ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৯ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১০ জুন ২০১৫

৯ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিরোধিতা ছাড়াই মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট। চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ের জন্য অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্পূরক বাজেটের আকার হচ্ছে ৯ হাজার ৫০৮ কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার টাকা। ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে বাড়তি এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে ৩২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বাজেট বরাদ্দের ২৩ হাজার ৭ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি। ফলে সার্বিকভাবে ১০ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা কমে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ৫০৬ কোটি টাকা। সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনাকালে সম্পূরক বাজেট উত্থাপন প্রক্রিয়ার কঠোর সমালোচনা করে সরকারী দলের প্রবীণ সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংসদে পাস না হওয়া পর্যন্ত বাজেটের অর্থ ব্যয় করা যায় না। কিন্তু সম্পূরক বাজেটের অর্থ ব্যয় করার পরই তা অনুমোদনের জন্য সংসদে বিল আনা হয়েছে। তবে আমরা ভোট দেব কিসে? যেসব মন্ত্রী বরাদ্দের টাকা ব্যয় করতে পারেননি তাঁদের নাম বিলের আর্থিক বিবৃতিতে না থাকারও সমালোচনা করে তিনি বলেন, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ক্লান্তিহীন কাজ করে যাবেন আর মন্ত্রীরা বাজেটের অর্থ বরাদ্দ করতে পারবেন না- এটা হতে পারে না। সবারই জবাবদিহিতা থাকা উচিত। দেশের বাইরে থাকায় অর্থমন্ত্রীর পক্ষে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অভিযোগ খ-ন করে বলেন, সম্পূরক বাজেটের অর্থ ব্যয় করার পর সংসদে বিল আনার বিষয়টি কোনভাবেই বেআইনী নয়। রাষ্ট্রপতি বাজেটের বরাদ্দ হ্রাস বা বৃদ্ধির ক্ষমতা সংবিধানেই রয়েছে। আর সম্পূরক বাজেটের আর্থিক বিবৃতিতে ব্যয় বরাদ্দের প্রকল্পগুলোর নাম উল্লেখ নেই এটা সত্য, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের একটি বই রয়েছে যেখানে সবকিছুই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কোন সংসদ সদস্য তা দেখতে পারেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা শেষে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। বিলটির ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ্যদের মধ্যে আটজন সম্পূরক বাজেটের ২২টি মঞ্জুরি দাবির বিরোধিতা করে মোট ১৭০টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনলেও সবগুলোই কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। সমাপনী বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান আরও বলেন, বাজেটের ঘাটতি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু গত ৬ বছর ধরে ঘাটতি বাজেট ৫ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। ভর্তুকির অনেকে সমালোচনা করেন, কিন্তু এটা ভর্তুকি নয়, বিনিয়োগ। ডিজেল, বিদ্যুত ও সেচে ভর্তুকির কারণে অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতি আমাদের সমাজের পুরনো ব্যাধি। এ থেকে আমরা বের করে আনার চেষ্টা করছি। বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেটে বিনিয়োগের যে চাহিদা রয়েছে, তা থেকে কম হলেও বিনিয়োগ কম হয়েছে বলা যায়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ অনেক বেশি হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির ব্যাপারে যেসব বাধা রয়েছে, অচিরেই সেই বাধা আমরা অতিক্রম করতে পারব বলে আশাবাদী। বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার সুশাসনের জন্য শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়নের কাজ করছে। সরকারী অর্থ অপচয়ের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রশাসনে সংস্কারের কাজ চলছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে সাফল্য পাওয়া যাবে। প্রতি বছর ৯৫ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ জনবলের অভাব থাকার কারণেই বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ হচ্ছে না। সুশাসন না থাকলে যত বড় বাজেট দেন তাতে জনগণের কোন কল্যাণ হবে না। পুঁজিবাজার ও ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়ে গেল, কোন জবাবদিহিতা নেই। পাঁচ বছর আগে যার কিছুই ছিল না, সে পুঁজিবাজার থেকে লুণ্ঠন করে ব্যাংক ও মিডিয়ার মালিক হয়ে গেছেন। এটা কিভাবে সম্ভব?
×