ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে শহীদ হামজা ব্রিগেডের নেতা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১০ জুন ২০১৫

চট্টগ্রামে শহীদ হামজা ব্রিগেডের  নেতা গ্রেফতার

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জঙ্গীরা আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত হচ্ছে। জেএমবি, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহিদ, শহীদ হামজা ব্রিগেড সবই জামায়াত-শিবিরের নতুন নতুন সংস্করণ। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের গোড়াপত্তনে জামায়াত-শিবির। নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেদের পরিচয় গোপনের চেষ্টা করছে। জঙ্গীরা জামায়াত-শিবিরেরই আশীর্বাদপুষ্ট সংগঠন। নাশকতা করতেই জঙ্গীরা নানামুখী প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকায় র‌্যাব সেভেনের এএসপি সোহেল মাহমুদের পরিচালিত অভিযানে গ্রেফতার হওয়া খালেদ এক সময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। পরে দল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজের ক্ষমতায়নের চেষ্টায় মেতে ওঠে খালেদ ও তার সঙ্গীরা। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গী আস্তানা ও অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ৯ জুন তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী র‌্যাব সেভেনের কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে র‌্যাব সেভেনের এএসপি মোহাম্মদ সোহেল মাহমুদ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, জঙ্গী সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ এর সামরিক শাখা হোয়াইট গ্রুপের প্রধান খালেদ হাসান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এক সময়। পরে সে নিজেকে জঙ্গী সংগঠনরে সঙ্গে জড়ায়। তবে তার দলের বেশিরভাগই সদস্যই এখন জেলে। এসব সদস্য বা কর্মী র‌্যাবের হাতেই গ্রেফতার হয়েছে। র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, শহীদ হামজা ব্রিগেড নামের এই জঙ্গী সংগঠনের ব্যাপারে র‌্যাব সেভেনের গোয়েন্দা সেল মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। মনিটরিং সেলের তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকায় জঙ্গী সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ ১ সদস্য অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ৯ জুন সকাল সোয়া ৭ টার দিকে র‌্যাবের এএসপি মোঃ সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় জঙ্গী সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ এর সামরিক শাখা হোয়াইট গ্রুপের প্রধান খালেদ হাসান প্রকাশ রাকিবকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। সে চাঁদপুরের ফরক্কাবাদ এলাকার ওবায়দুল গণির ছেলে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীরা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চট্টগ্রামে জঙ্গীরা জড়াচ্ছে অস্ত্র প্রশিক্ষণসহ দেশের অভ্যন্তরে নাশকতা ও হাঙ্গামা সৃষ্টির অপচেষ্টায়। জঙ্গীদের এসব যোগাড়ের পেছনে কাজ করছে প্রশিক্ষণ টার্গেট। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা ও আমদানি, পাচার ও প্রশিক্ষণের কাজে যারা ব্যবহার করছে তাদের গ্রেফতারে ও তথ্য কালেকশনে নেমেছে র‌্যাব সেভেনের ইন্টেলিজেন্স টিম। তবে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গীরা তাদের নাম ও সংগঠনের নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেড়াজাল এড়াতে পারছে না। গত কয়েক মাসে র‌্যাবের অভিযানে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ও ভারি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে এর সবই প্রশিক্ষণের জন্য উপযোগী বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছে জঙ্গীরা। শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র জঙ্গীরা প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করছে। র‌্যাব সেভেন আরও জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার আল মাদরাসাতুল আবু বকর মাদ্রাসা, গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী থানার লটমনি পাহাড়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহর থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, গত ১৩ এপ্রিল কোতোয়ালি, আকবরশাহ ও পাঁচলাইশ থানার বিভিন্ন এলাকা, গত ৪ ও ৫ জুন আকবরশাহ থানাধীন এ কে খান মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গী সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের মোট ২৮ জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দেশী-বিদেশী বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্র, এ্যামোনিয়াম, বিস্ফোরক ও প্রশিক্ষণ সামগ্রী উদ্ধার করে র‌্যাব। র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানাধীন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের বিপরীতে থাকা আবাসিক হোটেল মিড টাউনে অভিযান চালিয়ে জঙ্গীদের অস্ত্র সরবরাহকারী সাতকানিয়ার কাঞ্চনা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোজাহের হোসেন মিঞাকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকার গুলগাও এলাকার আবুল কালামের ছেলে বাঁশখালীতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত জঙ্গী মোঃ সাব্বির আহমেদ প্রকাশ মুহিবকেও সেই হোটেল কক্ষ থেকে গ্রেফতার করা হয়। শহীদ হামজা ব্রিগেডের ২৮ সদস্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সব অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও তথ্যপ্রযুক্তির সামগ্রী এবং জিহাদী বই এবং বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের প্রশিক্ষণ কলাকৌশলের সিডি ও ডিভিডি। এ পর্যন্ত যেসব উদ্ধার করা হয়েছে Ñ৪টি বিদেশী ৭ দশমিক ৬৫ মিঃমিঃ পিস্তল, এসব পিস্তলের ৪টি ম্যাগজিন, দশমিক ২২ বোরের এক হাজার রাউন্ড গুলি, ১২ রাউন্ড ৭ দশমিক ৬৫ মিঃমিঃ পিস্তলের গুলি। তাদের ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেলও এ সময় আটক করা হয় হোটেলের নিচ থেকে। গত ১৩ এপ্রিল সকালে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। ঐ ঘরের স্টীলের আলমারির ভেতরের প্রকোষ্ঠে রাখা ৫ টি একে-২২, একে-২২ এর ১০টি ম্যাগজিন, ১টি বিদেশী পিস্তল, পিস্তলের ম্যাগজিন একটি, একটি এসবিবিএল বন্দুক, একটি এলজি, দশমিক ২২ বোরের গুলি ২ হাজার ১৫৫ রাউন্ড, ৫০১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি উদ্ধার করে অভিযানকারী দলটি। বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র পরিচালনা, সঞ্চালন, গোয়েন্দা নজরদারি বিষয়ে সতর্কতা ও সমর কৌশল বিষয়ক মূল্যবান কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহর থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ জঙ্গীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৩০ প্রকারের বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ১৫০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ, ৭৬টি শক্তিশালী তাজাবোমা, ২৪ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, বিপুল পরিমাণ ব্যাটারি, বাল্ব, ইলেকট্রিক তার, বোমা বানানোর জন্য মাস্ক, গ্লাভস এবং প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত পোশাক। গত ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার লটমনি পাহাড়ের একটি ডেইরি খামারে অভিযান চালিয়ে ৫ জঙ্গীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৩টি একে-২২, ৬টি একে-২২ এর ম্যাগজিন, ৬টি বিদেশী পিস্তল, এসব পিস্তলের ৯টি ম্যাগজিন, ১টি রিভলবার, ৩টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, বিভিন্ন প্রকারের ৭৫১ রাউন্ড গুলি, ৩টি চাপাতি, ২টি ওয়াকিটকি, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের সরঞ্জামাদি, ১৪ জোড়া জঙ্গল বুট, ২ জোড়া সেনা বুট, ৪ জোড়া পিটি সু, ৩৮ সেট প্রশিক্ষণের পোশাক উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী এলাকার আল মাদরাসাতুল আবু বকর নামের এক মাদ্রাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব সেভেনের সদস্যরা। মাদ্রাসা শিক্ষার নামে সেখানে চলছিল জঙ্গী প্রশিক্ষণ। এ মাদ্রাসা নামের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১২ জঙ্গীকে আটক করা হয়। সেখান থেকে ১ টি কম্পিউটার, ১ টি ল্যাপটপ, ৩ টি ট্যাব, ২৪ টি মোবাইল, ৮ টি মেমোরি কার্ড, জিহাদ ও জঙ্গীবিষয়ক বইয়ের কম্পিউটারে রক্ষিত কপি। এছাড়াও আইএসআই, আল কায়দা, আনসারউল্লাহ বাংলাটিমসহ জঙ্গী প্রশিক্ষণের বিভিন্ন অডিও এবং ভিডিও কপি ।
×