ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছিল নাশকতার পরিকল্পনা

ছাত্রদল নেতার তথ্যে হাসপাতাল থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১০ জুন ২০১৫

ছাত্রদল নেতার তথ্যে হাসপাতাল থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের এক নেতার তথ্যমতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতাল থেকে উদ্ধার হয়েছে দেড়কেজি বিস্ফোরক। বিস্ফোরক দিয়ে ঢাকায় চোরাগোপ্তা হামলাসহ নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা চলছিল। রাজনীতির পাশাপাশি চাকরি আর চাকরির আড়ালে দলের নির্দেশে বিস্ফোরক মজুদের কাজ করতেন। সে মজুদকৃত বিস্ফোরকগুলো দলের নির্দেশে নাশকতা চালাতে দলীয় বোমাবাজদের কাছে সরবরাহের কথা ছিল। ওই ছাত্রদল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গত রবিবার রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ধারালো অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন ঢাকার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ রাজিব (৩০)। তার পিতার নাম মোখলেছুর রহমান মঞ্জু। বাড়ি হাজারীবাগ থানাধীন হাজ্বী আশরাফ উদ্দিন সড়কের ৭০/বি নম্বরে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে হাজারীবাগ থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈনুল হাসান জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন এশিয়ান কার্ডিয়াক নামক হাসপাতালের ব্যবস্থাপক। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর একাধিক থানায় অস্ত্রসহ নানা ধরনের মামলা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রাজিব রাজধানীতে নাশকতা চালাতে বিস্ফোরক মজুদ করার কথা স্বীকার করে। তার তথ্যমতেই সোমবার গভীররাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়ার বি ব্লকের ৩/৩ নম্বর ওই হাসপাতালে আসামির অফিস কক্ষে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৯শ’ গ্রাম গান পাউডার ও ৬শ’ গ্রাম গন্ধক (পটাশ) উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত রাসায়নিক পদার্থগুলো বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিস্ফোরকগুলো তার টেবিলের ড্রয়ারেই ছিল। সে চাকরির পাশাপাশি রাজনীতি আর রাজনীতির পাশাপাশি দলীয় নির্দেশে বিভিন্ন সময় নাশকতামূলক কর্মকা- চালাতে বিস্ফোরকগুলো মজুদ করেছিল। মোহাম্মদপুর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে জানান, বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় রাজিবকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। হাজারীবাগ থানার মামলায় রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হলে বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় আসামির রিমান্ডের আবেদন করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আরও তথ্য পেতে রাজিবকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। রাজিবের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে সারাদেশে টানা অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোটের প্রধান খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই সারাদেশে একের পর এক চোরাগোপ্তা বোমা ও পেট্রোলবোমা হামলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু, কয়েক হাজার মানুষ আহত, হাজার হাজার যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। হামলাকারী গ্রেফতারে দেশব্যাপী চলমান সাঁড়াশি অভিযানে একের পর এক আবিষ্কার হচ্ছে ছাত্রশিবির, যুবদল ও ছাত্রদলের বোমা তৈরির কারখানা। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর বনানীর ছাত্র শিবিরের একটি বোমা তৈরির কারখানা আবিষ্কৃত হয়। কারখানা থেকে ১৩০টি শক্তিশালী তাজা বোমা ও গান পাউডারসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। গ্রেফতার হয় ছাত্র শিবিরের বনানী থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ ৫ জন। উদ্ধার হয় চারটি রেজিস্টার। রেজিস্টারে রয়েছে বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন ও কারখানায় বোমা তৈরির জন্য অর্থায়নকারী জামায়াত-শিবির ও জামায়াতপন্থী ব্যবসায়ীসহ অন্তত ৪শ’ জনের একটি নামীয় তালিকা। যারা নিয়মিত অর্থায়ন করত গ্রেফতারকৃতদের। পরদিন রাজধানীর লালবাগ থানাধীন ঢাকেশ্বরী এলাকার ৩১ নম্বর বাড়িতে বোমা তৈরির সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিউ মার্কেট থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পীর হাতের কব্জি উড়ে যায়। পরবর্তীতে বাপ্পীর মৃত্যু হয়। আহত হয় হ্যাপি (১৪), রিপন (৬) ও রিপনের মা ঝুমুর বেগম (২২)। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাজারীবাগের ভাগলপুর লেনের ১৩৬ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হয় জসিম উদ্দিন। আহত হয় হাজারীবাগ থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু হোসেন (২৫) ও তার ভাই জিসান (২০)। পুলিশ বাড়ি থেকে তাজা বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার হয়।
×