ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউইয়র্কে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের নয়া তত্ত্ব

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১০ জুন ২০১৫

নিউইয়র্কে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের নয়া তত্ত্ব

আবদুল মালেক উত্তর আমেরিকা বিশেষ করে নিউইয়র্ক নগরের বাংলাদেশী কমিউনিটি বছরজুড়ে মেতে থাকে নানা উৎসব-আনন্দে। আর নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ থেকে আগত সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র শিল্পীরা তাতে সঞ্চার করেছেন নতুনপ্রাণ। এছাড়া অনেক প্রবাসী আছেন যারা শুধু বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানাদির মুগ্ধ দর্শক হতে রাজি নন। সেইসঙ্গে তৃপ্ত হতে চান দেশের সম্মানিত প-িত মানুষের দর্শন লাভে ও তাদের মূল্যবান জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য শ্রবণ করে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নানাবিধ অনুষ্ঠান বা সম্মেলনে প্রায়ই লেখক, সাহিত্যিক ও গুণীজনদের শুভ পদার্পণ ঘটে থাকে। বিশ্বায়নের এই কালে বাংলাদেশও হাতের নাগালেই এসে গেছে। দুপুর ১২টা-১টার মধ্যে অনলাইনে আগাম দেশের খবরের কাগজ হাজির। রসগোল্লা আর ইলিশ মিলছে হয়ত কারও এলাকার মোড়ের দোকানেই। টিভির বাংলাদেশী চ্যানেলে অধিকাংশ বাংলাভাষী মানুষের গৃহে সকাল-সন্ধ্যা গান-নাটক-খবর চলছে। সেখানে নানা অনুষ্ঠান উপভোগের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়তই নামী-দামী ব্যক্তিদের দেখা ও বক্তব্য শোনার সুযোগ পাই। কিন্তু চর্মচক্ষুতে সেলিব্রেটিদের দেখা পাওয়া ও স্বকর্ণে তাদের বক্তব্য শুনতে পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। তবে সেই সৌভাগ্য লাভ করতে গিয়ে কখনও দুর্ভাগ্যকেও বরণ করতে হয় বৈকি! সম্প্রতি (২২-২৪ মে) মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত নিউইয়র্কে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা হয়ে গেল। উৎসবের আহ্বায়ক ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার (ভোয়া) বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সবাই জানেন, তিনি সুদীর্ঘ সময় ধরে বই পড়া এবং জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষ গড়ার প্রশংসনীয় একটি আন্দোলন করে যাচ্ছেন। অধ্যাপক সায়ীদ ছাড়া বইমেলার সুযোগ্য প্রধান অতিথি আর কেইবা হতে পারেন! প্রবাসের অনুষ্ঠানে সাধারণত আলোচনাগুলো দুপুরে সেমিনার কক্ষের একান্তে এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শেষ বিকেলের মঞ্চে হয়ে থাকে। এরপরই যাকে বলে উৎসবের প্রাইম টাইম। ওই সময়টিতে নাটক, সঙ্গীত ও নৃত্য ইত্যাদি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান উপভোগ করে মানুষ। দেশ থেকে আগত প্রকাশনা সংস্থার স্টল থেকে বইপত্র, সঙ্গে নানাবিধ দেশী পণ্য কিনে, ঝালমুড়ি-চা-সিঙ্গাড়া খেয়ে সন্ধ্যার পর শিশুদের হাত ধরে তখনই হলে প্রবেশ করে পরিবারগুলো। কিন্তু এ বছর আলোচনার প্রধান বক্তা অধ্যাপক আবু সায়ীদ, সঙ্গে প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও কলকাতা থেকে আগত রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতো সম্মানীয় বক্তাদের কারণেই হয়ত কর্তৃপক্ষ প্রাইম টাইমের বিনোদনমূলক সময়ে পাদপ্রদীপের আলোয় এনেছিলেন তাঁদের। তাছাড়া প্রধান বক্তা কেবল একজন সুবক্তাই শুধু নন, মানুষ গড়ার কারিগরও বটে। মানব হৃদয়ের অন্ধকার দূর করার ব্রত নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। কিন্তু তাঁর দু’দিনব্যাপী বক্তব্য (প্রথম দিন বক্তৃতা ও দ্বিতীয় দিন প্রশ্নের উত্তর) শোনার সৌভাগ্যটি যে পরিণত হবে দুর্ভাগ্যে সেটি আমি ও অনেক প্রবাসী কল্পনাও করিনি। অবশ্য ইদানীং দেশের খবরের কাগজে তাঁর রাজনৈতিক বিষয়ে কিছু কথা নজর কাড়ছিল। কিন্তু তিনি যে হাটুরে রাজনীতিকদের ভাষায় আমাদের সামনে বক্তব্য রাখবেন সেটা ছিল ভাবনার অতীত। তিনি বললেন, বাংলাদেশ এখন ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময়টি পার করছে। জাতীয় জীবনে আমাদের অবস্থা এখন মাৎস্যান্যায়ের মতোÑ বড় মাছ ছোট মাছগুলোকে খেয়ে ফেলছে। অধ্যাপক আবু সায়ীদ বক্তব্য রাখছিলেন বাংলাদেশের সুশাসন প্রসঙ্গে। যদিও দেশে তাঁর সঙ্গে কখনও ঘনিষ্ঠতার সুযোগ হয়নি, কিন্তু প্রবাসে এসে নব্বই দশকের মাঝামাঝি ডালাসে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনে বেশ কিছু বিদগ্ধজন ও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল একই মঞ্চে। বাইরেও হয়েছে নানা আলাপ-আলোচনা, কথা-গল্প, হাসি। পরবর্তীতে সাংবাদিকতার সুবাদেও নিউইয়র্কে অনেকবার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে, কথা হয়েছে। সেসব দিনে তাঁর চমৎকার সান্নিধ্যের কথা এখনও মনে পড়ে। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় তিনি যখন বললেন, বাংলা নামক দেশটিতে নাকি কখনই কোন সুশাসন ছিল না, কেবলব্রিটিশ রাজত্বের দিনগুলো ছাড়া, তখন হতচকিত না হয়ে উপায় ছিল না। গল্পচ্ছলে অধ্যাপক সায়ীদ বললেন, সে আমলে বাংলার বনে-জঙ্গলে যদি একটা ভূতও কোন মানুষকে তাড়া করত, আর সে যদি ছুটতে ছুটতে ব্রিটিশ রাজের তৈরি ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তায় উঠতে পারত, তবে পালানোর পথ পেত না সে ভূত। কারণ রাস্তায় ছিল ব্রিটিশের থানা পুলিশ! এরপর অবশ্য সকৌতুকে বললেন, যদিও পুলিশ কর্তাদের একটু ঘুষ-টুস খাবার সুযোগ তারা করে দিয়েছিলেন। অধ্যাপক আবু সায়ীদের মতো মানুষের মুখে এই নব ইতিহাস রচনা স্বকর্ণে না শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। নিউইয়র্কের প্রতিটি সাপ্তাহিকীতে তাঁর বক্তৃতার এমন গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো কমবেশি খবর হয়েছে। সত্যি বলতে কি, আমি একজন বিজ্ঞ মানুষের মুখনিসৃত এমন বক্তৃতার সুরে বারংবার হতভম্ব হয়ে পড়ছিলাম। তাহলে বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের যে ইতিহাস লেখাপড়া করেছিলাম তার পাতায় পাতায় কি সবই ভুল! দুনিয়াজুড়ে ব্রিটিশ রাজের অত্যাচার ও লুটতরাজের কথা তো দেশে দেশে ইতিহাসের অধ্যায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় তরুণ ব্যারিস্টার গান্ধীকে শুধু ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস কামরার যাত্রী হওয়ার অপরাধে ব্রিটিশ পুলিশের লাঠি পেটার কাহিনী তো আমাদের স্কুলের পাঠ্যবইতেই ছিল। অসংখ্য নির্যাতন-নিপীড়নের আরও অনেক ইতিহাস নিশ্চয়ই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পুস্তকাদিতেও আছে। নেই কি জালিয়ানওয়ালাবাগে সমবেত নিরীহ মানুষের ওপর ব্রিটিশ পুলিশের বর্বর হত্যাকা-ের প্রতিবাদে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করার ইতিহাস? সে সময় নীলকর সাহেবদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের কাহিনী, যা দীনবন্ধু মিত্র তাঁর ‘নীল দর্পণ’ নাটকে বর্ণনা করেছেন, সে নাটকের বইটিও কেন্দ্রে আছে বলে বিশ্বাস করি। আজ অবধি কোন ব্রিটিশ দালালও এসব মিথ্যে বলে দাবি করেনি। পুস্তকের সঙ্গে পুস্তক পাঠের জন্য আন্দোলনকারী শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদের এই মতামত কি এখানে সাংঘর্ষিক হচ্ছে না? ব্রিটিশ জমানারই মানুষ আমাদের পিতা-প্রপিতামহ তাদের সময়ের পুলিশকুলের অত্যাচার সম্পর্কে যে বর্ণনা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আমাদের কাছে দিয়ে গেছেন সেটা তো প্রবাদ বাক্যেই স্থান পেয়েছে! তাদের কাছ থেকেই শুনেছি, মাথায় লাল রঙের পাগড়ি পরতেন বলে তখন আমজনতার কাছে পুলিশের নাম ছিল লালপাগড়ি। বলাবাহুল্য, তারা ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে আসতেন আসামির সন্ধানে। কোন গ্রামের কোন দূর প্রান্তে ঘোড়ার খুরের শব্দের সঙ্গে লাল রং দেখা গেলেই প্রাণভয়ে নির্বিচারে মানুষ পালিয়ে শূন্য করত গ্রামের পর গ্রাম। কারণ দোষী হোক বা নির্দোষ হোক গ্রামবাসী কাউকে পাওয়া মাত্রই শুরু হতো বেদম প্রহার। হান্টার দিয়ে কমপক্ষে আঠারোটা ঘা না মেরে পুলিশ ছেড়ে দিত না। ওই সময়েই সে প্রবাদটা তৈরি হয়েছিল, যা আজও প্রচলিতÑ ‘পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা!’ অধ্যাপক সাহেব কণ্ঠে মুগ্ধতা এনে নাটকীয়ভাবে আরও যোগ করলেন, কি সুসভ্য এই ব্রিটিশ জাতি, কি অতুলনীয়, কত প্রাচীন তাদের সভ্যতা! এই বক্তব্যের উত্তরে আমার বলতে ইচ্ছে করেছিল, বটেইত বটেইত- বিশ্বজুড়ে তারাই তো সত্যিকারভাবে মানবসভ্যতার ধারক এবং বাহক! কিন্তু ওই পুস্তকগুলোই বাঁধিয়েছে যত গোল। কারণ সেখানেই তো লেখা রয়েছে সুদূর আফ্রিকা থেকে কিভাবে জন্তুর মতো খাঁচায় পুরে কালো মানুষদের ধরে এনেছিল ব্রিটিশ বেনিয়া দল। জাহাজে করে দেশে দেশে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে কিভাবে ফুলে ফুলে বিকশিত হয়েছিল ব্রিটিশ অর্থনীতি তথা সিভিলাইজেসন! অধিকৃত দেশগুলোর যেখানে যত সম্পদ ছিল সবই লুট করে নিয়ে গেছে তারা। ভারতবর্ষ থেকে কোহিনূর মুকুট, ময়ূর সিংহাসনসহ যাবতীয় হীরামণিক্য আজও ভোগ করে চলেছে ব্রিটিশ রাজবংশ। তাদের হাতে মেসোপটেমিয়ার সুপ্রাচীন সভ্যতা ধ্বংস আর লুটপাটের ঘটনা তো ঘটে গেল আমার-আপনার চোখের সামনেই। ক্যাকটাসের ফুলের মতো ব্রিটিশ জাতির নিঃসন্দেহে অনেক নয়নমনোহর দিক আছে। কিন্তু ফুলের নিচে ভয়ঙ্কর কাঁটাগুলো দুনিয়া এড়াবে কিভাবে? বন্দনার পর্ব শেষ করে অধ্যাপক সাহেব এরপর শুরু করলেন বাংলাদেশ সম্পর্কেÑ ‘ইংরেজ শাসনের অনেক ভাল দিক ছিল। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা সুশাসনের বেশ কিছু ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে যায়। ব্রিটিশরা যেটুকু সুশাসনের ব্যবস্থা রেখে গিয়েছিল স্বাধীন হওয়ার পর আমরা সেটুকু ধ্বংস করে দিয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে চলছে মোড়লি শাসন। এই পদ্ধতিতে দেশ চালাতে গিয়ে আমরা ব্রিটিশদের দিয়ে যাওয়া সুশাসনের ব্যবস্থাগুলোও ধ্বংস করে দিয়েছি।’ জানার ইচ্ছা জাগে, পাকিস্তান সময়েও কি সেই ব্যবস্থা অক্ষত ছিল? আইয়ুব-ইয়াহিয়ার খানের সামরিক শাসন আমলেও? আর মোড়লি ব্যাপারটার মাথামু-ু আমার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে সাংবাদিকতা পড়া বিদ্যায় কিছুতেই কুলিয়ে উঠছে না। আমরা জানি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে গঠিত সরকারের নেতৃত্বে। সেসব প্রতিনিধি তথা মোড়লই তো জাতীয় সংসদে বসে রচনা করলেন দেশ শাসনের জন্য পবিত্র সংবিধান। এরপর রচিত নয়া সংবিধানের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী দল সরকার গঠন করে। অবশ্য জ্ঞানী শিক্ষাবিদ প্রশ্নোত্তরে বলেই দিয়েছেনÑ ‘দেশ ধ্বংসের মূল কারণ আমাদের ওই সংবিধান এবং দুই দল।’ শেষে যদিও একটি প্রশ্নের উত্তরে ব্যাখ্যা করলেন, ‘সংসদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে ভোট না দেয়ার ধারাটি পরবর্তীকালে সংবিধানে সংযোজিত হয়েছেÑ এটাই দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা রয়েছি স্বৈরশাসনের মধ্যে। নব্বই সালের পর যে নির্বাচিত স্বৈরশাসনের মধ্যে প্রবেশ করেছি এটা সামরিক স্বৈরশাসনের চেয়ে আরও ভয়াবহ।’ তিনি উষ্মার সঙ্গে বারবার বলেন, ‘একবার এ দল আসে, আরেকবার ও দল, হয় হাসিনা, নয় খালেদা।’ তিনি নিশ্চয়ই বোঝাতে চাইলেন, ’৭৫ থেকে নব্বই পর্যন্ত অভ্যুত্থান, নির্মম হত্যাযজ্ঞ, রক্তপাতের মধ্য দিয়ে জিয়া থেকে এরশাদ নামে যে সব শাসকের আবির্ভাব, গণতন্ত্রের চাইতে তাদের পদ্ধতি উত্তম! তাহলে সেই বন্দুকের নলই কি ক্ষমতার একমাত্র উৎস হবে দেশে। সেদিন অধ্যাপকের কাছ থেকে সুশাসন সম্পর্কে এমন সম্যক জ্ঞানলাভ করার পরও অদ্যাবধি কেন যেন আমার অজ্ঞানতা ঘোচেনি। সুশাসনের তত্ত্ব বা থিওরি কখনও সাধারণ মানুষও জানতে চায় না। একদিন এই ভূ-খ-ের অভুক্ত-অর্ধভুক্ত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে চাওয়া ছিল লবণ দিয়ে একমুঠো ভাত। সেই কোন্ যুগে ঈশ্বরী পাটনীÑ যে দেবীকে নদী পার করিয়ে দেয়ার আশীর্বাদ হিসেবে প্রার্থনা করেছিল, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ যুগ-যুগান্তরব্যাপী এমনকি ব্রিটিশের মহাসুশাসনকালীনও সে স্বপ্নপূরণ ছিল কল্পনাবিলাস। বরং সেই ব্রিটিশ আমলের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তরের কাহিনী দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করে ফিরেছে বারবার। অথচ আর কি আশ্চর্য, দরিদ্র শিশুর দুধ-ভাত খাওয়ার সেই আশীর্বাদ আজ গ্রামগঞ্জের দিকে দিকে। ক’দিন আগেই দেশের সংবাদপত্রে পড়লামÑ মঙ্গার জন্য বিখ্যাত রংপুরের গঙ্গাচড়া দিয়ে যেতে যেতে এক সাংবাদিক দেখছেন চারদিকে মাঠে মাঠে চড়ে বেড়াচ্ছে শত শত গরু-ছাগল। একদা হতদরিদ্র সুশীলার শিশুসহ গ্রামের অন্য শিশুরা স্বপ্নের দুধ-ভাত খেয়ে ভরে উঠছে স্বাস্থ্যে-আনন্দে! শিশুদের খাইয়ে অবশিষ্ট দুধ বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছে বহু নারী। এরকম আরও ভিন্ন ভিন্ন অভাবিত ঘটনাগুলো যখন ঘটে চলছে দেশের সর্বত্র অধ্যাপক আবু সায়ীদ সাহেবের ভাষায়Ñ ‘বাংলাদেশ তখন ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময়টি পার করছে।’ লেখক : আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট ধ.সধষবশ৫২৭১@মসধরষ.পড়স
×