ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুদণ্ড ফাঁসি বা ফায়ারিং স্কোয়াড

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১০ জুন ২০১৫

মৃত্যুদণ্ড ফাঁসি বা ফায়ারিং স্কোয়াড

পলাতক রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর মামলার রায় ছয়টির মধ্যে পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পলাতক কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, সরকার ইচ্ছা করলে হাসান আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা তাকে গ্রেফতার করার পর গুলি করে (ফায়ারিং স্কোয়াড) হত্যার মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারেন। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ দুই প্রক্রিয়ার যে কোন একটি অবলম্বন করা সরকারের ইচ্ছাধীনও করা হয়েছে রায়ে। এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার কোন রায়ে সরকার যেটা সুবিধাজনক মনে করে সেভাবেই রায় কার্যকর করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পলাতক হাসান আলীকে গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আইজিপিকে নির্দেশ দিয়ে রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এই ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়রুল হক উপস্থি ত ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে মৃত্যুদ- কিভাবে কার্যকর করা হবে, কিছু বলা নেই। তবে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের কথা রয়েছে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে মৃত্যুদ- কার্যকরের কথাও আছে। সরকার চাইলে এই দুটোর যে কোন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে পারে। মানবতাবিরোধী ছয়টি অভিযোগের (চার্জ) মধ্যে পাঁচটি অর্থাৎ ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর প্রমাণিত হয়েছে এবং ১ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। ২, ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যুকারাদ- প্রদান করা হয়েছে। ১ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। বেলা সোয়া ১১টা থেকে বেলা ১২টা ১২ মিনিট পর্যন্ত ১২৫ পৃষ্ঠার রায় পাঠ করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে প্রথম অংশ পাঠ করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক। দ্বিতীয় অংশ পাঠ করেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম । সর্বশেষে রায়ের চূড়ান্ত অর্থাৎ সাজার অংশ পড়েন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৯তম রায়। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নবম রায়। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আরও ১০টি রায় প্রদান করেছেন। রায় ঘোষণার সময় পলাতক আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার আগে সূচনা বক্তব্যে উপস্থিত প্রসিকিউশন টিম এবং সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, পলাতক আসামি হাসান আলীর বিরুদ্ধে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আসামি গ্রেফতারে পুলিশের কোন ভূমিকা নেই। আমরা আসামি গ্রেফতারের আদেশ দিয়েছি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। তার পরও আসামি গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য আসামির অনুপস্থিতিতে রায় দিতে হচ্ছে বলেও জানান এম ইনায়েতুর রহিম। রায়ে প্রসিকিউশন পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র নিয়োজিত আসামি পক্ষের আইনজীবী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গত বছর ছয় অভিযোগে হাসান আলীর বিচার শুরু হয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ৩১ মার্চ পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৬ জন সাক্ষ্য দেন। এরপর দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী ও আবুল কালাম আজাদ। অপরদিকে আসামি পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান যুক্তিতর্ক পেশ করেন। ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ। (সিএভি) রাখা হয়। ১৯তম রায় ॥ ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ১৯টি মামলার রায় হয়েছে। তার মধ্যে ২১ জনকে দ- প্রদান করা হয়েছে। যাদের দ- দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতের সাবেক রুকন বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা (আমৃত্যু কারাদ- (আপীলে মৃত্যুদ-, পরবর্তীতে রায় কার্যকর), জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (মৃত্যুদ-) আপীলে আমৃত্যু কারাদ-, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদ-) আপীল বিভাগেও মৃত্যুদ- বহাল, পরবর্তীতে রায় কার্যকর। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (৯০ বছরের কারাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদ-), বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (মৃত্যুদ-), বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম (আমৃত্যু করাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, বদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং মোঃ আশরাফুজ্জামান খান (মৃত্যুদ-), জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদ-), জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলী (মৃত্যুদ-), বিএনপি নেতা নগরকান্দা পৌর মেয়র জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার (মৃত্যদ-), আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেন (মৃত্যুদ-), জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম (মৃত্যুদ-) জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান (মৃত্যুদ-) ও জাতীয় পার্টির আব্দুল জব্বার (আমৃত্যু কারাদ-)। মাহিদুর রহমান এবং আফসার হোসেন চুটু (আমৃত্যুকারাদ- ) ও সর্বশেষ হাসান আলীকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। প্রসিকিউশনের সন্তোষ প্রকাশ ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হাসান আলীর মৃত্যুদ-ের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফাঁসি অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে হাসান আলীর মৃত্যুদ- কার্যকর করতে বলা হয়েছে। এ রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে তখনকার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলীকে মৃত্যুদ- দিয়েছে আদালত। মোহাম্মদ আলী জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও পুলিশ এখনও হাসান আলীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, রায়ে আমরা খুশি। এই রায়ে নতুন একটি বিষয় উঠে এসেছে। রায়ে বলা হয়েছে ধর্মীয় অধিকার যাতে লঙ্ঘন না হয়। যারা ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন করবে তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়াও এ রায়ে অন্যান্য অমানবিক কর্মকা-ের বিষয়ে বলেছেন যারা অমানবিক ঘটনা সংঘটিত করবে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলা হবে। আপীল করলে খালাস পাবেন ॥ রাষ্ট্র নিয়োজিত আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস শুকুর আলী বলেছেন, এই ্রায়ে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমি মনে করি যদি হাসান আলী আত্মসমর্পণ করে উচ্চ আদালত আপীল করে তা হলে তিনি খালাস পাবেন। আর যদি আসামি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত থাকত তা হলে তিনি আরও ভাল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারতেন। আসামি পক্ষ থেকে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তবে হাসান আলীকে তার বাবার অপরাধে অপরাধী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। মামলার কার্যক্রম ॥ কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০১৩ সালের ৬ জুন। তদন্ত শেষ হয় ২০১৪ সালের ২৯ জুন। ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয় ২০১৪ সালের ২২ আগস্ট। একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল ডিফেন্স পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শুরু হয়। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় Ñ ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ। চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শুরু হয়। আর শেষ হয় ২০ এপ্রিল। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। হাসান আলীর বিরুদ্ধে মোট ৬টি অভিযোগ গঠন করা হয়। যে সমস্ত অভিযোগ ॥ হাসান আলীর বিরুদ্ধে মোট ৬টি অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, অভিযোগ-১ : থানার সাচাইল গ্রামের পূর্বপাড়ার হাসান আহম্মেদ ওরফে হাচু ব্যাপারীর বাড়িতে ৭টি ঘড়ে লুটপাট ও আগুন। অভিযোগ-২ : একই থানার কোনাভাওয়াল গ্রামের শহীদ তোফাজ্জল হোসেনকে হত্যা এবং ২ জনকে অপহরণ করা হয়। একই সঙ্গে তাদের বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। অভিযোগ-৩ : শিমুল হাটি গ্রামের পালপাড়া অক্রুর পালসহ ১২ জনকে হত্যা, ১০টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, অভিযোগ-৪ : তারাড়ই থানার বোরগাঁও গ্রামের বেলংকা রোড়ে সতীশ ঘোষসহ ৮ জনকে হত্যা, ১০ জনকে অপহরণ ও আটক। অভিযোগ-৫ : তাড়াইল থানার আড়াইউড়া গ্রামের কামিনী কুমার ঘোষও জীবন চক্রবর্তীকে অপহরণের পর হত্যা। অভিযোগ-৬ : সাচাইল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় রশিদ আলী ব্যাপারীকে হত্যা। এর পর ওই গ্রামের ১০০টি ঘরে লুটপাট চালানোর পর অগ্নিসংযোগ। যারা সাক্ষী দিয়েছেন ॥ তদন্ত কর্মকর্তা হরি দেবনাথসহ প্রসিকিউশন পক্ষের মোট ২৬ জন সাক্ষী। অন্য সাক্ষীরা হচ্ছেন শহীদপুত্র রেনু চন্দ্র পাল, শহীদপুত্র সমেন্দ্র চন্দ্র পাল, শহীদপুত্র সুনীল চন্দ্র পাল, শহীদপুত্র খগেশ চন্দ্র পাল, নূরুল হক লাল মিয়া, রাহিমা ওরফে আবুনি, মোঃ এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া, মোঃ শাহজাহান ভূঁইয়া, রেখা রানী ঘোষ, সঞ্জিব কুমার সরকার, বাঁধন চক্রবর্তী, মোঃ আতাহার আলী ভূঁইয়া, মোঃ আব্দুল্লাহ, শহীদপুত্র মোঃ কাইয়ুম, আলহাজ মোঃ শামসুল আলম, শহীদজায়া সঞ্জু বালা ঘোষ, শহীদ পরিবারের সদস্য ননী গোপাল ঘোষ, শহীদ পরিবারের সদস্য মিনা রানী সরকার, শহীদপুত্র নারায়ণ চন্দ্র চক্রবর্তী, শহীদ পরিবারের সদস্য গৌরী রানী চক্রবর্তী, মোঃ হাদিস, সুরাইয়া ওরফে ফসিলা, মাহফুজা আক্তার। কে এই হাসান আলী ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন হাসান আলী। তার পিতার নাম মৃত সৈয়দ মুছলেম উদ্দিন, মাতা-মৃত সৈয়দা ফাতেমা বানু। ১৯৪৭ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার ৫ ভাই ও ৫ বোন রয়েছে।সে সময় তিনি তাড়াইল থানা এলাকায় ‘রাজাকারের দারোগা’ নামে পরিচিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে না থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মাছিহাতা গ্রামে বসবাস করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রাস ছিলেন রাজাকার হাসান আলী। হাসান আলী অন্যান্য সহযোগীসহ তাড়াইল থানার বিভিন্ন এলাকাসহ কিশোরগঞ্জে নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা, বাড়িঘর লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, জোর করে টাকা আদায় ও ধর্মান্তরিতকরণসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি। তার নির্দেশেই তাড়াইলে হত্যাকা-গুলো সংঘটিত হয়েছে। রাজাকার কমান্ডার হিসেবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকেও মানবতাবিরোধী অপরাধ কর্মকা-ে সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করতেন তিনি। সৈয়দ হাসান আলীর পিতা সৈয়দ মোসলেম উদ্দিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার অন্য এক ভাইও রাজাকার ছিলেন।
×