ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমলেও বিক্রিতে রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ জুন ২০১৫

সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমলেও বিক্রিতে রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সুদ হার কমানো সত্ত্বেও অর্থবছরের ১০ মাসে রেকর্ড ২৪ হাজার ১৪১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। সুদ কমানো নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই এপ্রিলের এক মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এতো বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা থাকেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমলেও বিক্রিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। ১০ মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে মনে করছেন অনেকেই। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে গত ২৩ মে পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্রে প্রায় ২ শতাংশ সুদ কমিয়ে ১১ শতাংশের আশে-পাশে নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য কমিয়ে আনা সুদহারও বর্তমানে ব্যাংকের আমানতে সুদহারের তুলনায় অনেক বেশি। গত এপ্রিলে ব্যাংক খাতের আমানতের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ২৪ হাজার ১৪১ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা বেশি। এ বছর নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। সব চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। মূলত এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিক্রিই বেশি হয়ে থাকে। চলিত অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে ডাকঘরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৯০৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ হাজার ৭৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে দশ মাসে নীট বিনিয়োগ হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল্য পরিশোধ বাবদ ১১ হাজার ৩৩ কোটি ০৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৯৩৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে এপ্রিলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ৯৫৭ কোটি ১ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এত বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা থাকেনি। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমলেও ব্যাংকের আমানতে সুদহারের তুলনায় অনেক বেশি। এজন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গত ১০ মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে মনে করেন এই গবেষক। জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নয় হাজার ৫৬ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার, অর্থবছরের প্রথম দশ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা এসেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হওয়ায় সরকারকে ব্যাংক থেকে খুব বেশি ধার করতে হয়নি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গবর্নর বলেন, গত বছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়নি। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে চাহিদা পূরণ করেছে। ব্যাংকিং খাতে যথেষ্ট তারল্য রয়েছে। সরকার ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তুলে নিলে কোনো প্রভাব পরবে না। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ ঋণ হিসেবে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ (নিট) ২৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। আর স্বল্প মেয়াদী ঋণ (নিট) নেবে ১৪ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের (নিট) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা নেবে। আর স্বল্প মেয়াদী ঋণ (নিট) নেবে ১১ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।
×