ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মোদির জাদুকরি বক্তব্যে বাদ পড়েনি কোন প্রসঙ্গই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ জুন ২০১৫

মোদির জাদুকরি  বক্তব্যে বাদ  পড়েনি কোন প্রসঙ্গই

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ প্রথমবারের মতো দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে এসে মাত্র প্রায় ৩৫ ঘণ্টা ঢাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বক্তব্য দিয়ে আগামী দিনগুলোর জন্য যে মেসেজ দিয়ে গেছেন তা দেশের উৎসুক মহলকে উজ্জীবিত করেছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে রবিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে মোদি টানা প্রায় ঘণ্টা ধরে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তাতে ভারত-বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিসহ যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা বর্তমান সরকার ও দেশের উৎসুক মহলকে নতুন উদ্দীপনায় টেনে নিয়েছে। অর্থনীতি, সমাজনীতি, আঞ্চলিক ও বিশ্ব রাজনীতি, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদসহ কোন প্রসঙ্গই বাদ পড়েনি। দেখিয়ে গেলেন এক রাশ স্বপ্ন। ভারতের গুজরাট প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করা মোদি দিল্লীর মসনদে বসেছেন বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে। ক্যারিশমেটিক চরিত্রের অধিকারী মোদি বক্তৃতায়ও যে অসাধারণ তা তিনি বাংলাদেশ সফরে এসে নতুন করে প্রমাণ করলেন। বাংলাদেশে মোদির এই প্রথম সফরে এই সরকারের অর্জন বহু। বেশকিছু চুক্তিসহ নানা বিষয়ে মতৈক্য সৃষ্টির ঘটনায় ঢাকা-দিল্লীর এগিয়ে যাওয়ার পথে নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের বক্তব্যে ইতোমধ্যে বেরিয়ে এসেছে। ঢাকায় মোদি বহু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আগেই রবিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মোদি অভ্যাগত সুধীজনদের উদ্দেশে হিন্দী ভাষায় বক্তব্য দিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। মোদির এ বক্তব্য বিটিভিসহ বেসরকারী বিভিন্ন চ্যানেলে সম্প্রচার হওয়ায় দেশের উৎসুক মহল তা প্রত্যক্ষ করতে পেরেছে। তার এ বক্তব্য ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে। অসাধারণ বাকপটুতা ও অতীত ভবিষ্যত নিয়ে তার বক্তব্যে কোন খাদ ছিল না। মোদি তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সরকার, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সহযোগিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে এবং আঞ্চলিক রাজনীতির অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে যা বলে গেছেন তাতে মোদির জনপ্রিয়তা বাংলাদেশেও বেড়ে গেছে বৈকি। সাধারণ জনগোষ্ঠী থেকে আসা নরেন্দ্র মোদি এখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এক অসাধারণ রাজনৈতিক নেতার আসনে অধিষ্ঠিত। এগিয়ে যাওয়া উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারতসহ উন্নয়নশীল এ অঞ্চলের দেশগুলোর ভবিষ্যত কর্মপন্থা ও ঐক্যের যে আহ্বান তিনি জানিয়ে গেছেন তা অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মাঝে রীতিমতো প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মোদির বক্তব্যে যা উঠে এসেছে তা রীতিমতো বিস্মিত করেছে আগ্রহী সকলকে। অতীত ভবিষ্যত এবং দু’দেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং করণীয় নিয়ে কিছুই বাদ পড়ল না। বাংলাদেশ নিয়ে তার মস্তিষ্কে যেন সবই গেঁথে আছে আগে থেকেই। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষের বিশাল মঞ্চে একা দাঁড়িয়ে অনর্গল তিনি যে কথাগুলো বলে গেছেন তা নিয়ে রবিবার রাত থেকেই মিডিয়াসহ সর্বমহলে রীতিমতো গবেষণার খোরাক যুগিয়েছে। যারা ফাঁকফোঁকর খোঁজার চেষ্টা করেছেন তারাও কিছুই পাচ্ছেন না। তার বক্তব্যের প্রতিটি লাইনই যেন বাংলাদেশের প্রতি তার ও তার দেশের অকৃত্রিম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে দীর্ঘ ৯ মাস ভারতের সে সময়কার সরকার যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং কোটি মানুষকে আশ্রয়, মানবিক ও খাদ্য সরবরাহ দিয়ে ইতিহাসে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেনÑ মোদির মন মানসিকতায় যেন তারই প্রতিধ্বনি ঘটেছে। মোদির এই বক্তব্যের পর আলোচনায় উঠে এসেছে ব্যক্তি ক্যারিশমার জোরেই মোদির দল ভারতবর্ষের বর্তমান রাজনীতির নিয়ন্ত্রকের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর মোদিকে নিয়ে বহু কথা এদেশের মানুষ জেনেছে মিডিয়ার কল্যাণে। সে জানার মধ্যে যে কোন খাদ পড়েনি তা ঢাকায় এসে মোদির বক্তব্য শুনে আবারও নতুন করে জানান দিয়েছে। তিনি প্রথমবারের মতো এলেন। চলে গেলেন দ্রুততম সময়ে। রেখে গেলেন তার নির্মোহ বক্তব্য ও কর্মতৎপরতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে। দেখিয়ে গেলেন এক রাশ স্বপ্ন। যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন। গরিব দেশগুলোর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন। আঞ্চলিক জোট গড়ে উন্নত বিশ্বের দেশসমূহের প্রতি চ্যালেঞ্জ দেখানোর স্বপ্ন।
×