ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোদির সফর সম্পর্কের সেতুবন্ধনকে আরও শক্তিশালী করেছে ॥ আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৯ জুন ২০১৫

মোদির সফর সম্পর্কের সেতুবন্ধনকে আরও শক্তিশালী করেছে ॥ আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সেতুবন্ধনকে আরও শক্তিশালী করেছে, সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। আজন্ম চরম ভারতবিদ্বেষী বিএনপিও ফাঁদে পড়ে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছে, ভারত তোষণ করছে। তবে সাক্ষাতকারের সময় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা গণতন্ত্র চাই, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতাকে সমর্থন করি না। সোমবার রাজধানীতে পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে এবং সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা এসব কথা বলেন। নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এত উচ্চমাত্রায় কখনও আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত বাংলাদেশের আশপাশেও রয়েছে, আবার একসঙ্গেও রয়েছে। এই অটুট বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কেউ ভাঙ্গতে পারবে না বলেও বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। অচিরেই তিস্তা নদীর পানিবণ্টন সমস্যারও সমাধান হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সফরকালে নরেন্দ্র মোদি তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়া বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সামনে স্পষ্টতই উচ্চারণ করেছেন, আমরা গণতন্ত্র চাই, কিন্তু সন্ত্রাসবাদ-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গীবাদ চাই না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে শুধু খালেদা জিয়ার প্রতি ম্যাসেজ নয়, এ দেশের সকল সাম্প্রদায়িক-জঙ্গী ও সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও একটি সুষ্পষ্ট ম্যাসেজ। তিস্তা চুক্তির বিষয়টি এগিয়েছে- সুরঞ্জিত ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি বিষয়টি অনেকটাই এগিয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের চেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটু বেশিই এগিয়েছেন। তিনি মমতা ব্যানার্জীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পেরেছেন। শীঘ্রই ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বেড়াজালমুক্ত হয়ে যাবে এবং তিস্তাসহ সমস্ত অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে সমস্যার একটা সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সোমবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত চলমান রাজনীতি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, তিস্তার বিষয়ে এখনও সমাধান হয়নি। এক্ষেত্রে ভারতীয় রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনীতি আছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় মানে ফেডারেল পলিটিক্স। এটা আমাদের মতো নেশন, ওয়ান স্টেট-ইউনিটারি ফর্ম অব গবর্মেন্ট না। তাদের যেহেতু প্রচুর স্টেট রয়েছে, তাই স্টেটগুলোর স্বার্থও দেখতে হয়। তাই তাদের এ যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনীতির বাধা অতিক্রম করেই যেতে হবে। সুরঞ্জিত বলেন, সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে ভারত তাদের ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশেও একটি ঐকমত্যের রাজনীতির প্রকাশ ঘটেছে। যারা ভারতবিরোধী রাজনীতি করছে তারাও ভুলত্রুটি বুঝে সীমান্ত চুক্তিসহ যে কয়টি চুক্তি হয়েছে তাতে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। এটা দু’দেশের জন্যই মাইলফলক। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক উন্নয়নের স্বার্থে ঐকমত্য হওয়া ছাড়া দ্বিমত হওয়ার সুযোগ নেই। নতুন রাজনীতির প্রাক্কালে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভিন্ন ছিল। রাজনৈতিক ভাষাও অনেক সংযত ছিল। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা এমদাদুল হক সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপি, সাম্যবাদী দলের নেতা হারুন চৌধুরী প্রমুখ। বিএনপি ফাঁদে পড়ে অভিনন্দন জানিয়েছে- ড. হাছান ॥ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি আসলেই ভারতবিরোধী। তারা ফাঁদে পড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বগা ফান্দে পড়ে যেমন কান্দে, ঠিক তেমন ফাঁদে পড়েছে বিএনপি। তারা নিজেদের রক্ষা করার জন্য এখন অনেকের পা ছোঁবে, কিন্তু কোন লাভ হবে না। সোমবার দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় কান্নাকাটি করেছেন কিনা আমি জানি না; আপনি তার পায়ে প্রণাম করেছেন কিনা জানি না; তবে যতই কথা বলুন, আপনারা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। বিএনপি এখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রতারক দলে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই আপনারা যতই দেখা করুন, যতই অনুনয়-বিনয় করুন, এতে কোন কাজ হবে না। তিনি বলেন, যারা রাজনীতির নামে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা মানুষের কাছে আতঙ্ক। তারা রাজনীতিতে বেকায়দায় থাকলেও ষড়যন্ত্রে সব সময় সোচ্চার থাকে। তাই তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে। আয়োজক সংগঠনের সিনিয়র সভাপতি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, ফ্রান্স শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ সেলিম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ।
×