতার মধ্য দিয়ে গত সোমবার যে ১৫০ বাংলাদেশীকে মিয়ানমার থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তার মধ্যেও মিয়ানমারের দুই রোহিঙ্গা চলে এসেছে। আবার এদের মধ্যে একজন মানবপাচারকারী চক্রের দালালও রয়েছে। গত সোমবার মিয়ানমার থেকে পতাকা বৈঠক শেষে এদের ফিরিয়ে আনার পর কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ডরমেটরিতে রাখা হয়েছে। এদের প্রত্যেকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া থেকে শুরু করে আইনগত অন্যান্য প্রক্রিয়া চলছে। ফিরিয়ে আনা প্রত্যেকের ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ। এদিকে, যে দেড় শ’ জনকে বাংলাদেশী হিসেবে মিয়ানামার থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে দু’জন রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। এ দু’জনের একজন হামিদ হোসেন মানবপাচারকারী চক্রের দালাল। এরা ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসতি গড়েছিল। মঙ্গলবার এ দেড় শ’ জনের প্রত্যেকের জবানবন্দী গ্রহণকালে হামিদ হোসেন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের শরণার্থী মিয়ানমারের নাগরিক সলিম উল্লাহর পুত্র বলে পুলিশ জানায়। এ দুই রোহিঙ্গা নাগরিকসহ চারজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার বিকেলে পেকুয়ার মগনামা থেকে নুরুন্নবী নামের এক মানবপাচারকারী দালালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়ার বাঁশখালী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের লোভে ফেলে পাচারের কাজে জড়িত ছিল। ফেরত বাংলাদেশীদের তালিকা ॥ গত সোমবার মিয়ানমার থেকে যেসব বাংলাদেশীকে ফেরত আনা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ কক্সবাজার জেলার রমিজ উদ্দিন, নূরুল হোসেন, সাকের, সিরাজুল হক, মিজানুর রহমান, আব্দুল খালেক, মোঃ রশিদ মিয়া, সেলিম উল্লাহর ছেলে হামিদ হোসেন, শাহাজান, জসিম উদ্দিন, ইয়াছিন আরফাত, শহিদুল ইসলাম, ইউসুফ খান, আবুল হোসেন, একরাম, ইকরাম, সোহেল সরকার, মোঃ ইদ্রিচ, ইমরান হোসেন, জসিম উদ্দিন, আব্দুস শুক্কুর, মিজানুর রহমান, গিয়াস উদ্দিন, সাদ্দাম হোসেন, সালামত উল্লাহ, মোক্তার হোসেন, নুরুল আবছার, মুবিনুল হক, ম রফিক আলম ও সাইফুল। বান্দরবান জেলার লামা এলাকার জাহিদ ইসলাম, রহিম উল্লাহ, আঃ ছবির ও নূরুল হক। কুমিল্লা জেলার রিদোয়ান। চট্টগ্রাম জেলার মোঃ হেলাল, হাসেম, লোকমান কবির, চাঁদ মিয়া, সেলিম উদ্দিন, মোঃ বাদশা, মোঃ জলিল ও মোঃ আরিফ। ঝিনাইদাহ জেলার মফিউর রহমান, হারুন উর রশিদ, মহসিন বিশ্বাস, মোঃ সোবহান, পলাশ, রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম, আব্দুর রাজ্জাক, দুলাল, আব্দুল মালেক ও ছব্বির হোসেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার সাইফুল ম-ল, মোঃ আরিফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও মফিজুল হোসেন। টাঙ্গাইল জেলার আব্দুল ছৈয়দ, উজ্জ্বল হোসেন, সাহাদত হোসেন। সুনামগঞ্জ জেলার সাহেদ উদ্দিন, রমজান আলী, শওকত আলী ও আলী হোসেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনোয়ার হোসেন ও এরশাদ। নারায়ণগঞ্জ জেলার রাসেল মিয়া ও মোঃ হালিম। নরসিংদীর এবাদুল মিয়া, ফাহাদ মিয়া, রুহুল আমিন, মেহেদী হাসান, পারু মিয়া, সালাম মিয়া, নাহাম, সাগর, জসিম উদ্দিন ও শামীম মিয়া। চাঁদপুরের কালাম ও রাজবাড়ীর সাইফুল ইসলাম। এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন এনে কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকাজে জড়িত বহু গডফাদার ও দালালের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মামলাই হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত বা অনুসন্ধান করে তৈরিকৃত পুলিশের তালিকায় নাম রয়েছে বহু দালালের। অথচ সাগরপথকে বেছে নিয়ে ওই সব দালাল অবৈধভাবে মানবপাচার করেছে মালয়েশিয়ায়। এ ধরনের চিহ্নিত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে এখনও কোন মামলাই হয়নি। কক্সবাজার জেলা পুলিশ ৩৫০ জন গডফাদার, শীর্ষ দালাল ও সহযোগী দালালকে ধরপাকড়ে মাঠে কাজ করে চললেও বহু দালাল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। গডফাদার ও শীর্ষ দালালদের সঙ্গে যুক্ত থেকে শত শত লোক পাচার করে দিয়েছে মালয়েশিয়ায়। পুলিশ দালালদের বিরুদ্ধে প্রত্যহ অভিযান চালাচ্ছে দেখে ওই সব দালালের অনেকে এখন সাধু সেজে আছে। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র থাইল্যান্ডের কারাগারে ॥ মানবপাচারকারী চক্র টাকার লোভে সাগরপথে ট্রলারে তুলে দিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র সাইফুল ইসলামকেও। তাকে ধরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং কেন, তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না সে। গত বছরের মার্চে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর হাতে আটক হওয়া ওই শিশু এ যাবৎ থাই কারাগারে বন্দী জীবনযাপন করছে। সে টেকনাফের সাবরাং পানছড়িপাড়ার কালা মিয়ার পুত্র এবং সাবরাং স্কুলের ছাত্র ছিল। জানা গেছে, স্কুল ছুটির পর বিকেলে বাড়িতে না ফেরায় আত্মীয়স্বজনসহ সকলে সম্ভাব্য সবখানে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও সন্ধান না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন পিতা-মাতা। দিন যায়, মাস যায়- তাদের শিশুপুত্রের খোঁজ নেই। হঠাৎ একদিন পিতা কালা মিয়ার মোবাইলে বিদেশী নাম্বার থেকে ফোন আসে। ছেলের কণ্ঠ শুনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন বাড়ির সকলে। সাইফুল ইসলাম ফোন করে থাইল্যান্ড কারাগারে বন্দী রয়েছে বলে জানায়। ওই শিশুর অসহায় পিতা ছেলেকে থাই কারাগার থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
×