ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে টক্কর দেয়ার টেস্ট শুরু

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১০ জুন ২০১৫

ভারতকে টক্কর দেয়ার টেস্ট শুরু

মিথুন আশরাফ ॥ মাঠে ঢুকেই দুই দলের অধিনায়কের প্রথম কাজটি হয়েছে উইকেট দেখা। উইকেট নিয়ে হাওয়ায় ভাসছে দুই দল, ধাঁধায়ও আছে। উইকেট কী রকম আচরণ করবে, এমন ভাবনা বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির। উইকেটে যথেষ্ট ঘাস আছে। সেই ঘাস আজ সকাল ১০টায় ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-ভারত একমাত্র টেস্টের পাঁচদিনের মধ্যে কয়দিন থাকবে, তা নিয়ে আছে দ্বিধা। তবে এতটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছেন দুই দলেরই অধিনায়ক; ব্যাটসম্যান ও স্পিনারদের জন্য সহায়ক হবে উইকেট। অন্তত তিনদিন। বাংলাদেশের যেহেতু ব্যাটিং ও স্পিনটা অনেক মজবুত, তাই এই ভরসাতেই কোহলিবাহিনীকে এবার প্রথমবারের মতো টেস্টে রুখে দিতে চায় মুশফিকবাহিনী। ভারতকে জিততে দিতে চায় না। না জিততে দেয়া মানেই হচ্ছে, হয় জয় নয়ত ড্র করা। বাংলাদেশ আসলে কোনটি চাচ্ছে? প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেতো জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেন না। তার কথা একটাই, ‘খেলতে যখন নামছি, প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক; প্রতিপক্ষ যে দলই হোক, জয়ের জন্যই খেলতে নামব।’ কিন্তু অধিনায়ক মুশফিক যেন একটু বাস্তববাদীই হয়ে উঠেছেন। কোচের কথার সূত্র ধরে বলেছেন, ‘কোচ যেমনটি বলল, জেতার জন্যই খেলব। তা ঠিক। আমরা জেতার জন্যই নামব। তবে তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ড্র অনেক ভাল ফল হবে।’ ড্র’ও যদি হয়, তাহলে প্রথমবারের মতো ভারতকে রুখে দেয়া যাবে। প্রথমবারের মতো টেস্টে বাংলাদেশ থেকে জয় নিয়ে যেতে পারবে না ভারত। ২০০০ সালে বাংলাদেশ অভিষেক টেস্ট খেলে। সেই টেস্টটিই খেলে ভারতের বিপক্ষে। সেই থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ৭ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। সব টেস্ট হয় বাংলাদেশের মাটিতেই। ২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে যে টেস্টটি হয় সেটি বৃষ্টির সুবাদে ড্র হয়। এছাড়া বাকি সব টেস্টে বড় ব্যবধানেই হারে বাংলাদেশ। হয় ইনিংস হার হয়, নয়ত কম করেও ৯ উইকেটের ব্যবধানে হার হয়, নয়ত ১০০ রানের বেশি ব্যবধানে হার হয়। এমনই অবস্থা হয়েছে, ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলা মানেই বাংলাদেশের হার নিশ্চিত; এমনই সমীকরণ দাঁড়িয়ে যায়। ৫ বছর মাঝখানে গেছে। বাংলাদেশও ধীরে ধীরে উন্নতি করেছে। এখন এমনই অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেললেই ভারত জিতবে, এমন জোরগলায় বলতে পারছে না। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫৫৫ রান করে ম্যাচ বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ, সেই আত্মবিশ্বাস এখনও আছে। আজ একমাত্র টেস্টটি দিয়ে যে সিরিজ শুরু হচ্ছে, সেই টেস্টে ভারত তাই জয়ের জন্যই খেলতে নামবে, এমন বলতে পারলেও জিতবেই; তা বলতে পারছে না। ভারত টেস্ট অধিনায়ক কোহলিই যেমন বলতে পারেননি। বাংলাদেশকে সমীহ করেই বলেছেন, ‘আগে কী হয়েছে তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বাংলাদেশ এখন অনেক ভাল দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দলটি দুর্দান্ত খেলেছে। তবে দিন শেষে আসলে কোন দলকেই আমলে নেয়ার সুযোগ নেই। খেলতে নামলে জয়ের জন্যই নামতে হবে। জয় পেতে হবে। সেভাবেই খেলতে হবে। জয় পেতে যা করা দরকার করতে হবে।’ কোহলি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন টেস্ট খেলেননি। এবার খেলবেন, প্রথমবারেই নেতৃত্বও দেবেন। সেই নেতৃত্ব কোহলিকে যে বিষাদ এনে দেবে না তা বলা মুশকিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোহলি। কিন্তু সেটি মহেন্দ্র সিং ধোনি ইনজুরিতে পড়ার পর টেস্ট ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ায় পর এবার পূর্ণ মেয়াদেই দায়িত্ব নিয়ে খেলতে নামছেন। তাতে কোহলি দলকে চালানোর ভাবনায় নিজের ব্যাটিং স্বত্বা হারিয়েও বসতে পারেন। ব্যাটিং খারাপ করলে এর প্রভাব নেতৃত্বেও আবার পড়তে পারে। তাতে বাংলাদেশেরই লাভ হতে পারে। ধোনি ছিলেন ধৈর্য ধরে, ঠা-া মেজাজে নেতৃত্ব দেয়া ক্রিকেটার। সবাই জানে, কোহলি আক্রমণাত্মক। আর সেটিই এবার বাংলাদেশের জন্য সুবিধা বয়ে আনতে পারে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ডাবল শতক হাঁকান তামিম ইকবাল। টেস্টে আর ৭ রান করলে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যান হয়ে যাবেন। মুমিনুল হক ভারতের বিপক্ষে একটি ৫০ বা তার বেশি রানের ইনিংস খেললে টেস্টে টানা ১২ ম্যাচে অর্ধশতক করার রেকর্ড গড়বেন। আছেন ব্যাটিংয়ে ‘রান মেশিন’ মুশফিকুর রহীম। আছেন তামিমের সঙ্গে সেরা জুটি গড়া ইমরুল কায়েস। আর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানত আছেনই। এ ব্যাটসম্যানগুলো যদি ব্যাট হাতে বড় ইনিংস খেলে দিতে পারেন, তাহলে ভারতকেও রুখে দেয়া সম্ভব। কোহলি আবার তামিম, মুমিনুল, সাকিবের কথা স্প্যাশালি বললেন। বোঝাই যাচ্ছে, এ তিনজনকে নিয়ে ভাবনা আছে। লিটন কুমার দাসের অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক জোরালো। যদি অভিষেক হয়েই যায়, মুশফিক উইকেটরক্ষকের ভূমিকা থেকে রক্ষা পাবেন, লিটন সেই ভূমিকায় থাকবেন। সঙ্গে আরেকজন ব্যাটসম্যানও দলের বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ যে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেয়ার স্বপ্ন দেখে, সেটি হয়ত এবারও হবে না। তবে স্প্যাশালিস্ট স্পিনার হিসেবে থাকা তাইজুল ইসলাম, যদি খেলেন জুবায়ের হোসেন লিখন, তাহলে ভারত ইনিংসে কাঁপন ধরিয়ে দিতে পারেন। যেহেতু পেস আক্রমণে ধার কম মিলবে, তাই এক পেসার নিয়েও খেলতে পারে বাংলাদেশ। তাতে যে, ‘ব্যাটিং আর স্পিনের ম্যাচ হতে পারে’ বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক; তাতে বাজিমাতও হতে পারে। সেই বাজিমাতে জয় ধরা না দিলেও কোহলি, রাহানে, ধাওয়ান, রোহিতদের বিপক্ষে ড্র মিলে যেতে পারে। তাতে ভারতকে রুখে দেয়ার স্বপ্নও সফল হয়ে যাবে। সেই টেস্টই আজ শুরু হয়ে যাচ্ছে।
×